নয়াদিল্লি : বর্তমান যুগে নারীরা কোনও দিক দিয়েই পুরুষের চেয়ে কম নয়। বাড়ি হোক বা কর্মক্ষেত্র, আজ নারীরা পুরুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলছে। ঘরে হোক বা বাইরে, নারীরা তাঁদের দায়িত্ব খুব ভালোভাবে পালন করছেন। তবে অনেক ক্ষেত্রে পুরুষদের তুলনায় নারীদের অনেক বেশি সমস্যায় পড়তে হয়।

ভারতে প্রতি মিনিটে একজন নারী বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হন। তা সে বাড়ি হোক বা অফিস বা পাবলিক প্লেস। নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে সবসময়ই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।গার্হস্থ্য হিংসা, লিঙ্গ বৈষম্য এবং যৌন হয়রানি এসব সমস্যা নারীদের প্রতিনিয়ত মুখমুখি হতে হয়। তাই প্রতিটি নারীর নিজের আইনগত (Laws) অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন, যাতে তাঁরা এসব হয়রানির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারেন।

ভারতীয় আইনে অন্তর্ভুক্ত মহিলাদের কিছু অধিকার নিয়ে ব্যাখ্যা করলেন আইনজীবী শশাঙ্ক শেখর ঝাঁ।

জাতীয় মহিলা কমিশন আইন

ভারত সরকার ১৯৯০ সালে ন্যাশনাল কমিশন ফর উইমেন অ্যাক্টের অধীনে, সংসদের একটি আইনের মাধ্যমে ১৯৯২ সালের ৩১ জানুয়ারি জাতীয় মহিলা কমিশন (NCW) প্রতিষ্ঠা করে। কমিশনের প্রাথমিক দায়িত্ব হলো নারীর অধিকার রক্ষা ও সুরক্ষা দেওয়া। যে কোনও মহিলা তাঁর সমস্যায় নিয়ে এখানে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। এছাড়াও নারীর কোনও অধিকার লঙ্ঘিত হলেও জাতীয় নারী কমিশনের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। জাতীয় মহিলা আইন কমিশনের লক্ষ্য মহিলাদের অবস্থার উন্নতি করা এবং তাঁদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করা।

নারী নিরাপত্তা আইন

২০১৬ সালের নির্ভয়া ঘটনার কথা আমারা অনেকেই জানি, যা ভোলবার নয়। দিল্লির এক তরুণীর সঙ্গে এই বেদনাদায়ক দুর্ঘটনায় মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছিল। ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তি পেতে কয়েক বছর লেগে যায়। এই ঘটনার পর দেশে যৌন শোষণ সংক্রান্ত আইন আরও কঠোর করা হয়, যাতে দোষীদের কঠোরতম শাস্তি দেওয়া যায়। এ ছাড়া অপরাধীর বয়স ১৮ বছরের কম হলে তা গৌণ মামলা হিসেবে বিবেচনা করে কিশোর বিচারের অধীনে পাঠানো হতো এবং সে কঠিন শাস্তি থেকে রক্ষা পেত। তবে নির্ভয়া কাণ্ডের পর এই আইনে পরিবর্তন হয়। এখন অপরাধীর বয়স ১৬ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে হলে তাকেও কঠোর শাস্তি পেতে হবে।

আইনজীবী শশাঙ্ক আরও জানিয়েছেন, আগে কোনও পুরুষ যদি কোনও মহিলাকে ধাক্কা দিত তবে তা কোনও অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হত না। তবে ২০১৬ সালের পর এটিও আইনত অপরাধ হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে।

পকসো আইন (POCSO)

পাকসো আইন হলো যৌন অপরাধ থেকে শিশুদের সুরক্ষা আইন। শশাঙ্ক শেখর ঝা জানিয়েছেন, শিশুদের সুরক্ষার জন্য এই আইন করা হয়েছে। আইনটি ২০১২ সালে তৈরি হয়। এর আওতায় শিশুদের যৌন নিপীড়ন গুরতর অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

যৌতুক নিষেধাজ্ঞা আইন, ১৯৬১

এই আইনে বলা হয়েছে, বিয়েতে যৌতুক দেওয়া ও নেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যৌতুক দেওয়া বা নেওয়ার প্রথা বহু বছর ধরে ভারতে চলে আসছে। সাধারণত বরের পরিবার কনে এবং তার পরিবারের কাছে যৌতুক দাবি করে। বছরের পর বছর ধরে চলে আসা এই প্রথার শিকড় এখন অনেক গভীরে পৌঁছে গিয়েছে। বড় শহর বাদে দেশের বেশির ভাগ এলাকায় নারীরা এখনও আর্থিকভাবে স্বাধীন নয়। এছাড়াও, বিবাহবিচ্ছেদ একটি কলঙ্ক হিসাবে দেখা হয়, যে কারণে কনেদের শারীরিক ও মানসিক হয়রানির শিকার হতে হয়। বিয়ের পর যৌতুকের দাবি পূরণ না হলে মেয়েটিকে মানসিক অত্যাচার, মারধর এমনকি হত্যাও করা হয়। এই আইনটিতে মহিলারা প্রকাশ্যে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন।

ভারতীয় বিবাহবিচ্ছেদ আইন, ১৯৬৯

ভারতীয় বিবাহবিচ্ছেদ আইনের অধীনে, শুধুমাত্র মহিলারা নয় পুরুষরাও বিবাহ বন্ধ করতে পারেন।

মাতৃত্বকালীন সুবিধা আইন, ১৮৬১

এই আইনে প্রত্যেক কর্মজীবী ​​নারী ছয় মাসের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটি পান।

এই সময়ে নারীরা পুরো বেতন পাওয়ার অধিকারী। এই আইন সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি কোম্পানির জন্য প্রযোজ্য। এতে বলা হয়েছে যে একজন মহিলা কর্মচারী যিনি একটি কোম্পানিতে গর্ভাবস্থার আগে ১২ মাসে কমপক্ষে ৮০ দিন কাজ করেছেন তিনি মাতৃত্ব সুবিধা পাওয়ার অধিকারী। যার মধ্যে রয়েছে মাতৃত্বকালীন ছুটি, নার্সিং বিরতি, চিকিৎসা ভাতা ইত্যাদি। ১৯৬১ সালে যখন এই আইন কার্যকর করা হয়, তখন ছুটির সময় ছিল মাত্র ৩ মাস, যা ২০১৭ সালে বাড়িয়ে ৬ মাস করা হয়।

কর্মক্ষেত্রে নারীদের হয়রানি

যদি কোনও মহিলা তাঁর অফিসে বা কোনও কাজের জায়গায় শারীরিক বা মানসিকভাবে হয়রানির শিকার হন, তবে তিনি ওই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন।

যৌন হয়রানি আইনের অধীনে, নারীরা কর্মক্ষেত্রে শারীরিক হয়রানি বা যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে সুরক্ষিত। এ জন্য একটি পশ কমিটি গঠন করা হয়েছে। আইনটি ২০১২ সালে সেপ্টেম্বরে লোকসভা এবং ২০১৩ সালে ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজ্যসভা দ্বারা পাস হয়েছিল।

সমান পারিশ্রমিক আইন, ১৯৭৬

এই আইনের অধীনে একই কাজ করার জন্য নারী ও পুরুষ উভয়কেই সমান মজুরি দিতে হবে। এই আইনটি ১৯৭৬ সালের ৪ মার্চ পাস হয়েছিল। বর্তমানে নারীরা পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে, তা সত্ত্বেও অনেক জায়গায় তাদের সমান বেতন দেওয়া হয় না।

নারীর অশালীন প্রতিনিধিত্ব (প্রতিরোধ) আইন, ১৯৮৬

আইনটিতে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বা প্রকাশনা, লেখা, ছবি, চিত্র বা অন্য কোনও উপায়ে নারীদের অশালীনভাবে উপস্থাপন করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।