মমতা ব্যানার্জি (ফাইল ফোটো) (Photo Credits: PTI)

কলকাতা, ১৪ ডিসেম্বর: নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে আজ সকাল থেকে উত্তেজনা ছড়িয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়। গতকালের পর আজও হাওড়ার উলুবেড়িয়া (Uluberia), মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) বেলডাঙায় অশান্তি হয়। উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের (Basirhat) ঘোজাজাঙা সীমান্ত এলাকায়, হাওড়ার কোনা এক্সপ্রেসওয়ে, ডোমজুড়, সলপ সহ বীরভূমের মুরারই প্রভৃতি বিভিন্ন এলাকাতেও অশান্তি হয়। সরকারি, বেসরকারি বাস, রেল স্টেশনে ভাঙচুরের পাশাপাশি আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করা হয়। কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে একের পর এক সরকারি বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। এই পরিস্থিতিতে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে ফের কড়া বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি (Mamata Banerjee)। সোশাল মিডিয়ায় লিখিত বিবৃতির পাশাপাশি বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে ভিডিও বার্তাও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, "গণতান্ত্রিক পথে আন্দোলন করুন। কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। পথ অবরোধ, রেল অবরোধ করবেন না। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বরদাস্ত করা হবে না। যাঁরা গন্ডগোল করছেন, রাস্তায় নেমে আইন হাতে তুলে নিচ্ছেন, তাঁদের কাউকে ছেড়ে দেওয়া হবে না। বাসে আগুন লাগিয়ে, ট্রেনে পাথর ছুড়ে, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করলে, আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।" রাজ্য পুলিশের তরফে টুইট করা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর সেই বার্তা। আরও পড়ুন: Citizenship Act Protests: কোথাও রেল-সড়ক অবরোধ, কোথাও আগুন, বাস ভাঙচুর; নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে জেলায় জেলায় আজও অশান্তি

উল্লেখ্য, নাগরিকত্ব আইনে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা অমুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এই আইন পাস হওয়ার আগে থেকেই বিক্ষোভের আগুন ছড়ায় অসম, ত্রিপুরায়। আইন পাস হওয়ার পর সেই বিক্ষোভের আঁচ এসে পড়েছে বাংলাতেও। বিক্ষোভের জেরে ইতিমধ্যেই হাওড়া-শিয়ালদা শাখায় বিপর্যস্ত ট্রেন পরিষেবা। হাওড়া-খড়গপুর শাখায় বাতিল করা হয়েছে একাধিক ট্রেন। বহু ট্রেনের যাত্রাপথ মাঝ রাস্তাতেই থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। আজ সকাল থেকেই ডোমজুড়ের সলপ মোড়ে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ চলছে। কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ চলছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসে আগুন জ্বালিয়ে দেয়৷ ঘটনাস্থানে আসে হাওড়া সিটি পুলিশ ৷ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ছোড়া হয় কাঁদানে গ্যাস৷ তবে পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে নেই বলে জানিয়েছে পুলিশ৷ বিক্ষোভকারীদের হঠাতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পাল্টা লাঠিচার্জও করতে হয় পুলিশকে। পরে সাঁকরাইলের চাঁপাতলায় রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা৷ টিকিট কাউন্টারে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।

শিয়ালদা ডিভিশনের বারাসত-হাসনাবাদ শাখায় বিক্ষোভের জেরে ট্রেন চলাচল বন্ধ সকাল সাড়ে ৬টা থেকে। হাসনাবাদ শাখার সোঁদালিয়া-লেবুতলা স্টেশনের মাঝে অবরোধ করা হয়। অন্য দিকে, লক্ষ্মীকান্তপুর-নামখানা শাখায় রেলের ওভারহেড তারে কলাপাতা ফেলে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে। ফলে সকাল ৮টা থেকেই ওই শাখায় ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত। মালদহ ডিভিশনের আজিমগঞ্জ শাখাতেও বিক্ষোভের জেরে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন স্টেশনে আটকে পড়েছে বহু ট্রেন। যাত্রীদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। জাতীয় সড়ক থেকে শুরু করে বিভিন্ন রেল স্টেশনে বিক্ষোভ দেখান ৷ নিমতিতা, বাসুদেবপুর স্টেশনে চলে ভাঙচুর।

অন্যদিকে, সাজুর মোড়ে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে একটি সরকারি বাসে ভাঙচুর চালায় বিক্ষোভকারীরা ৷ অবরোধ বিক্ষোভের জেরে স্তব্ধ সড়ক ও রেল পরিষেবা৷ বিক্ষোভের দীর্ঘক্ষণ জঙ্গিপুর স্টেশনে দাঁড়িয়ে ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস৷ ফরাক্কা ও মালদায় একাধিক ট্রেনকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে৷ বেলডাঙা স্টেশনে গতকালের বিক্ষোভ আন্দোলনের জেরে আজও স্বাভাবিক হয়নি লালগোলা-কৃষ্ণনগর শাখায় ট্রেন চলাচল৷ বাসুদেবপুরে হল্ট স্টেশনে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা।