প্যারিস, ২৫ ডিসেম্বর: ধ্বংস স্তূপ সরিয়ে ধীরে ধীরে চলছে প্রাণ সঞ্চারের কাজ। তাই এ বছর বড়দিনে সেজে উঠল না প্যারিসের নোত্র দাম ক্যাথেড্রাল (Notre Dame De Paris)। কলরব মুখর গির্জার অলিন্দে শোনা গেল না প্রার্থনা গান (Prayer)। কারণ চলতি বছরই এই গির্জাটিতে ঘটে গিয়েছে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে ঐতিহ্যবহ গির্জার অধিকাংশ কাঠামো। তাই সংস্কারের কাজ চলছে। এর কারণেই গত ২০০ বছরে এই প্রথমবার বড়দিন উদযাপন হল না নোত্র দামে।
শোনা যায়, দুই বিশ্বযুদ্ধের (Second World War) দামামাতেও থেমে থাকেনি নোত্র দামের বড়দিনের উৎসব। কিন্তু এ বছরের এপ্রিল মাসে আগুনে ঝলসে যায় পুরনো এই গির্জাটি (Church)। তাই এবার বড়দিনে আলোর মৌতাত নেই চেনা গির্জায়। লেলিহান অগ্নিশিখার আগ্রাসনে ইতিহাস। একাংশ ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে পৃথিবীর প্রাচীনতম গির্জাগুলির মধ্যে অন্যতম এই স্থাপত্যকীর্তিটির। নোত্র দাম গির্জার অর্থ ‘আওয়ার লেডি অব প্যারিস’, ফরাসি গথিক স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন এটি। ১১৬৩ সালে নির্মাণ কাজ আরম্ভ হয়। রাজা ষোড়শ লুইয়ের আমলে এটি তৈরি শুরু হয়। ত্রয়োদশ শতকেও একবার আগুন লেগেছিল এটিতে। ১২৩০-১২৪০ সাল পর্যন্ত সময় লেগে গিয়েছিল এটি মেরামত করতে। গির্জার সম্পূর্ণ গঠন তৈরি শেষ হয়েছিল ১৩৪৫ সালে। অর্থাৎ একটা গির্জা প্রায় ২০০ বছরের কাছাকাছি সময় নিয়েছে শুধু তৈরি হতেই। পৃথিবীর প্রাচীনতম ক্যাথিড্রালের মধ্যে অন্যতম এটি। গির্জার অনন্য নকশার গ্লাস পেন্টিং দেখতেও ভিড় করেন দর্শকরা। ফরাসি বিপ্লবেরও সাক্ষী এই গির্জা। আসলে ১৭৯০ সাল নাগাদ বিপ্লবের কারণে নানা গাফিলতির কারণেও গির্জাটির ক্ষতি হয়েছিল। তাই সবমিলিয়ে এটি আবারও ঠিক করতে এত বছর সময় লেগে যায়। গত ১৫ এপ্রিল গির্জায় আগুন লাগার কারণ হিসাবে জুনে এক ফরাসি আইনজীবী জানিয়েছিলেন, জ্বলন্ত সিগারেট কিংবা বৈদ্যুতিন ত্রুটির জন্য গির্জায় আগুন ধরে থাকতে পারে। সরকারিভাবে আরও জানানো হয়েছে, কোনও গাফিলতি এ বিষয়ে রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে। আরও পড়ুন: Economic Slowdown: ধুঁকছে অর্থনীতি! দ্রুত জরুরি ব্যবস্থা নিতে ভারত সরকারকে নির্দেশ দিল IMF
France's Notre Dame Cathedral in Paris will not hold Christmas services for the 1st time since the French Revolution 200+ years ago due to the devastating April fire pic.twitter.com/qUgyLUWt3d
— QuickTake by Bloomberg (@QuickTake) December 24, 2019
গির্জার মুখপাত্র অ্যান্ড্রে ফিনট এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ১৮০৩ সাল থেকে শুরু করে ৮৫০ বছরের পুরনো এই গথিক গির্জায় বড়দিনের উৎসব হয়ে এসেছে, কোনওদিনই তা থেমে থাকেনি। ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই গির্জাটি ক্রিস্টমাসের (Christmas) সময় খোলা থাকত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নাজির শাসনকালেও তা বন্ধ হয়নি। গির্জার রেকটর প্যাট্রিক শোভে জানিয়েছেন, নোত্র দামের আত্মাকে (Soal) বাঁচিয়ে রাখতে ক্রিসমাস উপলক্ষে প্রার্থনার আয়োজন করেছেন তাঁরা। এ বারের জমায়েত হবে নোত্র দামের এক মাইলের মধ্যে অন্য একটি গির্জায়। তিনি এও জানিয়েছেন, সেখানে নোত্র দামের আদলেই উপাসনার জন্য কাঠের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হচ্ছে।