দুই সন্তানকে বাঁকে বসিয়ে বাবা (Picture Source: Social Media)

ময়ূরভঞ্জ, ১৭ মে: পেটের টানে কাজ হারিয়ে শেষ সম্বল নিয়ে ভিটেয় ফেরত যাচ্ছেন হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক। করোনার থেকেও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে পরিযায়ী শ্রমিক সমস্যা। দেশভাগের সময় উদ্বাস্তু যেভাবে আনাচেকানাচে ঘুরে বেড়াতে দেখা যেত বিষয়টা খানিক একই। আলাদা এই জায়গায় তারা ভিটে ছেড়ে উদ্বাস্তু হয়েছিলেন আর পরিযায়ীরা রাজ্য ছাড়া হয়ে নিজের ভিটেয় ফিরে আসতে চান। প্রসবযন্ত্রণা সহ্য করে মা হেঁটে চলেছেন মাইলের পর মাইল। ছোট্ট বাচ্চাগুলির পায়ে জুতো নেই, প্রখর রৌদ্র তাপে পা জলে যাচ্ছে, তবু হাঁটতে হবে। বেঁচে থাকতে হে যে করেই হোক নিজের জায়গায় ফিরে যেতে হবে।

এমনভাবেই বেরিয়ে পড়েন জজপুর থেকে ওড়িশা (Odisha) যাওয়ার পথে ওড়িশার ময়ূরভঞ্জের আদিবাসী সম্প্রদায়ের রূপায়া টুডু। পেটের টানে জজপুরের এক ইটভাটায় কাজ করতেন তিনি। করোনা মোকাবিলায় লকডাউনের মধ্যে সেখানেই আটকে পড়েন। অর্থাভাবে ইটভাটা বন্ধ করেন মালিক। শ্রমিকদের বকেয়া দিতেও অস্বীকার করেন। এমন পরিস্থিতিতে বাড়ি ফেরা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না তাঁর কাছে। লকডাউন প্রায় দু' মাস হতে চলল। এভাবে আর কতদিন কাটানো যায়। আরও পড়ুন, দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৯০ হাজার পেরোল, ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুর সংখ্যায় আরও ১২০

তাই তিনি ঠিক করেন ১৬০ কিলোমিটার হেঁটেই অতিক্রম করবেন। তবে যে তিনি একা নন। সঙ্গে রয়েছে দুই কোলের। বাঁকে করে চার আর আড়াই বছরের দুই ছেলেকে দু'দিকে বসিয়ে এগিয়ে চলেন গন্তব্যের দিকে। মায়ের হাত ধরে এগিয়ে চলল ৬ বছরের মেয়ে। প্রথমে কোলে নিয়েই পথ চলা শুরু করেছিলেন। পরে বুদ্ধি করে নিজেই বানিয়ে নেন সন্তানদের বহনের বাঁক। এরপর কাঁধে বাঁক নিয়ে ১২০ কিলোমিটার হেঁটে অবশেষে শুক্রবার সন্ধে সপরিবারে গ্রামে পৌঁছান টুডু।

তবে গ্রামে ফিরেও স্বস্তি মেলেনি। গ্রামে ঢুকতেই তাঁদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে। কিন্তু সেখানে ছিল না পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা। পরে বিডিও খবর পেয়ে খাবারের বন্দোবস্ত করেন। ওড়িশা সরকারের নিয়ম অনুযায়ী সেখানেই ২১ দিন থাকতে হবে টুডু ও তাঁর পরিবারকে। তারপর বাড়ি ফিরে আরও সাতদিন হোম কোয়ারেন্টাইনে।