কাবুল, ২৭ অগাস্ট: কাবুল (Kabul) বিমানবন্দরের বাইরে জোড়া আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় ইসলামিক স্টেট (ISIS) জঙ্গি গোষ্ঠীকে নিয়ে আশঙ্কা আরও বেড়েছে। তালিবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানে তাদের উপস্থিতি আগামীদিনে আরও শক্তিশালী হবে বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। ২০ বছর পর আফগানিস্তানে তালিবানের ফিরে আসার পর কারণে অনকেই মনে করছেন এই দেশের মাটি আল-কায়েদা, লস্করের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীর জন্য স্বর্গরাজ্যে পরিণত হবে। কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে জোড়া বিস্ফোরণের দায় ইতিমধ্যেই স্বীকার করেছে আইএসআইএস-খোরাসান বা আইএস-কে (ISIS-Khorosan)। হামলায় ১৩ জন মার্কিন সেনা-সহ নিহত হয়েছেন শতাধিক। ২০১১ সালের পর আফগানিস্তানে গতকালের হামলাতেই সব থেকে বেশি মার্কিন সেনার মৃত্যু হয়েছে।
আইএসআইএস-খোরাসান কারা?
২০১৪ সালে 'ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ট' বা 'আইএসআইএস' ইরাক ও সিরিয়ায় খিলাফত ঘোষণা করে। এর কয়েক মাস পরেই পাকিস্তানি তালিবানদের থেকে বিচ্ছিন্ন জঙ্গিরা আফগানিস্তানের জঙ্গিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে একটি নতুন আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন শুরু করে। নাম দেয় আইএসআইএস-খোরাসান বা আইএস-কে। মধ্যযুগে আফগানিস্তান, ইরান এবং মধ্য এশিয়ার একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে খোরাসান প্রদেশ বলা হত। সেখান থেকেই খোরাসান শব্দটি নিয়েছে এই গোষ্ঠীটি। সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে আইএস নেতা আবু বকর আল-বাগদাদিকেই তারা মেনে নেয়। আরও পড়ুন: Kabul Blast: 'খুঁজে বের করে হিসেব বুঝে নেব' কাবুল বিস্ফোরণে জড়িত জঙ্গি গোষ্ঠীকে হুঁশিয়ারি জো বাইডেনের
পরের বছর আইএসআইএস নেতারা এই সংগঠনটিকে স্বীকৃতি দেয়। তার আগেই অবশ্য উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তান, বিশেষ করে কুনার, নানগারহার ও নুরিস্তান প্রদেশে শিকড় গেড়ে ফেলে আইএসআইএস-খোরাসান। রাষ্ট্র সংঘের পর্যবেক্ষকদের মতে, এই গোষ্ঠী কাবুল ছাড়াও পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের অন্যান্য অংশেও স্লিপার সেল তৈরি করতে সক্ষম হয়।
রাষ্ট্র সংঘের নিরাপত্তা পরিষদের গত মাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইএসআইএস-খোরাসান-র কয়েক হাজার সক্রিয় যোদ্ধা রয়েছে। ইসলামিক স্টেট-খোরাসান মনে করে, জিহাদের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করতে হবে। অমুসলিমদের সঙ্গে সমঝোতা নয়, তাদের শাস্তি দিতে হবে। এরা গত কয়েক বছর ধরেই আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে কয়েকটি ভয়াবহ হামলার জন্য দায়ী। মন্দির, মসজিদ, স্কুল, বাজার-সহ বিভিন্ন এলাকায় এরা হামলা চালিয়ে বহু মানুষকে হত্যা করেছে।
এই গোষ্ঠীটি শিয়া মুসলমানদের বেশি করে টার্গেট করে। গত বছর কাবুলের শিয়া অধ্যুষিত অঞ্চলে একটি হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে হামলা চালিয়েছিল এরা। ১৬ জন প্রসূতিকে তারা গুলি করে হত্যা করে। তবে, বোমা হামলা ও হত্যা ছাড়া আইএস-খোরাসান আফগানিস্তানের কোনও ভূখণ্ড নিজেদের দখলে রাখতে পারেনি। তালিবান এবং মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক অভিযানের কারণে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে তারা।
তালিবানদের সঙ্গে আইএস-খোরাসানের সম্পর্ক কী?
উভয়ই কট্টর সুন্নি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী হলেও তাদের মধ্যে কোনও যোগ নেই। ধর্ম-সহ নানা বিষয়ে তাদের মতভেদ রয়েছে। বিবাদের কারণে এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে আগেও রক্তক্ষয়ী লড়াই হয়েছে। আইএস খোরাসান মনে করে তালিবানরা ধর্মত্যাগী। তাই এদের বিরুদ্ধে জিহাদ জারি রাখতে হবে। আফগানিস্তানে তালিবানের ফিরে আসা মোটেই ভাল চোখে দেখেনি খোরাসান।গত বছর ওয়াশিংটন এবং তালিবানদের মধ্যে হওয়া চুক্তির তারা কড়া সমালোচনা করেছে। আফগানিস্তানে তালিবান ফিরে আসার পর বিশ্বজুড়ে বেশ কয়েকটি জিহাদি গোষ্ঠী অভিনন্দন জানিয়েছে। যদিও সেই তালিকাতে নেই আইএসআইএস। তারা তালিবানের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ এনেছে।