পার্থ প্রতিম চন্দ্র: অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বর্ডার-গাভাসকর ট্রফিতে ১-৩ হেরে তৃতীয় আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে (ICC World Test Championship 20023-25) অভিযান শেষ হল টিম ইন্ডিয়া (Team India)-র। এই প্রথম বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠতে পারল না ভারত। প্রসঙ্গত, আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম সংস্করণের ফাইনালে নিউ জিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ও দ্বিতীয় সংস্করণের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খেলেছিল টিম ইন্ডিয়া। দুবারই ফাইনালে হেরেছিল ভারত। টিম ইন্ডিয়ার মত আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে পরপর দুবার উঠল অস্ট্রেলিয়া। চলতি বছর জুনে লর্ডসে গতবারের চ্যাম্পিয়ন প্যাট কামিন্সের দল WTC 2025 Final-এ খেলবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে।
কোথায় শেষ করল টিম ইন্ডিয়া
গত দুবারের ফাইনালিস্ট টিম ইন্ডিয়া এবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে রাউন্ড রবীন লিগে তিন নম্বরে শেষ করল। মাত্র ৫০ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে শেষ হল রোহিত শর্মার দলের অভিযান। বিদেশের মাটির পাশাপাশি দেশেও হারল টিম ইন্ডিয়া। শুধু হার নয়, এই প্রথম টেস্ট সিরিজে ঘরের মাঠে হোয়াইটওয়াশ হল ভারত। আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ সেরা বুমরা
তৃতীয় WTC-তে কেমন খেলল টিম ইন্ডিয়া
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক এবার বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের পারফরম্যান্স। ২০২৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে ভারতের তৃতীয় WTC-এর অভিযান শুরু হয়েছিল।
ওয়েস্ট ইন্ডিজে জয় দিয়ে শুরু, দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ ড্র
ওয়েস্ট ইন্ডিজে রোহিত শর্মার দল দুই টেস্টের সিরিজে ১-০ জিতেছিল। এরপর ২০২৩-এর ডিসেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে দুই টেস্টের সিরিজ ১-১ ড্র করে টিম ইন্ডিয়া। সেঞ্চুরিয়ানে হারের পর কেপটাউনে সিরিজে দ্বিতীয় তথা শেষ টেস্টে ৭ উইকেটে জেতেন রোহিতরা। কেপটাউন টেস্টের প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫৫ রানে অল আউট করেছিল টিম ইন্ডিয়া। মহম্মদ সিরাজ ১৫ রান দিয়ে ৬ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা হন।
দেশের মাটিতে ইংল্যান্ডকে ৪-১ হারালেন রোহিতরা
এরপর ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে দেশের মাটিতে ইংল্যান্ডের মাটিতে খেলতে নামেন রোহিতরা। দেশের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পাঁচ টেস্টের সিরিজে টিম ইন্ডিয়া জেতে ৪-১। হায়দরাবাদে প্রথম টেস্টে হারের পর টিম ইন্ডিয়া বিশাখাপত্তনাম, রাজকোট, রাঁচি ও ধর্মশালায় দারুণ জয় পেয়ে স্মরণীয় কায়দায় সিরিজ জিতেছিল।
দ্রাবিড় যুগের পর গম্ভীর সভ্যতার সূচনা
এরপর রাহুল দ্রাবিড়ের বিদায়ের পর গৌতম গম্ভীর ভারতীয় দলের দায়িত্ব নেন। গম্ভীরের প্রশিক্ষণে প্রথম টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশকে দুই টেস্টের সিরিজে ২-০ হারায় টিম ইন্ডিয়া। এই ২-০ সিরিজ জয়ে স্মরণীয় ছিল কানপুরে বৃষ্টিতে কার্যত ড্র হতে চলা টেস্টে বিস্ফোরক ব্যাটিং করে ৭ উইকেটে জয় ছিনিয়ে নেওয়া। তখনও আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ পয়েন্ট তালিকায় অনেকটা এগিয়ে শীর্ষে ছিলেন রোহিতরা। বাংলাদেশকে হারানোর পর মনে করা হচ্ছিল WTC 2025-র ফাইনালে টিম ইন্ডিয়ার টানা তিনবার খেলা শুধু সময়ের অপেক্ষা।
কিউইদের বিরুদ্ধে হোয়াইটওয়াশ
কিন্তু কিউইরা একেবারে অপ্রত্যাশিতভাবে সব কিছু উল্টে দিলেন। বিদেশের মাটিতে টেস্টে জিততে ভুলতে বসা নিউ জিল্যান্ড টানা তিনটি টেস্টে অতি শক্তিশালী টিম ইন্ডিয়াকে হারিয়ে রেকর্ড গড়ল। টিম ইন্ডিয়াকে তিন টেস্টের সিরিজে বেঙ্গালুরুতে ৮ উইকেটে, পুণেতে ১১৩ রানে ও মুম্বইয়ে ২৫ রানে হারিয়ে হোয়াইটওয়াশ করে কিউইরা। যেটা বিশ্ব টেস্টে ক্রিকেটের সর্বকালীন চমকের তালিকায় আগের দিকে থাকবে।
অস্ট্রেলিয়ায় বড় হার
দেশের মাটিতে কিউইদের কাছে ০-৩ হোয়াইটওয়াশের পর বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ওঠার ব্যাপারে টিম ইন্ডিয়ার কাছে শর্ত ছিল অস্ট্রেলিয়ায় যে কোনও মূল্যে সিরিজ জয়। রোহিত শর্মার অনুপস্থিতিতে জশপ্রীত বুমরার নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম টেস্টে নেমে চমকে দেয় টিম ইন্ডিয়া। পার্থে অস্ট্রেলিয়াকে মহালজ্জায় ফেলে ২৯৫ রানে জিতে সিরিজে ১-০ এগিয়ে যায় টিম ইন্ডিয়া। পার্থে অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম ইনিংসে ১০৪ রানে অল আউট করার পাশাপাশি দ্বিতীয় ইনিংসে টিম ইন্ডিয়া করেছিল ৬ উইকেটে ৪৮৭ রান। তখন মনে হয়েছিল এবার ডন ব্র্যাডম্যানের দেশে সিরিজ জিতেই ফাইনালে উঠবে টিম ইন্ডিয়া। কিন্তু পার্থের পর অস্ট্রেলিয়ায় রোহিতরা এরপর শুধু হতাশাই করলেন। অ্যাডিলেডে দিনরাতের গোলাপী বলের টেস্টে ১০ উইকেটের লজ্জার হার হয় রোহিতদের। কামিন্সদের আগুনে বোলিংয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় ইনিংসে দিনরাতের টেস্টে টিম ইন্ডিয়ার ইনিংস শেষ হয় যথাক্রমে ১৮০ ও ১৭৫ রানে। ব্রিসবেনে তৃতীয় টেস্টেও রোহিত-বিরাটদের খারাপ ব্যাটিং অব্যাহত থাকে। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসের ৪৪৫ রানের জবাবে টিম ইন্ডিয়া ২৬০ রানে অল আউট হয়ে যায়। তবে বৃষ্টিতে সেই টেস্টে রক্ষা পেয়ে যান রোহিতরা। তৃতীয় টেস্টের পর আচমকা টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে দেশে ফেরেন রবীচন্দ্রন অশ্বিন। এরপর মেলবোর্নে বক্সিং ডে টেস্টে ১৮৪ রানের বড় হারের মুখে পড়ে রোহিত শর্মা ব্রিগেড। এরপর খারাপ ফর্মের কারণে বাদ পড়েন খোদ অধিনায়ক রোহিত শর্মা। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। বুমরার নেতৃত্বে সিডনিতে ৬ উইকেটে হেরে বর্ডার-গাভাসকর ট্রফি দশ বছর হাতছাড়া হওয়ার পাশাপাশি WTC ফাইনালে ওঠার দরজা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
যদি তেমন হত
অস্ট্রেলিয়ায় ১-৩ হারের পরেও টিম ইন্ডিয়া WTC 2025-র ফাইনালে উঠতে পারত টিম ইন্ডিয়া। যদি রোহিত শর্মারা দেশের মাটিতে প্রত্যাশিতভাবে নিউ জিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজে জিততেন।
এক নজরে ২০২৩-২৫ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে টিম ইন্ডিয়ার পারফরম্যান্স
মোট ম্যাচ: ১৯টি
জয়: ৯টি
পরাজয়: ৮টি
ড্র:২টি
পয়েন্ট: ৫০ শতাংশ
দেশের মাটিতে
মোট টেস্ট: ১০টি
জয়: ৬টি
পরাজয়: ৪টি
বিদেশের মাটিতে
মোট টেস্ট: ৯টি
জয়: ৩টি
পরাজয়: ৪টি
ড্র:২টি
সিরিজ জয়: ওয়েস্ট ইন্ডিজ (অ্যাওয়ে), ইংল্যান্ড (হোম), বাংলাদেশ (হোম)-এর বিরুদ্ধে।।
সিরিজ হার: নিউ জিল্যান্ড (হোম), অস্ট্রেলিয়া (অ্যাওয়ে)-র বিরুদ্ধে।।
সিরিজ ড্র: দক্ষিণ আফ্রিকা (অ্যাওয়ে)-র বিরুদ্ধে ।।
সেরা ব্যাটার: যশস্বী জয়সওয়াল
সেরা বোলার: জশপ্রীত বুমরা