Lok Sabha 2019 Election Results ফিরে দেখা: এক মাস হয়ে গেল ফল ঘোষণার, রাজ্যের যে পাঁচটা ফলাফলের খবর সবাইকে চমকে দিয়েছিল
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও নরেন্দ্র মোদি(File Photo)

কলকাতা, ২৪ জুন: ২৩ মে, ২০১৯। ঠিক এক মাস আগে দেশে প্রলয় ঘটেছিল। না, না প্রাকৃতিক প্রলয় নয়। নরেন্দ্র মোদি সুনামি। যাকে মিডিয়ায় বলা হয়েছিল 'সুনামো টু'। সেদিন প্রকাশিত হয়েছিল সাত দফায় চলা লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল (Lok Sabha Election Results 2019)। দেশজুড়ে একেবারে মোদি ঝড় বয়ে গিয়েছিল। দিল্লি, গুজরাট থেকে মহারাষ্ট্র, রাজাস্থান। সব জায়গাতেই বিরোধীরা খড়কুটোর মত উড়ে গিয়েছিল। উত্তরপ্রদেশ, বিহার, অসমেও শুধু মোদি আর মোদি। তবে সবচেয়ে বড় চমক অপেক্ষা করেছিল বাংলায়।

মাত্র দুজন সাংসদ আর তিনজন বিধায়কের দল বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ৪০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে জিতেছিল ১৮টি লোকসভা আসন। একেবারে সব রাজনৈতিক হিসেবের বাইরে গিয়ে বিজেপি রাজ্যে একেবারে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলে। ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর এই মমতা ব্যানার্জিকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানানোর মত পরিস্থিতি তৈরি করে প্রথমবার বাংলায় ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখেছ বিজেপি। আরও পড়ুন- এবার টলিউডে মমতা ব্যানার্জি-র একচেটিয়া রাজ খতম করতে নামছে বিজেপি

৫) ডায়মন্ড হারবারে পিছিয়ে পড়েছিলেন অভিষেক ব্যানার্জি, মালদা উত্তরেও জিতল বিজেপি

গণনার শুরুতেই রাজ্যের বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থীদের এগিয়ে থাকার খবর আসছিল। একেবারে অপ্রত্যাশিত জায়গা থেকে বিজেপি প্রার্থীরা এগিয়ে ছিলেন এমন খবর আসছিল। সেই সময় বাংলার সব চ্যানেলে ব্রেকিং নিউজ-তৃণমূলের নম্বর টু তথা খোদ মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক ব্যানার্জি ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে সামান্য ভোটে পিছিয়ে আছেন। তৃণমূল নেতারা টেনশনে পড়ে যান। কিন্তু পরে দেখা যাক বেশ বড় ব্যবধানে অভিষেক জিতলেন। আসলে সেই সময় চলছিল পোস্টাল ব্যালট ও ডায়ন্ড হারবারের কিছু শহুরে অঞ্চলের ভোট। তবে একটু পরেই দেখা যায় সংখ্যালঘু প্রধান মালদা-তেও বিজেপি এগিয়ে। শেষ অবধি গনি পরিবারের সদস্য তথা কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া সাংসদ মৌসম বেনজির নুরকে হারান বিজেপি প্রার্থী খগেন মুর্মু। একটুর জন্য মালদা দক্ষিণে কংগ্রেসের তারকা প্রার্থী-সাংসদ ডালুবাবুকে হারাতে পারল না বিজেপি।

৪) ঝাড়গ্রামে জয়ী বিজেপি প্রার্থী কুনার হেমব্রম, মেদিনীপুরে বাজিমাত দিলীপ ঘোষের

দিদির জঙ্গলমহলেও ফুল পদ্ম। ঝাড়গ্রামের মত তৃণমূলের দুর্গে জিতে দেখালেন বিজেপি প্রার্থী কুনার হেমব্রম। আরও বড় চমক মেদিনীপুরে বড় ব্যবধানে জিতলেন দিলীপ ঘোষ। মানস ভুঁইয়ার মত তৃণমূল প্রার্থীকে হারালেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।

৩) সিঙ্গুরে লিড পেয়ে হুগলীতে জয়ী বিজেপি-প্রার্থী লকেট চ্যাটার্জি, বাঁকুড়ায় হারলেন তৃণমূলের মন্ত্রী প্রার্থী সুব্রত মুখার্জি

মমতা ব্যানার্জির রাজ্য রাজনীতিতে উত্থান যে সিঙ্গুরকে কেন্দ্র করে, সেখানেও লিড পেল বিজেপি। শেষ অবধি হুগলীর মত নিশ্চিত কেন্দ্রেও তৃণমূল হারল। তৃণমূলের রত্না দে নাগ-কে অপ্রত্যাশিতভাবে হারিয়ে জিতলেন বিজেপি-র তারকা প্রার্থী লকেট চ্যাটার্জি। তবে একটুর জন্য আরও বড় অঘটন হতে হতে বেঁচে গেল হুগলীর অপর কেন্দ্র আরামাবাগে। যে আরামবাগে গতবার বড় ব্যবধানে জিতেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী অপরূপা পোদ্দার। সেখানে তিনি মাত্র কয়েক হাজার ভোটে জিতে মুখরক্ষা করলেন।

২) উত্তরবঙ্গে সব লোকসভা আসনে জয়ী বিজেপি

দার্জিলং তো থাকলই সঙ্গে উত্তরবঙ্গের সব লোকসভা আসনে জিতল বিজেপি। কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, বালুরঘাট-সর্বত্র পদ্ম ঝড়, উড়ে গেল তৃণমূল। রায়গঞ্জে চতুর্মুখী লড়াইয়ে জিতে বাজিমাত করলেন বিজেপি-র দেবশ্রী চৌধুরী।

১) অর্জুন সিং, সৌমিত্র খাঁ-তৃণমূল ছেড়ে আসা দুই সাংসদ জিতলেন

দিদি বলেছিলেন গদ্দার। জনগণ কিন্তু সঙ্গে থাকলেবন অর্জুন সিং, সৌমিত্র খাঁ-য়ের। নিজে লোকসভা কেন্দ্রে না ঢুকতে পেরেও বিষ্ণুপুরে বড় ব্যবদানে জিতলেন সৌমিত্র খাঁ। আবার ব্যারাকপুরে দীনেশ ত্রিবেদীর মত প্রার্থীকে হারিয়ে দিলেন অর্জুন সিং। যিনি ভোটের আগে দিদির কাছে ব্যারাকপুর তেকে ভোটে দাঁড়ানোর আবেদন নিয়ে ছুটে গিয়েছিলেন। দিদি তাঁর আবদার না রাখায়, মুকুল রায়ের হাত ধরে বিজেপিতে ঢুকে ব্যারাকপুর থেকে ভোটে দাঁড়িয়ে জেতেন অর্জুন। সঙ্গে ভাটপাড়া বিধানসভা উপনির্বাচনে বড় ব্যবধানে ছেলে পবন সিংকে জিতিয়ে আনেন মদন মিত্রের মত প্রার্থীকে হারিয়ে।

তৃণমূল জয়ী: ২২টি (১২টি কমেছে)

বিজেপি জয়ী: ১৮টি (১৬টি বেড়েছে)

কংগ্রেস জয়ী:-২টি (২টি কমেছে)

বামফ্রন্ট- ০টি (২টি কমেছে)

রাজ্যের যেসব সেলেব প্রার্থীরা জিতেছেন- দেব (ঘাটাল), বাবুল সুপ্রিয় (আসানসোল), নুসরত জাঁহান (বসিরহাট), লকেট চ্যাটার্জি (হুগলী), মিমি চক্রবর্তী (যাদবপুর)।

যেসব সেলেব প্রার্থীরা হেরেছেন-- মুনমুন সেন (আসানসোল), জয় ব্যানার্জি (উলুবেড়িয়া), অর্পিতা ঘোষ (বালুরঘাট)।

যেসব বড় রাজনীতিবিদরা হেরে গিয়েছেন- দীনেশ ত্রিবেদী (ব্যারাকপুর), সুব্রত মুখার্জি (বাঁকুড়া), মানস ভুঁইয়া (মেদিনীপুর), শমিক লাহিড়ি (দমদম), মৌসম বেনজির নুর ( উত্তর মালদা), অভিজিত মুখার্জি (জঙ্গিপুর), বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য (যাদবপুর), মহম্মদ সেলিম (রায়গঞ্জ), দীপা দাশমুন্সি (রায়গঞ্জ)।