বসন্ত এসেছে দুয়ারে আর তারই হাত ধরে এসেছে পলাশের লাল ফুল।অৰ্থাৎ রঙিনের সমাহার চারিদিকেই।আর তাই রঙের উৎসব  দোল পূর্ণিমা বা হোলি গুটিগুটি পায়ে আমাদের আনন্দ দিতে হাজির।এই রঙের উৎসবের সারা ভারত ব্যাপী নামে অনেক ব্যাপকতা।কোথাও এই উৎসব হোলি খেলা  আবার কোথাও তা দোল পূর্ণিমা নামেও পরিচিত।কিন্তু মূল যা আনন্দ তা রঙের।অৰ্থাৎ রঙে নিজের ও অন্যের মনকে রাঙিয়ে দেওয়া।তাই আসমুদ্র হিমাচল এই উৎসবে মেতে ওঠে।

হোলি শব্দের উৎপত্তি হয়েছে” হোলা”শব্দ থেকে।আর এই হোলা কথার অর্থ হল আগাম ফসলের প্রত্যাশায় ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা।আবার অনেকের মতে হোলি শব্দটি সংস্কৃত শব্দ “হোলকা” থেকে এসেছে।যার অর্থ হলো অর্ধপক্ক শস্য।ভারতের কিছু প্রদেশ যেমন পাঞ্জাব ,হরিয়ানা প্রভৃতি জায়গায় অর্ধ পক্ক গম ও ছোলা খাওয়ার রীতিও আছে।

এই হোলি ও দোল উৎসবের অনেক প্রচলিত গল্প আছে, হিন্দু পুরাণে প্রায় ২ হাজার বছর আগে, ইন্দ্রদ্যুম্নের দ্বারা গোকুলে হোলি খেলা প্রচলনের উল্লেখ রয়েছে। তবে ইতিহাস বলছে প্রাচীন ভারতে ইন্দ্রদ্যুম্নের নাম একাধিকবার রয়েছে। তাই এই ইন্দ্রদ্যুম্ন আদতে কে ছিলেন, সেই নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

আবার বসন্ত পূর্ণিমার দিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, কেশি নামে একজন অসুরকে বধ করেন। কেশি একজন অত্যাচারী এবং নিষ্ঠুর অসুর ছিলেন। এর জন্য এই অত্যাচারী অসুর দমন হওয়ার জন্য এবং অন্যায় শক্তি ধ্বংস হওয়ার জন্য আনন্দ উৎসবে এই দিনটি উদযাপিত হয়ে থাকে।

আবার ভক্ত প্রহ্লাদ ধার্মিক ছিলেন। তাই তাকে হত্যা করা সহজ ছিল না। কোনোভাবেই তাকে হত্যা করা যাচ্ছিল না। তখন হিরণ্যকশিপুর তার ছেলেকে পুড়িয়ে মারার নির্দেশ দেন। অন্যদিকে হোলিকা আগুনে কোন দিন ক্ষতি হবে না এই বর পেয়েছিল। তাই প্রহ্লাদকে হত্যা করার জন্য হোলিকা সিদ্ধান্ত নেয় সে প্রহ্লাদকে নিয়ে আগুনে ঝাঁপ দেবে। কিন্তু হোলিকার বর পাওয়া সত্ত্বেও সেদিন শেষ রক্ষা হয়নি। প্রহ্লাদ তো বিষ্ণুর আশীর্বাদে বেঁচে যায়। কিন্তু আগুনে ভস্ম হয়ে যায় হোলিকা। সেই দিনটি থেকে পালন করা হয় হোলি বা দোল উৎসব।

হোলিকার এই কাহিনি চাঁচর বা হোলিকা দহন নামে পরিচিত, যা দোলের আগের দিন পালন করা হয়। অথবা যা সাধারণত নেড়াপোড়া বলে অভিহিত। নেড়াপোড়া দিন শুকনো ডালপালা, গাছের শুকনো পাতা দিয়ে বুড়ির ঘর করা হয়। এবং হোলিকার উদ্দেশ্যে সেই ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হোলিকাদহন পালন করা হয়।

অনেক আবার হোলিকার উদ্দেশ্যে মাটির পুতুল বানিয়ে ওই শুকনো ডালপালার ঘরে রেখে জ্বালিয়ে দেয়। ওই দিনটি মানুষ নানা ভাবে পালন করে থাকে। এবং পরের দিন হয় দোল উৎসব।

আবার “দোল পূর্ণিমা”র উৎপত্তি সম্পর্কে বাঙালি বা বৈষ্ণব মতেও এক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।সাধারণত ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে রাত্রি বেলায় হয় দোল উৎসব।এই উৎসবে প্রধানত  রাধাকৃষ্ণের চরণে ভক্তিভরে আবির দেওয়ার মাধ্যমে শুরু হয়, তার সাথে চলে কীর্তন ও ভজন।পরে সেই নানা রঙের আবির মাখিয়ে সবাইকে রাঙানো হয়।বৈষ্ণব মত অনুযায়ী এই দিন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনে রাধিকা ও অন্যান্য সখীদের সঙ্গে আবির বা গুলাল নিয়ে মেতেছিলেন রং খেলায়।তাই এই বিশেষ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য মূলত পশ্চিমবঙ্গে ও উত্তরপ্রদেশে দোল পূর্ণিমা মহা ধুমধামে পালন করা হয়।আবার অনেকের মতে  এই ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথীতে শ্রীকৃষ্ণের মানবরূপী অবতার শ্রী চৈতন্যদেব নদিয়ায় জন্ম গ্রহণ করেন।তাই এই  পূর্ণিমাকে অনেক বৈষ্ণব গৌর পূর্ণিমাও বলে থাকেন।তবে উত্তর ভারতে হোলি উৎসবটি বাংলার দোলযাত্রার পরদিন সাধারণত পালন করা হয়।