Anger Reasons: দীর্ঘদিন চেপে রাখা রাগ বড় কোনও বিপদ ডেকে আনছে না তো ?

কলকাতা:  রাগ, অভিমান, দুঃখ, কান্না, হতাশা, বিষ্ণন্নতা, মন খারাপ, এই সবই আমাদের আবেগ ও অনুভূতির এক একটা বিশেষ দিক। আরও ভালো করে বললে, কখনও কখনও এগুলি আার আমাদের সেন্টিমেন্টের নেতিবাচক লক্ষণের পরিচায়ক হয়ে ওঠে। এদের মধ্যে রাগ এমন একটা আবেগ বা অনুভূতি যার বহিঃপ্রকাশ আমরা সবসময় ঘটাই না। মনে মনে চেপে রাখি। কখনও পরিস্থিতি, তো কখনও আবার নেহাৎই স্বভাবজনিত কারণে। তখন সেই প্রকাশ করতে না পারা চাপা রাগ পরিণত হয়  ক্ষোভে।

আমাদের সবার জীবনেই এই ধরনের পর্ব এসেছে বা কিংবা সম্মুখীন হতেই হয়। অনেক সময় এমনও হয় যে আমরা দীর্ঘ সময় ধরে কোনও বিষয়ে বা কোনও ব্যক্তির উপর মনে মনে রাগ পুষে রাখি। আর এই করতে গিয়ে যে মানুষটির উপর আমরা রেগে রয়েছি বা যার উপর চাপা ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তাঁর  সঙ্গে মনে খুলে কথা বলতেই ভুলে যাই। কখনও আবার এমনও হয়, রাগের সময় পর্ব ভুলে সংশোধন ঘটানোরও চেষ্টা করি না।

কিন্তু কেন এমনটা হয়? কেনই বা আমরা এমন আচরণ করে বসি? সেই নিয়ে বিশেষজ্ঞরা কি বলছেন? আজ বরং সেই নিয়েই এই প্রতিবেদনে খানিকটা আলোচনা করা যাক।

জানেন কি, আমরা কোনও কোনও সময় কোনও ব্যক্তির উপর প্রচণ্ড রেগে যাই এবং সেই রাগ দীর্ঘদিন ধরে পুষে রাখি, তার অন্যতম কারণ হলো, সেই মুহূর্তে রাগের বিকল্প আবেগ হলো দুঃখ। সেই দুঃখ হয়ত এতটাই বেশি মাত্রায় হতে পারে, যার মোকাবিলা করার জন্য আমরা মানসিকভাবে তৈরিও থাকি না। আমাদের জানাও থাকে না, কিভাবে আমরা সামলাবো! সেই কারণে মানসিকভাবে আমরা দীর্ঘদিন ধরে রাগ ধরে রাখাকেই শ্রেয় বলে মনে করি।

কখনও সখনও আবার এমনও হয় যে  ওই পরিস্থিতি আমাদেরই কোনও ভুল সিদ্ধান্ত বা  কাজের কারণে তৈরি হয়েছে, কিন্তু তার দায় প্রকাশ্যে নিজের কাঁধে তুলে নেওয়ার জন্য আমরা তৈরি থাকি না। তখন অন্যান্য আবেগ ও অনুভূতির মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানানোর চেয়ে আমাদের কাছে রাগ চেপে রাখাটাকেই সহজ বিকল্প মনে হয়।

যখন আমরা কারওর থেকে আঘাত পাই, তখন আমাদের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হলো রাগের বহির্প্রকাশ ঘটানো। কিন্তু পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে নিজের রাগকে নিয়্ন্ত্রণে আনতে অনেক সময় আমরা নিজেকে গুটিয়ে নিই। আরও একবার মনে আঘাত পাওয়ার ভয়ে নিজের চারপাশে একটা সুরক্ষিত দেওয়াল তৈরি করে। সেই অজানা অদেখা সীমারেখার মধ্যেই নিজেদের রাখার চেষ্টা করি। রাগ অনেক সময়তেই অনেককে নিজের তৈরি করা লক্ষ্মণ রেখার মধ্যে থাকতে সাহায্য করে।

ছোট্ট একটা উদাহরণ,  ধরুন কেউ ছোটোবেলায় বাবা-মাকে মনের মধ্যে ক্ষোভ পুষে রাখতে দেখে বড় হয়েছেন, তখন নিজের অজান্তেই সেই একই জিনিস লালন-পালন করে বসেন তাঁরা। সেই ধরনের পরিস্থিতিতে তাঁরাও একই রকম প্রতিক্রিয়া জানান। কারণটা খুবই সাধারণ, নিজের অজান্তেই নিজেকে দীর্ঘদিন ধরে ওইভাবেই মানসিকভাবে প্রস্তুত করেছেন তাঁরা।

দুই জন মানুষের মধ্যে সম্পর্কে এই চাপা রাগের কারণেই দূরত্ব তৈরি হতে থাকা। আবার রাগ হওয়া মানে দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে বা ওই রাগটাই তাঁদের সম্পর্কের বাঁধন। ওই বাঁধা ছেঁড়া মানেই সম্পর্কে ইতি। তাই কখন রাগ চেপে রাখতে হবে, আর কখন তার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে হবে, সেটা আপনাকেই ঠিক করতে হবে।