৭ জুলাই। ভারতীয় ক্রিকেটের ধোনি দিবস। ভক্তদের কাছে মাহিতে মত্ত হওয়ার দিন। দেখতে ৪৩ বছরে পা দিলেন ভারতীয় ক্রিকেটের চিরকালীন মহাতারকা মহেন্দ্র সিং ধোনি (MS Dhoni)। দেশের হয়ে বছর পাঁচেক হল খেলা ছাড়লেও আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসে তিনিই এখনও প্রাণভোমরা।
উইকেটের পিছনে বিশ্বস্ত হাত, ব্যাট হাতে ম্যাচ উইনার, আর সরকারীভাবে অধিনায়ক না থাকলেও দলের আসল নেতা। ৪৩-এর তরুণ ধোনির জন্মদিনে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুভেচ্ছার ঝড় চলছে। ধোনি মানেই মুগ্ধতা, ধোনি মানেই পরিশ্রম করে সিংহাসনে বসা।
আসুন ধোনির জন্মদিনে দেখে নেওয়া যাক এমন দশ তথ্য যা জানলে তাঁর কেরিয়ারের কিছু জিনিস হয়তো মনে পড়ে যাবে-
১) অভিষেকে যোগী: দেশের জার্সিতে মহেন্দ্র সিং ধোনির সঙ্গে একই ম্যাচে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল যোগিন্দার শর্মা-র। ২০০৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর, চট্টগ্রামে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে অভিষেক হয়েছিল ধোনি ও যোগিন্দারের। যে যোগিন্দার শর্মা-কে ২০০৭ বিশ্বকাপের ফাইনালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ধোনি শেষ ওভারে বল তুলে দিয়েছিলেন। অনবদ্য বল করে যোগিন্দার শর্মা দেশকে বিশ্বকাপ এনে দিয়ে হিরো বনে গিয়েছিলেন।
অভিষেক আন্তর্জাতিক ম্যাচে ধোনি ০ রানে রান আউট হয়ে গিয়েছিলেন। ধোনিকে রান আউট করেছিলেন বাংলাদেশের তাপস বৈশ্য। সেই ম্যাচে যোগিন্দার শর্মা নিয়েছিলেন ১টি উইকেট। যোগিন্দার শর্মা এরপর দেশের হয়ে আর মাত্র তিনটি ওয়ানডে খেলেছিলেন। সেখানে এই ম্যাচের পর ধোনি খেলেন আরও ৫৩৭টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ (৯০টি টেস্ট, ৩৫০টি ওয়ানডে ও ৯৮টি আন্তর্জাতিক টি-২০)।
২) রান ধোনি রান: ধোনি দেশের জার্সিতে প্রথম ও শেষ ম্যাচে রান আউট হয়েছিলেন। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিউ জিল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয়ের জন্য ২৩৯ রান তাড়া করতে নেমে ৯২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে নিশ্চিত হারের মুখে দাঁড়িয়ে ছিল ভারত। কিন্তু সেই অসম্ভব কঠিন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে অষ্টম উইকেটে রবীন্দ্র জাদেজাকে নিয়ে ১১৬ রানের অবিশ্বাস্য পার্টনারশিপ করেন ধোনি। জাদেজা (৭৭) আউট হওয়ার পর ধোনি ব্যক্তিগত ৫০ রানে কিউই তারকা ফিল্ডার মার্টিনের গুপ্তিলের ছোঁড়া থ্রোয়ে দুর্ভাগ্যজনকভাবে রান আউট হয়ে যান। ভারত সেই সেমিফাইনালে হারে ১৮ রানে। এরপর আর দেশের হয়ে খেলেননি ধোনি।
৩) তারা খসার শেষবেলায়- দেশের জার্সিতে সচিন তেন্ডুলকরের শেষ ম্যাচে ধোনি ব্যক্তিগত ৪ রানে আউট হয়ে গিয়েছিলেন। সৌরভ গাঙ্গুলির শেষ আন্তর্জাতিক ম্য়াচে ধোনি দুই ইনিংসেই নাগপুর টেস্টে হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন। রাহুল দ্রাবিড়ের শেষ টেস্টে খেলতে পারেননি ধোনি। অ্যাডিলেডে সেই টেস্টে ধোনির বদলে উইকেটকিপিং করেছিলেন ঋদ্ধিমান সাহা।
৪) উইকট (টে)কার: আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধোনি খেলেন মোট ৫৩৮টি ম্য়াচ। তার মধ্যে উইকেটকিপারের ভূমিকায় খেলা ধোনি একটি উইকেটও পান। ২০০৯ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ওয়ানডে খেলায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ট্রাভিস ডোলিনকে আউট করেন মাহি। ২০১৩ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বোলার ধোনি আউট করেছিলেন শ্রীলঙ্কার মাহেলা জয়বর্ধনেকে। কিন্তু ডিআরএসের সিদ্ধান্তে সেই আউট বাতিল হয়। এ ছাড়াও ঘরোয়া ক্রিকেটে ধোনির দুটি উইকেট আছে।
৫) শেষের সেদিন: ধোনি ২০১৪ সালে শেষবার দেশের হয়ে টেস্ট খেলেন। মেলবোর্নে আয়োজিত সেই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ধোনি ২৪ রানে অপরাজিত ছিলেন, ম্য়াচ ড্র হয়েছিল। সেই টেস্টেই অভিষেক হয় ভারতের তারকা ক্রিকেটার কেএল রাহুলের। দেশের জার্সিতে ধোনির শেষ টি টোয়েন্টি ম্যাচ ছিল ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বেঙ্গালুরুতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। তাঁর শেষ আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টি ম্যাচে ধোনি ২৩ বলে ৪০ রানের দুরন্ত ইনিংস খেললেও ভারত শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেটে হেরে গিয়েছিল। আর দেশের জার্সিতে ধোনির শেষ ওয়ানডে তথা আন্তর্জাতিক ম্যাচ ছিল ২০১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিউ জিল্যান্ডের বিরুদ্ধে।
৬) রেন রেন ধোনি বিগেন: ধোনি টেস্টে তাঁর জীবনের প্রথম টেস্টে ৩০ রান করেছিলেন। চেন্নাইতে হওয়া শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ভারতের সেই টেস্ট বৃষ্টিতে ভেস্তে গিয়েছিল।
৭) শূন্যতা শুরু, পূর্ণতায় শেষ: তাঁর কেরিয়ারের প্রথম ওয়ানডে-র মত প্রথম আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টি ম্যাচেও শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন ধোনি। জোহানেসবার্গে হওয়া দেশের প্রথম সেই টি২০ ম্যাচে ধোনিকে শূন্য রানে বোল্ড করেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার চার্লস লেঙ্গারভেল্ট। সেই ম্যাচে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বীরেন্দ্র সেওয়াগ। ভারত জিতেছিল ৬ উইকেটে।
৮) লেজেন্ড অফ ১৮৩: আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধোনির অন্যতম চিরস্মরণীয় ইনিংস হল ২০০৫ সালে জয়পুরে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তিন ওয়ানডে-তে ১৪৫ রানে ১৮৩ রানের ইনিংস। ওপেনার সচিন তেন্ডুলকর (২) আউট হওয়ার পর অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড় তিন নম্বরে পাঠান ধোনিকে। ভারতকে জিততে হলে করতে হবে ২৯৯ রান। দারুণ বল করছেন চামিন্ডা ভাস, দিলহারা ফার্নান্দো-রা। ধোনি শুরু থেকেই আক্রমণ করেন। শেষ অবধি ১৫টি বাউন্ডারি আর ১০টি বিশাল ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ২৩ বল বাকি থাকতে দেশকে অবিশ্বাস্য জয় এনে দেন।
৯) এক শূন্য শূন্য: আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধোনির মোট ১৬টি সেঞ্চুরি আছে। তার মধ্যে ৬টি ওয়ানডে-তে, ১০টি টেস্টে। আর সেখানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধোনির হাফ সেঞ্চুরির সংখ্যা হল ১০৮টি (শুধু ওয়ানডে-তেই ৭৩টি)। সেখানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৪৯৮টি ইনিংস খেলে ধোনি মোট ১৯ বার শূন্য রানে আউট হন (টেস্টে ১০ বার, ৮ বার ওয়ানডে ও একবার আন্তর্জাতিক টি-২০তে।)
১০) লিডিং ফ্রন্ট দ্য ব্যাক: তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেরিয়ারে ধোনি উইকেটের পিছনে মোট ৬৩৪টি ক্যাচ ও ১৯৫ বার স্ট্যাম্প আউট করেন। সব মিলিয়ে ৫৩৮টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা উইকেটকিপার ধোনির মোট শিকার ৮২৯টি।