দেশের ১৩টি রাজ্যে মোট ৮৮টি লোকসভা আসনে দ্বিতীয় দফায় ভোটগ্রহণ চলছে। কেরলের সব কটি (২০টি) আসনেই আজ, শুক্রবার ভোটগ্রহণ হয়ে যাচ্ছে। প্রথম দফায় যেভাবে তামিলনাড়ুর সব কেন্দ্র ভোটগ্রহণ হয়ে গিয়েছে। কেরল ছাড়াও কর্ণাটকের ১৪টি, রাজস্থানের ১৩টি, মহারাষ্ট্র ও উত্তর প্রদেশের ৮টি করে, মধ্যপ্রদেশের ৭টি, অসম ও বিহারের পাঁচটি করে, পশ্চিমবঙ্গ ও ছত্তিশগড়ে তিনটি করে এবং মণিপুর, ত্রিপুরা ও জম্মু-কাশ্মীরে একটি লোকসভা আসনে নির্বাচন চলছে।
মধ্যপ্রদেশের বেতুল কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হচ্ছে না। কারণ সেখানকার বিএসপি প্রার্থী মারা যাওয়ায়, দ্বিতীয় দফার পরিবর্তে ৭ মে তৃতীয় দফায় ভোটগ্রহণ হবে।
দ্বিতীয় দফায় যে কেন্দ্রগুলিতে ভোট চলছে তাদের মধ্যে গতবার এই ৮৮টি-র মধ্যে এনডিএ জিতেছিল ৬৩টি-আসনে। এবার সেখানে আসন বাড়াতে মরিয়া মোদী শিবির। কিন্তু এটাও ঠিক বিজেপির চ্যালেঞ্জ গতবারের চেয়ে অনেক বেশী। যেখানে কর্ণাটক তাদের হাতছাড়া হয়েছে, ইউপি-তেও সবটাই তাদের পক্ষে নেই। রাজস্থানে কয়েক মাসে বিধানসভা নির্বাচনে বড় জয়ের পরেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কাঁটা রয়েছে। মহারাষ্ট্রে এবার শরিকদের চাপে দলের নিচুতলার কথাও সেভাবে শোনা হয়নি বলে অভিযোগ। তবে বিজেপির সুবিধা হল মোদী ঝড় উঠলে অন্য আর কোনও নেগেটিভ ফ্যাক্টার গায়ে লাগে না। কিন্তু প্রশ্ন হল এবার সেভাবে মোদী হাওয়া তৈরি হয়েছে কি?
আসুন দেখে নেওয়া যাক দেশের যে ৮৮টি আসনে ভোট আছে, তাদের মধ্যে বিশেষ নজর কোন কেন্দ্রগুলির--
১) ওয়েনাড় (কেরালা): গত লোকসভা নির্বাচনে কেরলের ওয়েনাড় থেকে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী জিতেছিলেন রাজ্যের মধ্যে রেকর্ড ৪ লক্ষ ৩১ হাজার ভোটে। এবার রাহুলের বিরুদ্ধে বাম দল সিপিআই দাঁড় করিয়েছে জাতীয় মহিলা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আন্নে রাজা-কে।
অন্যদিকে, বিনা যুদ্ধে জমি না ছাড়তে রাহুলের বিরুদ্ধে এখানে বিজেপি দাঁড় করিয়েছে কেরলে দলের সভাপতি কে সুন্দেরান-কে। রাহুলের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষরা বেশ ওজনদার। তবে ২০০৯ লোকসভা থেকে কংগ্রসে এখানে জিতে আসছে। যদিও ২০১৪ লোকসভায় কংগ্রেস প্রার্থী এমআই শানভাস মাত্র ২১ হাজার ভোটে জিতেছিলেন সিপিআইয়ের সাইথান মোকেরির বিরুদ্ধে। বিজেপি প্রার্থী সেবার ৪০ হাজার ভোট পেয়েছিলেন।
২) তিরুবন্ততপুরম (কেরালা): একেবারে দুই হেভিওয়েট প্রার্থী। একদিকে, এখানকার দু বারের অত্যন্ত জনপ্রিয় সুশিক্ষিত কংগ্রেসের শশী থারুর, অন্যদিকে তার সামনে বিজেপি প্রার্থী রাজীব চন্দ্রশেখর। প্রচারে অনেকটাই এগিয়ে ছিলেন শশী। শেষ পর্যন্ত কার মুখে ফুটবে হাসি?
৩) বালুরঘাট (পশ্চিমবঙ্গ): রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বনাম জেলার পোড়খাওয়া হেভিওয়েট তৃণমূল নেতা বিপ্লব মিত্র। একেবারে কড়া টক্কর।
৪) মিরাঠ (উত্তর প্রদেশ): পর্দার রাম অরুণ গোভিল-কে প্রার্থী করে এই কঠিন আসনে জয়ের ছক কষেছে বিজেপি। পর্দার রামের বিরুদ্ধে বিএসপি প্রার্থী দেব্রবত ত্যাগি, এসপি-র টিকিটে দাঁড়িয়েছেন সুনীতা ভর্মা। বিরোধী ভোট দুই সমাজবাদী পার্টির মধ্যে ভোট ভাগাভাগি হলে রামি আবেগে ভর করে মিরাঠে হ্যাটট্রিক করবে বিজেপি। কিন্তু বিরোধী ভোট যে কোনও একটা সমাজবাদী পার্টির বাক্সে পড়ে গেল, প্রথমবার ভোটের ময়দানে নামা অরুণ গোভিলের চেষ্টা ফ্লপ করে যেতে পারে।
৫) মথুরা (উত্তর প্রদেশ): টানা তিনবার সাংসদ হওয়ার পথে এবার 'ড্রিম গার্ল' হেমা মালিনীর সামনে বাধা কংগ্রেসের মুকেশ ধাঙ্গার। প্রথমে কংগ্রেসে হেমা-র বিরুদ্ধে প্রার্থী করেছিল অলিম্পিক পদকজয়ী বিজেন্দর সিং-কে। কিন্তু কংগ্রেস প্রার্থী হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই বিজেপি-তে যোগ দেন বিজেন্দর। ফলে বাধ্য হয়েই কংগ্রেসকে প্রার্থী বদল করতে হয়। গতবার এখান থেকে হেমা জিতেছিলেন প্রায় ২ লক্ষ ৯৪ হাজার ভোটে। এবার হেমার পক্ষে যাবে এতদিন বিরোধী শিবির থেকে এবার এনডিএ-তে আসা আরএলডি-র ভোটও। হেমার হ্যাটট্রিক সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে হচ্ছে।
৬) ভাগলপুর (বিহার): বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী নেহা শর্মা-র বাবা অলোক শর্মা এই কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী। গত দু বার এই কেন্দ্রে জিতছে জেডি (ইউ)। তবে এবার কঠিন লড়াই। জোট সঙ্গী আরজেডি-র ভোট কংগ্রেসের ঘরে পড়ে গেলে হাত শিবিরের জয় নিশ্চিত।
৭) বেঙ্গালুরু দক্ষিণে (কর্ণাটক): কর্ণাটক বিজেপির তরুণ মুখ তেজস্বী সূর্য বনাম কংগ্রেসের আশার আলো সৌমা রেড্ডি। গত দু বার তেজস্বী এখানে অনায়াসে জিতলেও, এই কেন্দ্র বরাবর বিজেপি-র মজবুত গড় হলেও কংগ্রেস প্রচারে ঝড় তুলতে পেরেছে। এখানে প্রার্থী হিসেবে কিছু কিছু বিষয়ে টক্কর দিচ্ছেন সৌমা।
৮) অমরাবতী (মহারাষ্ট্র): গতবার এনসিপি-র সমর্থনে নির্দল প্রার্থী হয়ে অমরবাতী থেকে জিতে সাংসদ হয়ে শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন একটা সময় বলিউডে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করা নবনীত রানা। এবার তিনি বিজেপি-র টিকিটে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কংগ্রেসের সঙ্গে লড়াইয়ে স্থানীয় এক দলের প্রার্থীও। অমরাবতীতে এবার 'কাঁটে কা টক্কর'।