কলকাতা, ৭ জুন: ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বাংলা থেকে ১৮টি আসন জয়ের পর রাজ্যে প্রথমবার সরকার গড়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী হয়ে সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়েছিল বিজেপি। সেই মত বাংলায় ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রেকর্ড জনসভা প্রচার করেছিল গেরুয়া শিবির। কিন্তু সেবার দিদি ঝড়ে কার্যত উড়ে গিয়েছিল বিজেপি। এরপর গত দু বছর একের পর ইস্যুতে রাজ্য রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়ে। তবে সে সব ঝেরে ফেলে শুভেন্দু অধিকারীর অতি আক্রমণাত্মক স্ট্র্যাটেজি, নিয়োগ দুর্নীতির মত ইস্যু, সন্দেশখালি কাণ্ড আর মোদী ফ্যাক্টর ভর করে বাংলায় অন্তত ৩২টি আসনে জয়ের লক্ষ্যে ঝাঁপিয়েছিল বিজেপি। বিজেপির হিসেব ছিল, মমতা বিরোধী হাওয়ার সঙ্গে রাজ্যে এবার মোদী ঝড় উঠলে, বাংলা গেরুয়াময় হয়ে যাবে। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সমীক্ষা, এক্সিট পোলেও সেই ইঙ্গিত ছিল।
এক্সিট পোল দেখে অনেক বিজেপি নেতাই বলতে শুরু করেছিলেন, ২০২৬-র আগেই পালাবদল হয়ে যাবে। কিন্তু ফল বেরোতেই সব হিসেব উল্টে গেল। বিজেপির ফল দেশেরভাগ রাজ্যেই একেবারে প্রত্যাশিত হয়নি। কোনওরকমে কেন্দ্রে এনডিএ-র প্রধান হিসেবে আসা মোদী একেবারেই দুর্বল হয়ে পড়েছেন। চন্দ্রবাবু নাইডু, নীতীশ কুমার-দের নিয়ে কোনওরকমে ক্ষমতায় ফেরা গেলেও শরিকী রাজনীতির ধর্ম, দলগুলির বায়না পূরণ করতে এখন কঠিন সময় অপেক্ষা করছে মোদীর। বাংলা নিয়ে এখন আর ততটা ভাবা আর খরচের বিলাসীতা দেখাতে পারবে না বিজেপি। আরও পড়ুন- গতবার দিল্লির সেলেব্রিটি সাংসদ এবার হলেন পঞ্চম! কে সেই বিজেপি তারকা নেতা
আগামী মাসে বাংলায় বিপর্যয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা বসতে পারে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারী-দের দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়ে ব্যাখা চাইবে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। নরেন্দ্র মোদী বাংলায় অনেকবার সফরে গিয়েও কেন ফল পেলেন না তা নিয়ে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে। সুকান্তর চেয়েও শুভেন্দুকেই কড়া প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে। শুভেন্দু তাঁর জেলায় দুটি আসনে দলকে জেতালেও বাকি সব জায়গায় কেন ব্যর্থ হলেন তা নিয়ে জবাব চাইছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বঙ্গ বিজেপির পক্ষে এখন সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ নিজেদের দল ধরে রাখা। কারণ এবার এনডিএ সরকারে বিজেপির প্রতিনিধি কম থাকবে। অথচ বাংলায় সৌমিত্র খাঁ-দের মত অনেকেই মন্ত্রীদের দাবিদার। বিধায়কদের পক্ষেও তাদের এলাকায় বিজেপি জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাজ করাটা বেশ চ্যালেঞ্জের হয়ে উঠবে। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে নেতৃত্ব দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর মত নেতারও অভাব বঙ্গ বিজেপিতে। পূর্ব মেদিনীপুরের বাইরে শুভেন্দু অধিকারীর ক্যারিশ্মা একেবারেই নেই।
তার ওপর আবার এখন মমতার বিরুদ্ধে আন্দোলন যা করার রাজ্য বিজেপিকেই করতে হবে। আগের মত অর্থ সহ নানা সাহায্য দিল্লিতে থেকে নাও মিলতে পারে। এখানেই অগ্নিপরীক্ষা সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারী-দের। সমস্যা হল দিলীপ ঘোষ হারের পর যেভাবে ঘুরিয়ে তোপ দেগেছেন, তাতে বঙ্গে বিজেপির ঘর সামলানো কঠিন হবে। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, তৃণমূলের দিকে পা বাড়িয়ে রেখেছে বিজেপির কয়েকজন বিধায়ক ও সাংসদ। তৃণমূল সমর্থকদের দাবি, বছরখানেকের মধ্যে বাংলায় বিজেপি লোকসভায় সিঙ্গল ডিজিট আর বিধানসভায় ৫৫-র নিচে নেমে যেতে পারে। সামনেই ২১ জুলাই, তৃণমূলের শহিদ দিবস।
সেদিন ফুল বদলের রাজনীতিতে বিজেপি সমর্থকদের জন্য বড় হৃদয়ভঙ্গ হওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে বলেও একাংশের অনুমান।