বেইরুটে বিস্ফোরণ (Photo Credits: Twitter)

বেইরুট, ১১ আগস্ট: ভয়াবহ বিস্ফোরণে তছনছ হয়ে গিয়েছে রাজধানী বেইরুট। গোটা ঘটনার জন্য প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব ও তাঁর সরকারকেই দোষী ঠাউরেছে আমজনতা। এই বিপুল বিক্ষোভের মাছে পদত্যাগের ইচ্ছে ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব। পরে প্রেসিডেন্ট মিশেল অনের প্রাসাদে গিয়ে তাঁর হাতেই পদত্যাগপত্র দিয়ে আসেন হাসান দিয়াব (Prime Minister Hassan Diab)। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন প্রেসিডেন্ট মিশেল অন। তবে যতক্ষণ না নতুন সরকার গঠন হচ্ছে ততক্ষণ দেশের দেখভালের জন্য হাসান দিয়াবকে পুরনো মন্ত্রিসভা চালু রাখার কথা বলেন মিশেল অন। লেবাননে অশান্তির সূত্রপাত গত সপ্তাহে বেইরুটে ভয়াবহ জোড়া বিস্ফোরণে। এর জেরে প্রায় ২০০ লোকের প্রাণ গিয়েছে। আহতের সংখ্যা ৬ হাজার।

এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে এনিয়ে হাসান দিয়াব বলেন, এই বিস্ফোরণের মতো অপরাধ হল চরম দুর্নীতির ফলাফল। যা রাষ্ট্রের থেকে অনেক বড়। সেই জন্যেই তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়াতে চান। যাতে সহজেই মানুষের পাশে থেকে কাজ করতে পারেন। এবং এই ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে সমস্বরে শামিল হতে পারেন, সেকারণেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এরপর হাসনা দিয়াব বলেন, “আমি আজ এই সরকারের পদত্যাগ ঘোষণা করছি। ঈশ্বর লেবাননকে রক্ষা করবেন।” বিস্ফোরণের পরে পরেই সরকারের বিরোধিতায় সরব হয় বিরাট সংখ্যাক জনতা। এই বিক্ষোভ দমনে পুলিশ ব্যর্থ হলে আসরে নামে সেনাবাহিনী। ততক্ষণে একজন পুলিশকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। কড়া হাতে বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেয় সেনা। এই ঘটনায় ৭২৮ জন বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন। সেই বিক্ষুব্ধ মিছিলের উপরে সেনার দমনপীড়ন দেখে একটা জিনিস স্পষ্ট হয়ে যায় যে, সেনা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেই নিরস্ত্র জমায়েতের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আরও পড়ুন-Donald trump: ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাংবাদিক সম্মেলনের সময় হোয়াইট হাউসের কাছে চলল গুলি, কী হল তারপর?

এমনিতেই বেশ কিছুদিন ধরে লেবাননে রাজনৈতিক টানাপোড়েন চলছিল। তাতে আগুন লাগিয়ে দেয় গত সপ্তাহের ভয়াবহ বিস্ফোরণ। আর গণবিক্ষোভে সেনার আচরণ সেই আগুনে ঘি ঢালে। বেইরুট বিস্ফোরণের নেপথ্যে দুর্নীতি এবং গাফিলতির অভিযোগ তুলে পথে নেমেছিলেন লেবাননের মানুষ। কী ভাবে বন্দরে অসুরক্ষিত ভাবে ২৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট দীর্ঘদিন ধরে জমা হয়ে থাকতে পারে, প্রশ্ন নাগরিকদের। পার্লামেন্টের বাইরে টানা তিন দিন ধরে চলছিল বিক্ষোভ। পুলিশের সঙ্গে বারবারই বেধে যাচ্ছিল খণ্ডযুদ্ধ। কখনও পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ছিল জনতা, কখনও জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ছিল পুলিশ। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ফুটেজে দেখা গিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা ঘেরাটোপ ভেঙে পার্লামেন্টের ভিতরে ঢোকার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এর জেরে পার্লামেন্ট স্কোয়ারের প্রবেশপথের কাছে আগুন ধরে যায়। বিক্ষোভকারীরা আবাসন এবং পর্যটন মন্ত্রকের ভিতরেও ঢুকে পড়েন। এই ঘটনায় দুই মন্ত্রী ইস্তফা দিয়ে সমস্ত দায়ভার সরকারের ঘাড়েই তুলে দেন। ফলে চাপ ক্রমশ বাড়ছিল দিয়াবের উপরে। তাই দেরি না করে জনমতের সিদ্ধান্তকে মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করলেন তিনি। তবে যতদিন না নতুন সরকার গঠন হচ্ছে ততদিন দেশের দেখভাল করবে তাঁর মন্ত্রিসভা, একথাও জানিয়েছেন হাসান দিয়াব।