Migrant Crisis (Photo Credits: @ndtv, @arvindcTOI Twitter)

৮ থেকে ৮০, ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে। কেউ রয়েছেন গর্ভবতীও। পরিযায়ী শ্রমিকদের তালিকায় রয়েছেন সকলেই। লকডাউনের জেরে রুটি-রুজি বন্ধ। বাড়ির ফেরার জন্য মেলেনি ট্রেন-বাস। উপায় না পেয়ে পায়ে হেঁটেই হাজার হাজার কিলোমিটার পেরোনোর স্বপ্ন দেখছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা। বাড়ি ফেরার পথে অনেকেই দুর্ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছেন। তবু তাঁরা পথচলা থামাননি। দেশের নানা প্রান্ত থেকে সকল পরিযায়ী শ্রমিকরাই মাইলের পর মাইল রাস্তার ধার ধরে হেঁটে চলেছেন। এদের বেশিরভাগ জনের কাছেই কোনও টাকা-পয়সা নেই, নেই খাবারও। কীভাবে, কতদিনে তাঁরা বাড়ি পৌঁছাবেন, জানেন না তাঁরা। কিন্তু তাদের এই লড়াইয়ে কাঁদছে আজ গোটা দেশ। কোথাও কোথাও দেখা যাচ্ছে, গর্ভবতী স্ত্রীকে মেকেশিফ্ট কার্টে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আবার কোথাও চলতে চলতে ক্লান্ত হয়ে ট্রলির উপরই ঘুমিয়ে পড়েছে কয়েক বছরের শিশু।

কিছুদিন আগেই আওরাঙ্গাবাদের রেল দুর্ঘটনার কথা সংবাদ শিরোনামে জায়গা পেয়েছিল। চলতে চলতে রেললাইনের উপরই ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিয়েছিল একদল পরিযায়ী শ্রমিক। গভীর ঘুমে কখন চলন্ত ট্রেন তাঁদের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। সেটি তারা জানতেও পারেননি। হাইওয়ের উপরেও বেশ কিছু দুর্ঘনটার খবর আমাদের সামনে এসেছে।

রাহুল, মধ্যপ্রদেশের দিন আনা দিন খাওয়া পরিযায়ী শ্রমিক তিনি। জমানো টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় নিজের সঙ্গে থাকা একটি ষাঁড় বেঁচে দেন তিনি। বিক্রির সেই টাকায় অত্যাবশ্যকীয় কিছু জিনিস কেনেন রাহুল। এরপর ষাঁড়ের সেই গাড়িটিতে করেই পরিবারকে নিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য রওনা দেন। তাঁর পরিবারকে যেন হাঁটতে না হয়, সেই কারণে ষাঁড়ের গাড়িটি নিজেই টানছেন তিনি।

রামু। হায়দরাবাদ থেকে মধ্যপ্রদেশ। লম্বা রাস্তা যেতে হবে। রামুর স্ত্রী গর্ভবতী। মেয়ের বয়সও বছর চার পাঁচেক। চাকা লাগানো কার্টে বসিয়ে স্ত্রী আর মেয়েকে এভাবেই টানতে টানতে নিয়ে আসছেন রামু। কাঠ দিয়ে তৈরি এই কার্টে করে ৭০০ কিমি রাস্তা নিয়ে এসেছেন তাঁদের রামু। কারণ কোনও বাস কিংবা ট্রাক পেয়ে যাওয়ার আশা থাকলেও সেটি তাঁরা পাননি।

রাস্তায় চলতে চলতেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছেলে। কিন্তু পথচলা বাকি আরও। তাই ছেলে ট্রলির উপরই উল্টে শু’য়ে ঘুমিয়ে পড়েছে আর তাঁর মা তাঁকে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে। পঞ্জাব থেকে ঝাঁসি, প্রায় ৮০০ কিলোমিটার পথ পেরোতে হবে তাঁদের। কীভাবে সম্ভব! জানেন না এঁরা।

বিহারে বেশ কিছু পরিযায়ী শ্রমিক একে অপরের সঙ্গে রীতিমত মারপিট করছেন। খাবার প্যাকেট সংগ্রহ করার জন্য।

পুরো দেশজুড়েই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সম্মুখীন পরিযায়ী শ্রমিকেরা। খাবার নেই-জল নেই-পয়সা নেই। তীব্র গরমে সূর্যের তাপ উপেক্ষা করেই তাঁরা হেঁটে চলেছেন। কবে আদৌ তাঁরা বাড়ি ফিরতে পারবেন, জানেন না তাঁরা। শুধু হেঁটে চলেছেন তাঁরা।