ঠিক যেন গোয়েন্দা সিনেমা। চেতলা (Chetla) নিবাসী এক শিল্পপতির বাড়ি থেকে খোয়া যাওয়া একাধিক হীরের গয়নার হদিশ পেল কলকাতা পুলিশের তদন্তকারী আধিকারিকরা। ঘটনায় গ্রেফতার ১১। এর মধ্যে মূল অভিযুক্ত বাড়ির পরিচারিকারাই। যদিও এই চুরির রহস্য সমাধান করতে পুলিশ বুঝতে পারে যে অভিযুক্তরা কতটা পরিকল্পনামাফিক ঘটনাটি ঘটিয়েছিল। কারণ যদিও এই চুরি কিন্তু একদিনে হয়নি। বরং দিনের পর দিন বাড়ির সদস্যদের বোকা বানিয়ে লকার থেকে আসল গয়না সরিয়ে রেখে নকল গয়না সেখানে রাখা হত। আর গয়নাগুলিও এতটাই নিখুঁতভাবে বানানো হত যে আসলের সঙ্গে কোনও তফাৎ ছিল না।

জানা যাচ্ছে, গত ২৪ ডিসেম্বর চেতলার ওই শিল্পপতি ও তাঁর পরিবারের কাছে চুরির ঘটনাটি সামনে আসে। তখন বাড়ির সদস্যরাই খোজাখুঁজি শুরু করে। তারপরেও যখন তাঁরা সেগুলি উদ্ধার করতে পারে না, তখন ২৭ ডিসেম্বর অভিযোগ দায়ের করা হয়। এরপর শুরু হয় পুলিশি তদন্ত। ডিসি (সাউথ) প্রিয়ব্রত রায়ের তত্ত্বাবধানে ও চেতলা থানার ওসি সুখেন্দু মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে শুরু হয় তল্লাশি অভিযান। আর তারপরেই চেতলার ওই ব্যবসায়ীর বাড়িতে কাজ করা পরিচারক, পরিচারিকা, গাড়িচালক, রাঁধুনি, ন্যানি সহ মোট ১০ জনকে জেরা করা হয়।

তারপরেই ৩০ ডিসেম্বর একাধিক হীরের গয়না উদ্ধার করা হয়। ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া ১১ জনের মধ্যে ৬ জনই ওই বাড়ির পরিচারিকা। বাকি ৫ জন ওই চুরির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। জানা যাচ্ছে কমপক্ষে ২ বছর ধরে ধীরে ধীরে সরানো হচ্ছিল গয়নাগুলি। চুরি হওয়া সামগ্রীর আনুমানিক বাজারদর কমপক্ষে ১ কোটি টাকা। এই ঘটনায় যুক্ত প্রধান অভিযুক্ত ঝুমা ঘোষ মেটিয়াবুরুজের বাসিন্দা। এছাড়া বাকিরা গার্ডেনরিচ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মেদিনীপুরের বাসিন্দা ছিলেন বলে জানা গিয়েছে।

প্রথম দফায় সমর নস্কর, সরস্বতী দাস, সুপ্রিয়া পুরকায়েত, ঝুমা দাসকে গ্রেফতার করা হয়। এবং দ্বিতীয় দফায় অশোক জানা, সনৎ ফরিতদার, প্রসেনজিৎ মান্ন, তন্ময় ওঝা, মিহির রায়া ও ঝুমার মেয়ে প্রিয়াঙ্কা দাস ও দিদি রুমি সিংকে গ্রেফতার করা হয়। জানা যাচ্ছে, খোয়া যাওয়া বেশকিছু গয়না মেদিনীপুরে পাচার করা হত। সেখান থেকে গিরীশ পার্কের একাধিক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর হাত ধরে সেগুলি গিরীশ পার্কে আনা হত। অন্যদিকে কয়েকটি দামী গয়না নিজের কাছেই লুকিয়ে রাখত ঝুমা। অবশেষে অলঙ্কারগুলি সহ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে বেশ কয়েকজন এখনও পলাতক রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।