১৯৭৩ সালের ১ এপ্রিল নয়টি বনাঞ্চল নিয়ে বাঘ বাঁচাতে পথ চলা শুরু করে ‘টাইগার প্রোজেক্ট’। আজ টাইগার প্রোজেক্টের ৫২ বছর অতিক্রান্ত। ভারত গর্বের সাথে প্রজেক্ট টাইগারের ৫২ বছর পূর্তি উদযাপন করছে, যা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ভূদৃশ্যকে বদলে দেওয়ার একটি অগ্রণী উদ্যোগ।
১৯০০ সালের গোড়ার দিকে। তথ্য বলছে, ভারতের বনে তখন প্রায় ৪০ হাজার বাঘ ছিল। তারপর প্রায় ছয় দশক পার, ভারতের বন থেকে কার্যত উধাও হওয়ার জোগাড় যেন বা আমাদের ‘জাতীয় পশু’-র। অবস্থা এমন হল, ‘আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা’-র (আইইউসিএন) রেড ডেটা বুকে জায়গা জুটে গেল ভারতীয় বাঘের। এই পরিস্থিতিতে ১৯৬৯ সালে আইইউসিএন-এর দশম অধিবেশন বসল দিল্লিতে। সেখানে উঠল বাঘ-প্রসঙ্গ। অন্যদিকে ১৯৭২ সালে উদ্বিগ্ন ভারত সরকার এবং ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফফান্ড’ সংস্থা, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর উদ্যোগে বন্যপ্রাণ ও বাঘ বাঁচাতে আলোচনায় বসল দিল্লিতে। ওই বছর ভারতে তৈরি হল ‘বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন’। তার পরের বছর অর্থাৎ ১৯৭৩ সালের ১ এপ্রিল ডিরেক্টর কৈলাস সাঙ্গালা-র নেতৃত্বে নয়টি বনাঞ্চল নিয়ে বাঘ বাঁচাতে পথ চলা শুরু করল ‘টাইগার প্রোজেক্ট’ বা ব্যাঘ্র প্রকল্প। প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য, বাঘের ছত্রছায়ায় বাস্তুতন্ত্র তথা অন্যান্য হাজার হাজার প্রজাতিকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা।
পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে, এই উদ্যোগটি বিশ্বের সবচেয়ে সফল বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্মসূচিগুলির মধ্যে একটিতে পরিণত হয়েছে। ২০০৬ সালে মাত্র ১,৪১১টি বাঘ থেকে, ২০২২ সালে ভারতে বন্য বাঘের সংখ্যা বেড়ে ৩,৬৮২-এ পৌঁছেছে, যা বিশ্বের প্রায় ৭৫ শতাংশ বন্য বাঘের আবাসস্থল। দেশে এখন ৫৭টি বাঘ সংরক্ষণাগার রয়েছে, যা প্রায় ৮৩,০০০ বর্গকিলোমিটার বনভূমি জুড়ে বিস্তৃত। শুধুমাত্র তামিলনাড়ুতেই ৬,২০০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত পাঁচটি বাঘ সংরক্ষণাগার রয়েছে, যেখানে ৩০৬টি বাঘ আশ্রয় পেয়েছে।
রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত 'সেন্ট দ্য পিটার্সবার্গ ডিক্লারেশন অন টাইগার কনজারভেশন'-এর নির্ধারিত সময়ের চার বছর আগেই ভারত যখন বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার লক্ষ্য অর্জন করে, তখন একটি বড় মাইলফলক আসে। ২০২৩ সালে, দেশটি বিশ্বব্যাপী বাঘদের সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক বৃহৎ বিড়াল জোট ( International Big Cats Alliance) চালু করে সংরক্ষণে তার নেতৃত্বকে আরও দৃঢ় করে তোলে।
জাতীয় বাঘ সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষ (NTCA) হল পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা, যা ‘প্রকল্প বাঘ’-এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।ভারত যখন বাঘ প্রকল্পের ৫২ বছর উদযাপন করছে, তখন এটি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে বিশ্বব্যাপী অনুপ্রেরণা হিসেবে দাঁড়িয়েছে, যা প্রমাণ করে যে নিবেদিতপ্রাণ প্রচেষ্টা প্রজাতির অবক্ষয়কে বিপরীত করতে পারে এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি সমৃদ্ধ বাস্তুতন্ত্র তৈরি করতে পারে।