শান্তিনিকেতন( Santiniketan), এই নামটির সঙ্গেই জড়িয়ে আছে শান্তির আচ্ছাদন। রবি ঠাকুরের (Rabindranath Tagore)শান্তিনিকেতনে যাননি এমন বাঙালি আজকে আর খুঁজে পাওয়া দুস্কর। শুধু দোল বা পৌষমেলা নয়, বছরের যেকোনও সময়ই ঘুরে আসতে পারেন এই শান্তিনিকেতনে। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত ধরে প্রথম বোলপুরের সঙ্গে পরিচয় রবির। তারপর বাবার সঙ্গে হিমালয় ভ্রমণের পর ফের ভুবনডাঙায় ফিরে আসেন তিনি। মহর্ষি ততদিনে ছাতিমতলায় আশ্রমের প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছেন, সালটি ১৮৬৩। এরপর ১৯০১ সালে বলেন্দ্রনাথের সহায়তায় গড়ে ওঠে ব্রহ্ম বিদ্যালয়, পরে ভার নেন রবি। কালক্রমে সেই ব্রহ্ম বিদ্যালয়ই হয়ে উঠল আজকের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবনের দ্বিতীয়ার্ধের অধিকাংশ সময় শান্তিনিকেতন আশ্রমে অতিবাহিত করেছিলেন। তাঁর সাহিত্য ও সৃষ্টিকর্মে এই আশ্রম ও আশ্রম-সংলগ্ন প্রাকৃতিক পরিবেশের উপস্থিতি সমুজ্জ্বল। শান্তিনিকেতন চত্বরে নিজের ও অন্যান্য আশ্রমিকদের বসবাসের জন্য রবীন্দ্রনাথ অনিন্দ্য স্থাপত্য সৌকর্যমণ্ডিত(Sculpture) একাধিক ভবন নির্মাণ করিয়েছিলেন।
এমনিতে লাল মাটির দেশে দেখার মতো জায়গার অভাব নেই। কিন্তু কলকাতা থেকে মাত্র ১৬০ কিলোমিটার দূরের শান্তিনিকেতনের কোনও বিকল্প নেই। ট্রেনে হাওড়া থেকে বর্ধমান হয়ে বোলপুর-শান্তিনিকেতন ঘণ্টা তিনেকের জার্নি। বিশ্বভারতীর নয়নাভিরাম ক্যাম্পাস, কোপাই নদীর তীর এখন কিংবদন্তীতে পরিণত হয়েছে। তবু শান্তিনিকেতন এমন একটা জায়গা, যেখানে বারবার যাওয়া যায়। শান্তিনিকেতনের ক্যাম্পাস জুড়ে রবীন্দ্রনাথ, নন্দলাল বসু(Nandalal Bose), রামকিঙ্কর(Ramkinkar), বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের অসংখ্য চিত্র, ভাস্কর্য, ম্যুরাল, ফ্রেস্কো ছড়িয়ে রয়েছে। ঘুরে-ঘুরে দেখা যেতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনগুলিও।
মূল আকর্ষণ ‘উত্তরায়ণ’-এ। রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন সময়ের আবাস। ‘উত্তরায়ণ’-এ ঢুকেই বাঁ দিকে বিচিত্রাভবন বা এক কথায় রবীন্দ্র মিউজিয়াম। এখান থেকে বেরিয়ে একে একে পড়বে উদয়ন, কোনার্ক, শ্যামলী, পুনশ্চ, উদীচী ইত্যাদি। উদয়নে রবীন্দ্রনাথের ঘরটি একই ভাবে সাজানো। ‘উত্তরায়ণ’ বুধবার বন্ধ, কারণ ওই দিন বিশ্বভারতীতে ছুটি। তার পশ্চিমে খোলামেলা বাড়ি কোনার্ক। এর আদল অনেকটা ওড়িশার কোনার্কের সূর্য মন্দিরের মতো। কবির স্বহস্তে রোপিত মাধবীলতা আজও তেমনই আছে। কালো মাটির তৈরি সুন্দর শিল্পসম্মত কুটির শ্যামলী। শ্যামলীর পাশেই নিচু ছাদের ছোট বাড়ি পুনশ্চ, তার পরেই উদীচী।
লাল মোরাম বিছানো রাস্তা আর বড় বড় গাছ, বিশ্বভারতীর ইউএসপি এটাই। হাঁটতে-হাঁটতে চলে যাওয়া যায় প্রান্তিকে। ছোট্ট রেল স্টেশনটা যেন গল্পের বইয়ের পাতা থেকে উঠে আসা। যাঁরা বেড়াতে গিয়ে কেনাকাটা করতে ভালোবাসেন, তাঁরা কুটির শিল্পের দুর্দান্ত কালেকশন সংগ্রহ করতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কারণেই গোটা বোলপুর(Bolpur) চত্বরে রাস্তিবাসের জন্য হোটেল লজ, হোম-স্টে কোনও কিছুরই অভাব নেই।