আজ কিংবদন্তি সঙ্গীত শিল্পী কিশোর কুমারের মৃত্যুদিন। ১৯৮৭ সালের ১৩ অক্টোবর, নিজের বাড়িতেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। । ভারতীয় সঙ্গীত জগতে কিশোর কুমার মানেই আসলে একজন কিংবদন্তি। টানা চার দশকেরও বেশি সময় ধরে শ্রোতাদের মনে বিরাজ করেছেন তিনি।আসলে কিশোর কুমার এমন একজন ব্যক্তিত্ব যাকে নিয়ে একদিকে যেমন বলার যথাযথ বাক্য থাকে না আবার অন্যদিকে তাকে নিয়ে বলতে বসলে বলা যেন শেষ হবে না। কিশোর কুমারই দেখিয়েছিলেন ভারসেটালিটি কাকে বলে!
কিশোর কিশোর কুমার সম্পর্কে বহু গল্প প্রচলিত আছে তিনি কোনদিনও গান গাইবার আগে মন দিয়ে রিহার্সাল করতেন না কিন্তু মাইক হাতে আসার পরে অদ্ভুতভাবে অনেক কঠিন কঠিন গানও অতি সহজ ভাবে গেয়ে ফেলতেন। অতি সহজেই গানের সারমর্ম বুঝে নেওয়া এবং সঙ্গীত পরিচালক কি বলছেন এবং কিভাবে চাইছেন সেটা প্রায় খেলার ছলে বুঝে নেয়ার ক্ষমতা বা প্রতিভা কিশোর কুমারের ছেলেবেলা থেকেই ছিল।
কিশোর তার গানের যাত্রা শুরু করেন কোরাস গায়ক হিসাবে। ১৯৪৮ সালে জিদ্দি ছবি তাকে দিল প্রথমবার প্লেব্যাকের সুযোগ। কিন্তু না! রাস্তা এত সহজ ছিল না এরপর থেকেই শুরু বাধা-বিপত্তি। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিম না থাকায় বিমল রায় পরিচালিত ছবিতে গান গাওয়ার সুযোগ হারান কিশোর। তবে পরে সুরকার সলিল চৌধুরীর হাত ধরে ফের গানের সুযোগ পান তিনি।
বাঙালির কাছে আজও পুজো এবং পুজোর গান মানেই কিশোর। শুধু পুজো কেন! বৃষ্টিতে লংড্রাইভ হোক কিংবা রাতের প্লে লিস্ট, কিশোর থাকবেনই। তোমায় পড়েছে মনে, সেই রাতে রাত ছিল পূর্ণিমা, নয়ন সরসী কেন ভরেছে জলে আশা ছিল ভালবাসা ছিল- এরকম একাধিক গান আজও বাঙালির জীবনে স্থায়ী। শুধু বাংলা কেন, বাংলা, হিন্দি, মারাঠি মিলিয়ে দশটিরও বেশি ভাষার গানে শ্রোতাদের মন দখল করেছেন কিশোর ৷ মোট ৮ বার ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
একটা সময় ছিল যখন পর্দায় দেবানন্দ মানেই গায়ক কিশোর। তবে ১৯৬৯ সাল বদলে দিয়েছিল সব। আরাধনা সিনেমার কোরা কাগজ থা ইয়ে মন মেরা এবং মেরে সপনো কি রানি রিলিজের পর আর ফিরে দেখতে হয়নি কিশোরকে ৷
শুধু প্রেম তো নয় আজও আমাদের দুঃখ মানেই কিশোর। তা সে একদিন পাখি উড়ে যাবে হোক কিংবা সেই অবিস্মরণীয় চিরদিনই তুমি যে আমার । আজ এই মুহুর্তে দাঁড়িয়ে হয়তো বাঙালির অনেক কিছু হারিয়েছে তবু বাঙালি আজও গর্ববোধ করে- আমাদের একজন কিশোর কুমার ছিল!