শ্রীরাম স্লোগানে বারবার মেজাজ হারাচ্ছেন দিদি। (Photo Credits: ANI)

কলকাতা, ৩১ মে:  জয় শ্রী রাম (Joy Shri Ram) ...বিজেপি কর্মীদের মুখে থেকে বের হওয়া এই স্লোগান শুনলেই মেজাজ হারাচ্ছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি (Mamata Banerjee)। লোকসভা ভোট চলাকালীন চন্দ্রকোণায় হয়েছে। ভোট মেটার পর ভাটপাড়াতেও তাই হল। 'জয় শ্রীরাম' শুনে কনভয় ছেড়ে নেমে এসে মেজাজ হারিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে বসলেন মমতা। ভাটপাড়া (Bhatpara)-য় সাংসদ অর্জুন সিং (Arjun Singh)- য়ের পাড়ায় বিজেপি সমর্থকদের তাঁকে উত্যক্ত করতে 'জয় শ্রী রাম' স্লোগান তুললে, মমতা তেড়ে গিয়ে বললেন, ''কোনও গুন্ডামি-মস্তানি বরদাস্ত করব না। সামনে আয় দেখি, কত বড় বিজেপির বাচ্চা''।

বলা হচ্ছে পরপর দু'বার গাড়ি আটকে বিজেপি কর্মীদের স্লোগানের প্রতিবাদ করতেই গাড়ি থেকে নেমে এমন কাজ করেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সেটার আদৌ কোনও প্রয়োজন আছে কি না সেটা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। আরও পড়ুন- লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর বাংলার মানুষের মন ফিরে পেতে কোন পাঁচটা জিনিস করতে চলেছেন মমতা ব্যানার্জি

 

এটা ঠিক যে তিনি ক্ষমতায় আসার আট বছরে এই প্রথমবার মমতা ব্যানার্জি চ্য়ালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। এটা ঠিক যে, তিনি লোকসভা ভোটের ফল যা হবে বলে আন্দাজ করেছিলেন দিদি, তার ঠিক উল্টো হয়েছে। এটাও ঠিক যে বিজেপি-র আসনসংখ্যা এমন একটা জায়গায় গিয়েছে, এমন তাঁর দলের ভাঙন এমন জায়গায় যাচ্ছে যে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনটা মমতা ব্যানার্জির রাজনৈতিক জীবনে সবচেয়ে চ্য়ালেঞ্জের হতে চলেছে। কিন্তু এর পাশাপাশি এখনও ঠিক, এত সবের পরেও তৃণমূল এখনও ২২টা লোকসভা আসনে জিতেছে। এবং নিজেদের ভুলক্রুটি না থাকলে আরও গোটা পাঁচেক আসন আসত। তৃণমূল নেত্রী-র জনপ্রিয়তায় ফাটল ধরলেও, ভাঙন ধরেনি সেটাও তৃণমূলের ভোটপ্রাপ্তির হিসেবে পরিষ্কার। এমন একটা সময় বিজেপি চাইবে তাঁকে ফাঁদে ফেলতে। আর এর জন্য স্লোগান থেকে মিটিং-মিছিল করা হবে, এমনটা তো রাজনীতির নিয়ম। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য একটা সময় বিভিন্ন ভোটে পরপর সিপিএমের হারের পরেও নানাভাবে তৃণমূলের কর্মীদের ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন। বুদ্ধবাবুর কনভয়ের সামনে তৃণমূলের কর্মীরা নানা স্লোগান দিতেন। কিন্তু বুদ্ধবাবু কনভয় থামিয়ে পাল্টা দিতেন না।

মমতা বলছেন, বিজেপি কর্মীরা গালিগালাজ করছে। ভিডিও-তে সব কথা শোনা যাচ্ছে না। হয়তো দিদির অভিযোগ সত্যি। বিজেপি যে জয় পেয়েছে, তাতে তাদের কর্মী-সর্মথকরা দ্বিগুণ উত্সাহ নিয়ে ঝাঁপাচ্ছে। এগুলো তারই প্রতিফলন। কিন্তু গালিগালাজ দিলেও সব কথা গায়ে মাখতে নেই, এটা তো রাজনীতিবিদদের একেবারে গোড়ায় জেনে রাখতে হয়। সিপিএম আমলেও মমতা এমন গালিগালাজ বহু শুনেছেন। কই তখন তো দিদি এত রাগতেন না! কঠিন সময়ে মেজাজ ঠান্ডা রাখাটাই সবচেয়ে বড় কাজ। এটাও মমতা তাঁর কর্মীদের অনেক কঠিন সময়ে বলতেন। ২০০৪ লোকসভায় তৃণমূল যখন মাত্র একে নেমে যায়, তখন কেশপুরের এক নেতাকে এই পরামর্শ দিয়েছিলেন দিদি। তেমনটা করতে এখন অনেক তৃণমূল নেতা দিদিকে পরামর্শ দিতে চাইছেন। কিন্তু মমতার এখন মেজাজটা একেবারে ভাল নেই। তৃণমূলের কোনও নেতা এখন দিদিকে পরামর্শ দেওয়ার সাহস দেখাচ্ছেন না।