Space Debris. (Photo Credits: X)

মহাকাশ থেকে মহাসমুদ্র। ভূ-পৃষ্ঠের বৃত্ত ছাড়িয়ে জঞ্জালে ভরেছে চারিদিক। এক মার্কিন সংস্থার রিপোর্ট বলছে, দুনিয়ার জঞ্জালের মাত্রা আশঙ্কা মাত্রার সীমা ছাড়িয়েছে। এক তথ্য বলছে, গত বছর সমুদ্রে ৮০ মিলিয়ন প্লাস্টিক বা প্লাস্টিক-জাত পণ্যের আবর্জনা ফেলা হয়েছে। এর ফলে বিশ্বের সমুদ্রগুলিতে এখন ১৭০ ট্রিলিয়ন প্লাস্টিকের আবর্জনায় ছেয়ে গিয়েছে। প্লাস্টিক দূষণ এখন সামুদ্রিক জীবনে বড় আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। ভারসাম্য হারাচ্ছে সামুদ্রিক জীব বৈচিত্র্য। তবে শুধু সমুদ্র, বা নদী কেন মানব দূষণ থেকে রক্ষা পাইনি মহাকাশও।

মহাকাশে জঞ্জাল কীভাবে জমছে

১৯৬১ সাল থেকে মানুষের মহাকাশ রকেট পাঠাতে শুরু করেছে। সেই তখন থেকেই স্যাটেলাইট, রকেট, মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রে আবর্জনা বা যাকে পরিভাষায় বলে 'ডেবরিস' জমতে শুরু করেছে। গত পাঁচ বছরে মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠানোর হিড়িক পড়ে গিয়েছে। ধনকুবেররা মুনাফার গন্ধ পেয়ে মহাকাশ বাণিজ্যের লড়াইয়ে জিততে স্যাটেলাইটের ফোয়ারা ছোটাচ্ছেন। দুনিয়ার ধনীতম শিল্পপতি ইলন মাস্কের স্পেস এক্স কোম্পানি গত পাঁচ বছরে যত রকেট, স্যাটেলাইটে মহাকাশে পাঠিয়েছেন, ততগুলি স্য়াটেলাইট গত ৫০ বছরেও উৎক্ষেপণ করা হয়নি।

দেখুন মহাকাশে কীভাবে ভরেছে জঞ্জালে

মহাকাশ দখলের লড়াই

টেসলা প্রধান ইলন মাস্কের স্পেস এক্স-কে টেক্কা দিতে হাজির হয়েছে অ্যামাজনের জেফ বাজোসের 'ব্লু অরিজিন'। আর এর ফলে মহাকাশে অচল হয়ে যাওয়া স্যাটেলাইটের ধ্বংসাবশেষ, মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের জঞ্জাল সহ নানা মানুষের তৈরি আবর্জনায় ছেয়ে গিয়েছে মহাকাশ। তথ্য বলছে, মহাকাশে এখন সক্রিয় ২ হাজারটি ও নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া ৩ হাজারটি স্যাটেলাইট আবর্তন করে চলেছে। এবার সেখান থেকে ১০ সেন্টিমিটারের চেয়ে বেশী বড় আকারের ৩৪ হাজার 'স্পেস জাঙ্ক'ও আরও অন্তত ১০ লক্ষ স্যাটেলাইটের টুকরোতে জঞ্জালের স্তুপ হয়ে গিয়েছে মহাকাশ। এবার এই মহাকাশে ঘুরে বেরানো জঞ্জালগুলি যত নিজেদের মধ্যে ধাক্কা মারবে, ততই বাড়বে জঞ্জাল। এবার এই মহাকাশ জঞ্জালগুলিতে মাঝেমাঝেই স্যাটেলাইট, রকেট বা মহাকাশযানের ধ্বংসাবশেষ পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ছে।

মহাকাশে রকেট উতক্ষেপণের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে

স্পেস ডেবরিসের আঘাতে মানুষের মৃত্যুর সম্ভাবনা বাড়ছে

তবে পৃথিবীতে যেহেতু ৩ ভাগ জলভাগ, তা সেগুলি বেশীরভাগই খবরে আসে না। কিন্তু কখনও ফ্লোরিডা, তো কখনও চিন, কখনও কেনিয়া তো কখনও আবার অস্ট্রেলিয়া। মহাকাশ থেকে উড়ে আসা ধ্বংসাবশেষ বা 'স্পেস ডেবরিস'নিয়ে আশঙ্কা ক্রমশ বাড়ছে। আগামী দিনে 'স্পেস ডেবরিস' বা 'স্পেস জাঙ্ক'-এর আঘাতে মানুষের মৃত্যুর খবর হলেও অবাক হওয়ার থাকবে না। শুধু পৃথিবীর বুকেই নয়, মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রে স্পেস ডেবরিসের আঘাতের ফলে বড় দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও বাড়ছে।

দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে মহাকাশ থেকে উড়ে এসে পড়ছে ধ্বংসাবশেষ 

মহাকাশ ও মহাসমুদ্রের দূষণ রুখতে নামছে রাষ্ট্রসংঘ

আর মহাকাশ আর মহাসমুদ্রের এই দূষণ সমস্যা রুখতে নড়চড়ে বসল রাষ্ট্রসংঘ। বিশ্ব প্লাস্টিক দূষণ থেকে সমুদ্রকে বাঁচাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে, মহাকাশে আবর্জনা বা 'স্পেস ডেবরিস'সমস্যা থেকে বাঁচতে ডক্টর মোরিবা জাহের নেতৃত্বে কাজ করা শুরু হচ্ছে। মহাকাশে দূষণ রুখতে রকেট উৎক্ষেপণ নিয়ে কড়া আইন আসছে।