পৌষ পূর্ণিমার দিনে প্রয়াগরাজে শুরু হয়েছে মহাকুম্ভের মহাযজ্ঞ। মহাকুম্ভ হল বিশ্বাসের এক অনন্য সঙ্গমস্থল। এছাড়াও বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হয় এই মেলা। মহাকুম্ভের সময় দেশ-বিদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ সাধু-সন্ত এবং ভক্তরা একত্রিত হয়ে পবিত্র স্নান করেন। ভারতের বৃহত্তম তীর্থস্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয় কুম্ভমেলাকে। ২০১৭ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল কুম্ভমেলা। এছাড়াও কুম্ভ উৎসব পালন করা হয় চারটি পবিত্র স্থান হরিদ্বার, প্রয়াগরাজ, নাসিক এবং উজ্জয়িনীতে। কুম্ভের সময়, মানুষ গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতী, শিপ্রা এবং গোদাবরীর মতো পবিত্র নদীতে ধর্মীয় স্নান করে।

কুম্ভমেলা আয়োজন সম্পর্কে অনেক গল্প প্রচলিত রয়েছে। বিশেষ করে কুম্ভমেলার সঙ্গে সমুদ্র মন্থনের সম্পর্কের গল্প প্রচলিত। কিন্তু প্রশ্ন হল 'কুম্ভ' শব্দটির উৎপত্তি কীভাবে হয়েছে? ধর্মীয় গ্রন্থ এবং বেদ-পুরাণে 'কুম্ভ' শব্দটির বর্ণনা রয়েছে? চলুন জেনে নেওয়া যাক চার বেদের মধ্যে একটি ঋগ্বেদে উল্লেখ কুম্ভের অর্থ। 'কুম্ভ' শব্দটি বেদের অনেক জায়গায় এসেছে। এটিকে পাত্র এবং জলের প্রবাহের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু বেদের মতে, অমৃত মন্থনের গল্প বা হরিদ্বার, প্রয়াগ, উজ্জয়িনী এবং নাসিকের কুম্ভ উৎসবের সম্পর্কিত নেই।

ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলের ৮৯তম স্তবকের ৭ম মন্ত্রে পাওয়া যায় 'কুম্ভ' শব্দটি, যা ইন্দ্র সম্পর্কিত। এতে ইন্দ্রকে শত্রুদের বিনাশকারী এবং জলদাতা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। ঋগ্বেদে কুম্ভ শব্দের অর্থ কাঁচা পাত্র। কিন্তু কুম্ভমেলা বা স্নানের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। একই সময়ে, 'পূর্ণ কুম্ভ' শব্দটি প্রথমবারের অথর্ববেদে পাওয়া যায়, যা ঋগ্বেদের ৬০০ বছর পরে লেখা হয়েছিল, যা চতুর্থ মণ্ডলের ৩৪তম সূক্তে রয়েছে। ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলের ৭৫তম সূক্তে গঙ্গা, যমুনা এবং সরস্বতীর উল্লেখ রয়েছে, যা সঙ্গমের দিকে ইঙ্গিত করে। মহাভারত এবং পুরাণেও প্রয়াগের কুম্ভ শব্দের উল্লেখ রয়েছে। তবে, বেদ ও পুরাণে কুম্ভকে মেলা হিসেবে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়নি।