১৯১০ সালের ২৬ অগাস্ট জন্ম হয় মাদার টেরিজার (Mother Teresa),তিনি ছিলেন একজন আলবেনীয়-বংশোদ্ভুত ভারতীয় ক্যাথলিক ( Albanian-Indian Roman Catholic) সন্ন্যাসিনী ও ধর্মপ্রচারক। অটোমান সাম্রাজ্যের আলবেনিয়া রাজ্যের স্কপিয়ে জন্ম হয় মাদার টেরিজার, ছোট থেকেই মানুষের সেবায় নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন টেরিজা। মানুষের হাসিই ছিল তাঁর আনন্দ, কল্যাণ ছিল তাঁর ব্রত; বিশ্বশান্তির পায়রা বলে অভিহিত করা হত তাঁকে। ২৬ অগাস্ট টেরিজার ১১০-তম জন্মদিনে জেনে নেওয়া যাক কিছু অজানা কাহিনী। মাদার টেরিজার আসল নাম ছিল অ্যাগনিস গঞ্জা বোজাঝিউ। মাত্র ৮ বছর বয়সে নিজের বাবাকে হারান টেরিজা, মনে করা হয়- রাজনৈতিক জগতের শত্রুর হাতে খুন হতে হয়েছিল তাঁকে। বিষ খাইয়ে মাদার টেরিজার বাবাকে খুন করা হয় বলে জানা গিয়েছিল।
সালটা ছিল ১৯২৮, মাত্র ১৮ বয়সে টেরিজা বাড়ি ছেড়ে মিশনারি হওয়ার লক্ষ নিয়ে আয়ারল্যাণ্ডের লরেটো অ্যাবিতে যোগ দেন, এরপর আর নিজের বাড়িতে কোনওদিন ফিরে যান নি মাদার টেরিজা। বাবার মৃত্যুর পর টেরিজার মা তাঁকে রোমান ক্যাথলিক আদর্শে বড় করে তুলেছিলেন। ১৯২৯ সালে ভারতে আসেন মাদার টেরিজা, প্রাথমিকভাবে থাকা শুরু করেন দার্জিলিঙে। ১৯৩১ সালের ২৪ মে সন্ন্যাসিনি হিসেবে প্রথম শপথগ্রহণ করেন টেরিজা। এরপরে দার্জিলিং ছেড়ে কলকাতায় চলে আসেন তিনি, ১৯৩৭ সালের ১৪ মে এন্টালির লরেটো কনভেন্ট স্কুলে শিক্ষকতার কাজে যোগ দেন মাদার টেরিজা।
কলকাতায় থাকাকালীন পঞ্চাশের মন্বন্তর সচক্ষে দেখেছিলেন মাদার টেরিজা। শহরে নেমে এসেছিল শুধু দুঃখ আর মৃত্যু; ১৯৪৬ সালে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গাতেও বহু মানুষ মারা যান, এই সব ঘটনা টেরিজার মনে গভীর প্রভাব বিস্তার করে। ১৯৫০-র আশেপাশে মিশনারিজ অফ চ্যারিটি প্রতিষ্ঠা হয় মাদার টেরিজার তত্ত্বাবধানে, প্রাথমিকভাবে ১৫ জন সদস্য নিয়ে শুরু হয়েছিল এই চ্যারিটি, পরবর্তীকালে সাড়ে ৪ হাজার সন্ন্যাসীনি এর সঙ্গে কাজ করতেন। HIV, লিপ্রোসি এবং টিউবারকিউলোসিস রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা করা হত সেখানে।
১৯৮২-তে বেইরুট এবং লেবাননে যান মাদার টেরিজা, সেখানে মুসলিম এবং ক্রিস্টান-শাসিত এলাকায় শিশুদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন মাদার টেরিজা। ১৯৮২ সালে বেইরুট অবরোধের চূড়ান্ত প্রতিকূল সময়ে মাদার টেরিসা যুদ্ধের একেবারে ফ্রন্ট লাইনের হাসপাতালে আটকে পড়া ৩৭ শিশুকে উদ্ধার করেন। ইজরায়েলি সেনাবাহিনী ও ফিলিস্তিনী গেরিলাদের মধ্যে সাময়িক যুদ্ধ বিরতি ঘটার সময়েই রেড ক্রসের সাহায্যে যুদ্ধ বিধ্বস্ত এলাকায় যান টেরিজা। বিধ্বস্ত হাসপাতালগুলো থেকে কম বয়সের রোগীদের সরিয়ে আনেন।
মাদার টেরিজার কাজের প্রশংসা করে ১৯৭৯ সালে তাঁকে দেওয়া হয় নোবেল শান্তি পুরস্কার, ১৯৮০ সালে ভারতরত্ন এবং পেয়েছিলেন পদ্মশ্রী খেতাব। ধর্মান্তরিত করেন মাদার টেরিজা, এমনই অভিযোগ উঠেছিল বারবার তাঁর বিরুদ্ধে। এই অভিযোগের ব্যাখ্যাতে তিনি বলেছিলেন- "হ্যাঁ আমি রূপান্তরিত করি, তবে ধর্মে নয়, একজন ভাল হিন্দু, মুসলিম, ক্রিষ্টান, ক্যাথলিক, শিখে রূপান্তরিত করি আমি।" ১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন মাদার টেরিজা, তাঁর শেষকৃত্যের সমস্ত কাজের দায়িত্ব সম্পন্ন করে তৎকালীন সরকার।