অপারেশন ব্রহ্মা-র অধীনে ভারতের পক্ষ থেকে পাঠানো প্রায় ১৫ টন ত্রাণ সামগ্রী ভূমিকম্প বিধ্বস্ত মায়ানমারের ইয়াংগং-এ পৌঁছেছে। হিন্ডন বিমানঘাঁটি থেকে তাঁবু, স্লিপিং ব্যাগ, কম্বল, শুকনো ও তৈরি খাবারের প্যাকেট, জেনারেটর সেট সহ প্রয়োজনীয় ত্রান সামগ্রী ভারতীয় বায়ু সেনার সি – ওয়ান থারটি জে বিমানটি আজ সেদেশে পৌঁছয়।
আজ সকালে আরও দুটি বিমান ত্রাণ সাহায্য সহ সেদেশের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। সেই বিমানে পাঠানো হচ্ছে প্যারাসিটামল, অ্যান্টিবায়োটিক সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ওষুধপত্র, সিরিঞ্জ, গ্লাভস ও ব্যান্ডেজও।
#WATCH | Two more Indian Air Force aircraft are being loaded with relief material for Myanmar. Planes will depart from AFS Hindon soon.
(Source: MEA)#OperationBrahma pic.twitter.com/jaaoCXVUJU
— ANI (@ANI) March 29, 2025
সামাজিক মাধ্যমের এক বার্তায় বিদেশ মন্ত্রী ডক্টর জয়শঙ্কর বলেছেন, এই বিমানে একটি অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল এবং চিকিত্সক দল সেখানে যাচ্ছে। সরকার সামগ্রিক পরিস্থিতির ওপর নিরন্তর নজর রেখে চলেছে। এ ব্যাপারে কি কি সাহায্য আরও করা যায়, তা পর্যালোচনা করা হবে। মায়ানমারের ভারতীয় দূতাবাস জানিয়েছে, অত্যন্ত দ্রুত সহায়তা পোঁছে দেওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। সেখানকার ভারতীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে দূতাবাস যোগাযোগ রেখে চলেছে। যেকোনো রকম প্রয়োজনে খোলা হয়েছে জরুরী টেলিফোন লাইন।
এদিকে অন্যান্য দেশ থেকেও আসছে সাহায্য। রাশিয়ার জরুরী পরিষেবা মন্ত্রক ১২০ জন উদ্ধারকারী এবং ত্রাণ সাহায্য সহ দুটি উড়ান সেদেশে পাঠিয়েছে। চীনের ইউনাম থেকে ৩৭ সদস্যের একটি দল আজ সকালে ইয়াংগং পৌঁছন। ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকায় সাহায্য পৌঁছে দিতে আরও ৫০ জন আগামীকাল সেখানে যাবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সহায়তা বাবদ ৫০ লক্ষ ডলার অর্থ সাহায্য পাঠানো হয়েছে।
সাত দশমিক সাত মাত্রার বিধ্বংসী ভূমিকম্পে মায়ানমারের মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। আজ সকাল পর্যন্ত প্রাণহানির সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে বলে সেদেশের সেনা সূত্রে খবর। বিপর্যয়ের কারণে এই সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংস্থা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। আহত হয়েছেন দু হাজার ৩৭৬ জন। সবচেয়ে বেশি হতাহতের সন্ধান মিলেছে সেদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালায়। গতকালের ঐ ভূমিকম্পের পর একাধিকবার আফটার শক অনুভূত হয়।
মান্দালায় বহু ঐতিহাসিক স্থান এবং সাগাইং এ ইরাবতী নদীর ওপর ৯০ বছরের পুরনো আভা সেতু ভেঙ্গে পড়েছে। ভূমিকম্পে সড়ক, পরিকাঠামা ও ভবনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিস্তীর্ণ এলাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত খবর এখনো পাওয়া যায়নি। রেড ক্রস সহ বহু সংগঠন, ত্রান ও উদ্ধারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে, ব্যাঙ্ককের ভারতীয় দূতাবাস থাই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে। তবে এখনো পর্যন্ত ভারতীয় নাগরিকদের কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। ব্যাঙ্ককে ভারতীয় দূতাবাস এবং চিয়াংমাইয়ে ভারতীয় বাণিজ্য দূতাবাসের সব কর্মী নিরাপদে আছেন।
তীব্র কম্পন টের পাওয়া যায় থাইল্যান্ডেও। সেখানে অন্তত ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে ব্যাঙ্ককে। আহত ২৬। থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পিটং টার্ন শিনাওয়াত্রা ব্যাঙ্কককে এমার্জেন্সি জোন হিসাবে ঘোষণা করেছেন। দেশের মান্ডালা, বাগো, ম্যাকভে সহ বিস্তীর্ণ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে ক্রমে অর্থ এবং অন্যান্য ত্রাণ সহায়তা আসতে শুরু করেছে। যুদ্ধকালীন তত্পরতায় চলছে ত্রাণ ও উদ্ধারকাজ।
মায়ানমার, থাইল্যান্ড ছাড়াও চীন, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ ও ভারতের পুর্ব ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতেও এই ভূমিকম্পের তীব্রতা টের পাওয়া গেছে।