Sharad Powar (Photo Credits: IANS)

নয়া দিল্লি, ৮ ফেব্রুয়ারি:  দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের হারের পর আরও কোণঠাসা হয়ে পড়ল দেশের আঞ্চলিক দলগুলি। নবীন পট্টনায়েক থেকে শরদ পাওয়ার, মায়াবতী থেকে মেহবুবা মুফতি-র মত রাজ্যস্তর থেকে জাতীয় স্তরে উঠে আসা জনপ্রিয় নেতারা ম্লান হয়েছেন। এবার পরাস্ত হলেন কেজরিওয়াল। দেশের রাজনীতিতে নরেন্দ্র মোদীর উত্থানের আগে বলা হচ্ছিল, ভারত দু'দলীয় রাজনীতির বাইরে আঞ্চলিক শক্তিদের রাজ হবে। তখন দেশের রাজনীতিতে রাজ করছেন- মহারাষ্ট্রের শরদ পাওয়ার, বিহারে লালুপ্রসাদ যাদব, উত্তর প্রদেশের মুলায়ম সিং যাদব-মায়াবতী, অন্ধ্রে চন্দ্রবাবু নাইডু বাংলা-ত্রিপুরার বাম নেতারা। কংগ্রেস, বিজেপি-র তখন একক শক্তিতে দেশের সিংহাসনে বসা সম্ভব ছিল না। তাই ইউপিএ, এনডিএ-র মত জোটের জন্ম হয়ে কেন্দ্রে মিলিজুলি সরকারের দিকেই ঝুঁকে ছিল।

কেসিআর, শরদ পাওয়ারদের পর এবার পরাস্ত কেজরিওয়ালও

কিন্তু ১০-১১ বছরে দেশের রাজনীতির বৃ্ত্তটা একেবারে বদলে গিয়েছে। নরেন্দ্র মোদীর মহাউত্থানের পর দেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক শক্তিরাও একেবারে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। গত বছর দেড়কের মধ্যে বিজেপি ও কংগ্রেসের কাছে হেরে একেবারে দুর্বল হয়ে পড়েছে বেশ কিছু আঞ্চলিক শক্তি। দিল্লির পর পঞ্জাবে ক্ষমতা দখলের পর আম আদমি পার্টি জাতীয় দলের মর্যাদা পেয়েছিল ঠিকই, কিন্তু দিল্লির মত ছোট রাজ্যে ক্ষমতা হারিয়ে আপ যে আঞ্চলিক দল হয়ে গেল সেটা বলাই বাহুল্য।  বিজেপির সঙ্গে থাকা আঞ্চলিক শক্তিরা, যেমন এলজিপি (চিরাগ পাসোয়ান), একনাথ শিন্ডে (শিবসেনা), অজিত পাওয়ার (এনসিপি)-, অসম গণ পরিষদ-রা কোণঠাসা।

আরও সঙ্কটে আঞ্চলিক শক্তিরা

গত কয়েক মাসের মধ্যে দেশের রাজনীতির বড় আঞ্চলিক নেতারা ভোট যুদ্ধে পরাস্ত হয়েছেন। মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির কাছে পরাস্ত হয়েছে শরদ পাওয়ার। মারাঠা ভূমে ধরাশায়ী হয়েছেন শিবসেনার উদ্ভব ঠাকরেও। কাশ্মীরে একেবারে বড় হার হেরেছেন পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি। তার আগে তেলাঙ্গানায় কংগ্রেসের কাছে পরাস্ত হন কেসি আর (বিআরএস)। ওডিশায় মোদী ঝড়ে হেরে প্রথমবার মসনদ হারিয়েছেন নবীন পট্টনায়েক (বিজু জনতা দল)। পঞ্জাবে এক সময়ের বড় শিরোমণি অকালি দল, উত্তর প্রদেশে মায়াবতীর বিএসপি-র হালও একেবারে খারাপ হয়ে গিয়েছে। মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর উত্তর প্রদেশে ক্ষমতা হারিয়েছেন অখিলেশ যাদবও। ত্রিপুরায় রেকর্ড ২০ বছর ক্ষমতায় থাকা সিপিএমের মানিক সরকারও রাজ্যে বিজেপির উত্থান ধরাশায়ী হয়েছেন। সিকিম ও মিজোরামের মত উত্তর পূর্ব ভারতের ছোট রাজ্যে বড় দুই আঞ্চলিক নেতারা পরাস্ত হওয়ার পিছনে বিজেপির হাত রয়েছে। এবার দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সেই হাল হল।

বিজেপি ঝড়ের মাঝে টিকে শুধু মমতা, স্ট্যালিন, হেমন্ত সোরেন

বিজেপি ঝড়ের মাঝে শুধু টিকে আছেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় (তৃণমূল), এমকে স্ট্যালিন (তামিলনাড়ু), হেমন্ত সোরেন (ঝাড়খণ্ড)। তবে তামিলনাড়ুতে স্ট্যালিনের সরকারে আছে কংগ্রেস। মমতাই সেখানে একমাত্র কারও সঙ্গে জোট না করেই বিজেপির বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াইয়ে ক্ষমতায় আছেন। কেরলে বামেদের পিনরাই বিজয়নের সরাসরি লড়াই কংগ্রেসের সঙ্গে, বিজেপি সেখানে এখনও তৃতীয় শক্তি।

দেশের কোন কোন রাজ্যে বিজেপি সরকার

উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, হরিয়ানা, রাজস্থানের পর এবার উত্তর ভারতের আরও এক রাজ্য দিল্লিতে হল বিজেপি সরকার। সেখানে উত্তর ভারতে অবিজেপি সরকার আছে জম্মু-কাশ্মীর (এনসি), হিমাচল প্রদেশ (কংগ্রেস), পঞ্জাব (আপ)-এ। পশ্চিম ভারতের তিন রাজ্যে মহারাষ্ট্র, গুজরাট, গোয়ায় বড় সংখ্যা নিয়ে সরকার আছে বিজেপির। গেরুয়া শিবির সবচেয়ে ভাল জায়গায় আছে মধ্য প্রদেশে। সেখানে কংগ্রেস পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। পূর্ব, উত্তর পূর্ব ভারতে বিজেপি ও এনডিএ-র সরকার আছে বিহার (এনডিএ), ত্রিপুরা, অসম, মণিপুর, মেঘালয় (এনডিএ), অরুণাচল প্রদেশে।

কোথায় কোথায় কিছুতেই জিততে পারছে না বিজেপি

তবে বাংলা ও ঝাড়খণ্ডে অনেক চেষ্টার পরেও এখনও ক্ষমতায় আসতে পারেনি বিজেপি। দক্ষিণ ভারতে এনডিএ-র সরকার আছে অন্ধ্র প্রদেশে। কর্ণাটক, তেলাঙ্গানায় অনেক চেষ্টার পরেও বিজেপি বিধানসভা ভোটে হেরেছে।

পরাস্ত আঞ্চলিক শক্তিরা

১) কেসি আর (বিআরএস, তেলাঙ্গানা)

২) শরদ পাওয়ার (এনসিপি,মহারাষ্ট্র)

৩) নবীন পট্টনায়েক (বিজেডি, ওডিশা)

৪) উদ্ধভ ঠাকরে ( শিবসেনা, মহারাষ্ট্র)

৫) অখিলেশ যাদব (এসপি, উত্তর প্রদেশ)

৬) মায়াবতী (বিএসপি, উত্তর প্রদেশ)

৭) জগনমোহন রেড্ডি (YSRCP ,অন্ধ্র প্রদেশ)

৮) মেহবুবা মুফতি (পিডিপি, কাশ্মীর)

৯) শিরোমণি অকালি দল (পঞ্জাব)

১০) এআইএডিএমকে (তামিলনাড়ু)

১১) পবন চামলিং (এসডিএফ, সিকিম )

১২) জোরামথাঙ্গা (এমএনএফ, মিজোরাম)

এছাড়াও বাংলা ও ত্রিপুরায় বামেরা নির্বাচনী যুদ্ধে বারবার পরাস্ত হচ্ছে।