কলকাতা, ১৫ মে: বৃত্তান্তের যাত্রাপথ নিয়তি এতটুকুই বেঁধে দিয়েছিল। তাই তিস্তা পার থেকে আর পদ্মার পারে যাওয়ার সময় তিনি পেলেন না। লকডাউনের মধ্যেই অসংখ্য সাহিত্যানুরাগীর ভালবাসার বন্ধন কাটিয়ে পরপারে যাত্রা করলেন সাহিত্যিক দেবেশ রায় (Debesh Roy)। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। ওপার বাংলায় জন্ম হলেও উত্তরবঙ্গ যেন দেবেশ রায়ের শৈশবকে একেবারে মায়ের আঁচলের মতো ঘিরে রেখেছিল। তাইতো ‘তিস্তাপারের বৃত্তান্ত’ পাঠকের মন আলো করে আছে। ব্যতিক্রমী ঘরানার এই ঔপন্যাসিকের জন্ম ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৩৬। বেড়ে ওঠা উত্তরবঙ্গে। সেখানেই গড়ে ওঠে বামপন্থী রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিত। তাঁর লেখায় বার পার পটভূমি থেকে চরিত্র হয়ে ফিরে এসেছে উত্তরবঙ্গ। রাজনৈতিক কারণে উত্তরবঙ্গের প্রতিটি কোণ ছিল তাঁর নখদর্পণে। পরবর্তীকালে কলকাতায় শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গেও তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
প্রথম উপন্যাস ‘যযাতি’, এরপর একে একে এল ‘উদ্বাস্তু’, ‘নিরস্ত্রীকরণ কেন’, ‘কলকাতা ও গোপাল’, ‘সময় অসময়ের বৃত্তান্ত’, ‘শরীরে সর্বস্বতা’, ‘বরিশালের যোগেন মণ্ডল’, ‘তিস্তাপুরাণ’ এবং ‘তিস্তাপারের বৃত্তান্ত’। উত্তরবঙ্গ এবং তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ মিলেমিশে গিয়েছে এই উপন্যাসে। ‘তিস্তাপারের বৃত্তান্ত’-র জন্য ৯০ সালে পেলেন সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার। ঔপন্যাসিক, প্রবন্ধকার, গল্পকারের পাশাপাশি তাঁর আরও একটি পরিচয় মনে রাখবে বাঙালি। ১৯৭৯ সাল থেকে এক দশক তিনি সম্পাদনা করেছেন ‘পরিচয়’ পত্রিকা। অনেক লেখক তৈরি করেছেন সে সময়। আরও পড়ুন- Mumbai Police: ফের করোনা কাড়ল প্রাণ, বৃহস্পতিবার আরও ১ জনের মৃত্যুতে মুম্বই পুলিশে করোনার বলি ৬
দেবেশবাবুর স্ত্রী কাকলি দেবী ২০১৭ সালে প্রয়াত হয়েছেন। একমাত্র ছেলে দেবর্ষি থাকেন বরোদায়। লকডাউনের জন্য তিনিও আসতে পারবেন না। কিছুদিন আগেও কোনওরকম অসুস্থতা তাঁকে গ্রাস করেনি। মাস দুয়েক আগে অসুস্থ সাহিত্যিক শঙ্খ ঘোষকে দেখতে যান। দু’তিন দিন হল তাঁর শারীরিক অবস্থা তেমন ভাল যাচ্ছিল না। মঙ্গলবার শরীরে সোডিয়াম পটাশিয়ামের পরিমাণ কমে যেতেই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার চলে যান ভেন্টিলেশনে। গতকাল রাত ১০ বেজে ৫০ মিনিট নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন দেবেশ রায়। শুক্রবার সকাল সওয়া আটটায় তাঁর দেহ আনা হবে বাগুইহাটির বল্মীকি আবাসনে, যেখানে তিনি থাকতেন। সেখান থেকেই সরাসরি নিয়ে যাওয়া হবে রতনবাবুর ঘাটে।