মুঘল আমলে ধর্ম ও হিন্দুদের রক্ষার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন অনেক মহাপুরুষ, এমনই একজন মহান শাসক ও বিপ্লবী ছিলেন শিখদের নবম গুরু শ্রী গুরু তেগ বাহাদুর জি। যেই সময়ে মানুষকে জোর করে ধর্মান্তরিত করা হচ্ছিল, সেই সময় ধর্মীয় স্বাধীনতার সমর্থক ছিলেন তিনি। ইসলাম গ্রহণ করতে অস্বীকার করার কারণে ১৬৭৫ সালের ২৪ নভেম্বর গুরু তেগ বাহাদুরকে দিল্লীতে ফাঁসি দেন মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব। শ্রী গুরু তেগ বাহাদুর সিং-এর ৩৪৯ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে চলুন জেনে নেওয়া যাক মহান শিখ গুরুর বীরত্ব ও শাহাদাতের রোমাঞ্চকর কাহিনী।

১৬২১ সালের ২১ এপ্রিল, বৈশাখ কৃষ্ণপক্ষের পঞ্চমীতে পাঞ্জাবের অমৃতসরে শিখদের ষষ্ঠ গুরু, গুরু হরগোবিন্দ সাহেব এবং মাতা নানকির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন গুরু তেগ বাহাদুর সিং। যার আসল নাম তেগ মাল। শৈশব থেকেই সাহসী এবং সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন তিনি। ১৬৩২ খ্রিস্টাব্দে জলন্ধরের কর্তারপুরে বিবি গুজরির সঙ্গে বিয়ে হয় তেগ মালের। কিছু দিন পর তিনি এবং তাঁর পরিবার অমৃতসরের কাছে বাকালায় থাকতে শুরু করেন। শিখদের অষ্টম গুরুর মৃত্যুর পর, ১৬৬৫ সাল থেকে ১৬৭৫ সাল পর্যন্ত নবম গুরু হিসেবে সিংহাসন গ্রহণ করেন তিনি।

মুঘলদের সঙ্গে অনেক যুদ্ধ করেছিলেন এবং বিজয়ী হয়েছিলেন গুরু গোবিন্দ সাহেব এবং তাঁর পিতা গুরু হরগোবিন্দ সাহেব। একবার কর্তারপুরে মুঘলদের সঙ্গে যুদ্ধ করার পর ফাগওয়ারার কাছে পালাহি গ্রামের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন গুরু হরগোবিন্দ, তখন মুঘল সেনাবাহিনীর একটি দল আক্রমণ করে তাঁকে। সেই সময় তেগ মালের বয়স ছিল ১৪ বছর, কিন্তু দক্ষতার সঙ্গে ব্রিটিশ সৈন্যদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন তিনি‌। এই যুদ্ধে ব্রিটিশ সৈন্যরা পালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ত্যাগ মালের যুদ্ধের দক্ষতা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন তাঁর পিতা হরগোবিন্দ সাহেব। এরপর তিনি তেগ মালের নাম পরিবর্তন করে রাখেন তেগ বাহাদুর, যার অর্থ 'সাহসীর তলোয়ার'। প্রতিটি ধর্মকে সম্মান করতেন গুরু তেগ বাহাদুর। মানবতাকে সকল ধর্মের ঊর্ধ্বে এবং দুঃখ-কষ্টকে সাহায্য করাকে নিজের কর্তব্য বলে মনে করতেন তিনি।

সেই সময় কাশ্মীরি পণ্ডিতদের উপর মুঘল সেনাবাহিনীর অত্যাচার চরমে ছিল, কাশ্মীরি পণ্ডিতদের জোর করে মুসলমানে ধর্ম পরিবর্তন করা হচ্ছিল এবং যারা অস্বীকার করত তাদের হত্যা করা হত। প্রকাশ্যে ঔরঙ্গজেবের এই নীতির বিরোধিতা করেন গুরু তেগ বাহাদুর। এই খবর শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ঔরঙ্গজেব এবং গুরু তেগ বাহাদুরের পরিবারকে হত্যা করা শুরু করেন তিনি। ঔরঙ্গজেব মনে করেছিলেন যে এমন করলে মাথা নত করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য হবে গুরু তেগ বাহাদুর। কিন্তু এরপরও গুরু তেগ বাহাদুর ধর্ম পরিবর্তন করতে প্রত্যাখ্যান করলে তাঁকে গ্রেফতার করেন ঔরঙ্গজেব। ১৬৭৫ সালের ২৪ নভেম্বর, ঔরঙ্গজেবের নির্দেশে, দিল্লির মোড়ে প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ করা হয় গুরু তেগ বাহাদুরের। যে স্থানে তাঁর মাথা পড়েছিল সেখানেই বর্তমানে নির্মিত শীশগঞ্জ গুরুদ্বার।