নদীয়ার কৃষ্ণনগরের প্রাচীন পুজো চট্টোপাধ্যায় বাড়ির দুর্গা পুজো। কৃষ্ণনগরের নাজিরাপাড়ার এই নীল দুর্গাবাড়িতে দুর্গা পূজিত হন অপরিজিতা রূপে, প্রতিমার গায়ের রঙ নীল। যা নিয়ে রয়েছে অনেক ইতিহাস। জানা যায়, বাংলাদেশের বামরাইল গ্রামে পূর্বপুরুষরা প্রথম এই নীল দুর্গার প্রচলন করেছিলেন । সেখান থেকে এই পুজো চলে আসে কৃষ্ণনগরে।
পরিবারের এক সদস্য জানান, ‘‘অধুনা বাংলাদেশের বরিশালে ২৮৯ বছর আগে এই পুজো শুরু হয়। সেখানকার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী দুর্গা প্রতিমার পাশে লক্ষ্মীর সঙ্গে কার্তিক এবং সরস্বতীর সঙ্গে গণেশ থাকে। যা অন্য কোনও দুর্গা প্রতিমার ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় না। বেশ কয়েক প্রজন্ম আগেও এই দুর্গা প্রতিমা অতসী রূপে পূজিত হতেন। তবে কোনও এক সময়ে দুর্গা মূর্তি তৈরির সময়ে মৃৎশিল্পীরা ভুলবশত প্রতিমার গায়ের রং নীল করে ফেলেন। এর পর দুর্গাপূজার দায়িত্বে থাকা চট্টোপাধ্যায় পরিবারের এক সদস্য অপরিজিতা রূপের সেই প্রতিমাই পুজো করার স্বপ্নাদেশ পান। এর পর থেকে আজও নীল বর্ণের দুর্গা প্রতিমা হয়।’’
বর্তমান চট্টোপাধ্যায় বাড়ির বংশধররা এই পুজোর প্রচলন করেছিলেন এই দেশে।চট্টোপাধ্যায় বাড়ির নীল দুর্গাকে প্রতিদিনই আঁশ ভোগ অর্থাৎ মাছ দিয়ে ভোগ দেওয়া হয়। নবমীতে হয় শত্রু বলি। চালের গুঁড়ো দিয়ে শত্রু বানিয়ে বাড়ির সদস্যেরাই এই বলি দিয়ে থাকেন। এই পুজোর বিশেষত্ব হল দেবী দুর্গার ডান দিকের পরিবর্তে বাম দিকে থাকে গণেশ, লক্ষ্মী এবং ডান দিকে কার্তিক ও সরস্বতী। আর রীতি অনুযায়ী দশমীর দিন পান্তা ভাত খেয়েই কৈলাসে ফিরে যাবেন দেবী দুর্গা। প্রতিবছর এই রীতি পালন করা হয়ে থাকে।
চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৪৭ সালে বাংলাদেশ থেকে তাঁরা এ দেশে চলে আসেন। ভূগোল বদল হলেও রীতিতে ছেদ পড়েনি। ১৯৪৮ সাল থেকে এ দেশেও শুরু হয় পুজো। পুজোর সময় মহিষ এবং পাঁঠা বলির প্রচলন ছিল বলেও জানিয়েছেন চঞ্চল। তবে ২০০৬ সাল থেকে সেই পুজো বন্ধ হয়ে যায়। নীল বর্ণের অনন্য প্রতিমার টানে দূরদূরান্ত থেকে আজও ভক্তেরা ছুটে আসেন কৃষ্ণনগরের চট্টোপাধ্যায় পরিবারের নাটমন্দিরে।