শুভ জন্মদিন, কল্লোলিনী তিলোত্তমা। আজ ২৪ অগাস্ট। ১৬৯০ সালে এরকমই এক মেঘলা দিনে কলকাতার মাটিতে পা রেখেছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলা জব চার্নক। সেই থেকে দিনটি পালিত হয়ে আসছে কলকাতার জন্মদিন হিসাবে। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চাকরি নিয়ে ১৬৫৬ সালে ২৬ বছর বয়সে ভারতে আসেন চার্নক। অবশ্য 'কলকাতার জন্মদিন' আদৌ কোনও একটা দিনকে বলা যায় কিনা, তা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। তাই কলকাতা হাইকোর্ট বহু বছর আগেই জানিয়ে দিয়েছে, ‘২৪শে আগস্ট কলকাতার জন্মদিন নয়, জব চার্নকও জনক নন, তবুও এই শহরকে নিয়ে মেতে ওঠার একটা দিন তো বটে।
ঐতিহাসিকদের অনুমান, কলকাতা দু’ হাজার বছরের পুরোনো এক জনপদ। ‘আইন-ই-আকবরি’র রাজস্ব আদায়ের খতিয়ানে ‘কলিকাতা’ নামের উল্লেখ আছে। বিপ্রদাস পিপলাইয়ের ‘মনসাবিজয়’ কাব্যে (১৪৯৫-৯৬), কবিকঙ্কন মুকুন্দরামের ‘চণ্ডীমঙ্গল’-এ কলিকাতার উল্লেখ পাওয়া যায়। ওলন্দাজ বণিক ফান ডেন ব্রুক-এর অঙ্কিত মানচিত্রেও কলকাতার উল্লেখ রয়েছে। ‘পদ্মাবতী’র রচনাকাল আনুমানিক ১৬৪৫-৫২ সাল। সেই গ্রন্থেও কলকাতা রয়েছে। তা হলে কখনোই জব চার্নককে কলকাতার জনক বলা যায় না। তা ছাড়া চার্নক আসার বহু আগে থেকেই কলকাতা ধীরে ধীরে শহরে রূপান্তরিত হতে শুরু করে – পাকাবাড়ি, পাকা রাস্তা, বাণিজ্যনগরীর নানান কাজও শুরু হয়ে যায় চার্নক আসার বহু আগে থেকেই। তাই এ তত্ত্ব কখনোই সমর্থনযোগ্য নয় যে জব চার্নক কলকাতার জনক।কলকাতার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং ইতিহাসে সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের অবদান অনস্বীকার্য। তারাই ছিল কলকাতার মালিক, কলকাতার জমিদার। তাদের আমলেই কলকাতা শহরে রূপান্তরিত হতে শুরু করেছে। চার্নকের মৃত্যুর পর তাঁর জামাতা চার্লস আয়ারের সঙ্গে সাবর্ণ রায় চৌধুরীদের (Sabarna Roy Chowdhury) প্রজাসত্ত্ব হস্তান্তরিত হয় (কলিকাতা, গোবিন্দপুর, সুতানুটি এই তিনটি গ্রামের) বার্ষিক ১৩০০ টাকা খাজনার বিনিময়ে। সেই হস্তান্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছিল সাবর্ণদের বড়িশার আটচালায়। এই খাজনা ব্রিটিশ কোম্পানি ১৭৫৭ সাল অবধি রায় চৌধুরীদেরই প্রদান করেছে।চার্ণক শুধুমাত্র একজন ব্রিটিশ কোম্পানির কর্মচারী ছিলেন এবং ব্যবসার জন্য সুতানুটিতে এসেছিলেন – এইটুকুই বলা যায়। জনক হিসাবে কখনোই তাঁকে উল্লেখ করা যায় না।