ক্রমবর্ধমান দূষণ এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার কারণে বর্তমানে নানা সমস্যার শিকার হচ্ছে মানুষ। অনেক রোগ এবং সমস্যা আছে, যা যেকোনও পথ খুঁজে মানুষের উপর প্রভাব বিস্তার করে। সিকেল সেল রোগ হল এমনই একটি রক্ত সংক্রান্ত রোগ। এই রোগের কারণে সাধারণত প্রভাবিত হয় লাল রক্ত কোষের আকৃতি এবং কার্যকারিতা। সিকেল সেল রোগ একটি গুরুতর সমস্যা হওয়ার কারণে এই বিষয়ে মানুষের সচেতন থাকা খুবই জরুরি। এই রোগ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার জন্য প্রতি বছর ১৯ জুন পালন করা হয় বিশ্ব সিকেল সেল দিবস।
সিকেল সেল রোগ হল একটি জেনেটিক ডিসঅর্ডার, এর ফলে শরীরে উপস্থিত লোহিত রক্তকণিকা বিকৃত হতে শুরু করে। সিকেল সেল রোগ হলে শরীরে এই কোষগুলো দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় এবং শরীরে স্বাস্থ্যকর লোহিত রক্তকণিকার ঘাটতি হতে দেখা দেয়। এই রোগের কারণে শিরায় রক্ত চলাচলও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। লোহিত রক্তকণিকার কোষগুলি সাধারণত গোলাকার হয়, কিন্তু সিকেল সেল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই কোষগুলির আকৃতি গোলাকার হওয়ার পরিবর্তে অর্ধচন্দ্রাকার বা কাস্তের মতো দেখতে হয়ে যায়। বিভিন্ন লক্ষণের মাধ্যমে সিকেল সেল রোগের সনাক্ত করা সম্ভব। এই রোগ হলে শরীরের বিভিন্ন অংশে তীব্র ব্যথা হয়, রক্তের অভাব বা রক্তাল্পতা হতে পারে, হাত ও পা ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়, দৃষ্টি সমস্যা হয় এবং ক্লান্তি বোধ হয়।
সিকেল সেল রোগ একটি জেনেটিক সমস্যা, যা জন্মের সময় থেকেই হয়। যখন বাবা-মা উভয়ের কাছ থেকে একটি শিশু সিকেল সেল জিন উত্তরাধিকারসূত্রে পায়, তখন সেই শিশুটি আক্রান্ত হয় সিকেল সেল রোগে। বর্তমানে সিকেল সেল রোগের কোনও প্রতিকার নেই। এই রোগের চিকিৎসা প্রতিটি রোগীর জন্য ভিন্ন ভিন্ন হয়, উপসর্গের ভিত্তিতে চিকিৎসা করা হয়। সাধারণত চিকিৎসার জন্য সিকেল সেল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে রক্ত সঞ্চালন করতে হয়। এছাড়া রোগীর অস্থি মজ্জা বা স্টেম সেল ট্রান্সপ্ল্যান্টের মাধ্যমেও এই রোগের চিকিৎসা করা হয়। সিকেল সেল রোগের একমাত্র চিকিৎসা হল বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট, যা ঝুঁকিপূর্ণ। তবে স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গ্রহণ করলে এই রোগীদের জীবনযাত্রার মান উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়।