প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি পালন করা হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক মানুষের জীবনে ভাষার গুরুত্ব তুলে ধরার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় এই দিনটি। এই দিনটি বহুভাষিকতা এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে উৎসাহিত করে। মানুষের ব্যক্তিগত ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন অর্জনে ভাষার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা মনে করিয়ে দেয় এই দিনটি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসটি পালন করার উদ্দেশ্য হল ভাষাগত ঐতিহ্য সংরক্ষণ, যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং সকলের জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এটি বিশ্বকে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য ভাষাগত বৈচিত্র্যকে উপলব্ধি এবং সুরক্ষা দিতে উৎসাহিত করে।

২০২৫ সালে পালন করা হবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ২৫তম বার্ষিকী। তাই ২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের থিম হল “Languages Matter: Silver Jubilee Celebration of International Mother Language Day.” এটি ভাষাগত বৈচিত্র্য প্রচারের গুরুত্ব তুলে ধরে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই বিশ্ব গড়ে তোলার দিকে অগ্রগতিকে উৎসাহিত করে। ১৯৪৭ সালে যখন ভারত স্বাধীনতা লাভ করে তখন শুরু হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ইতিহাস। এরপর উপমহাদেশে একটি ভাষা সমস্যা দেখা দেয়। ১৯৪৮ সালে উর্দুকে তার একমাত্র সরকারী ভাষা হিসেবে ঘোষণা করে পাকিস্তান। তবে, পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমানে বাংলাদেশ), বাংলা ছিল প্রধান ভাষা, যার ফলে বিক্ষোভ শুরু হয়।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষা করার এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে। সরকার সমাবেশ নিষিদ্ধ করার পরেও, প্রতিবাদ আরও বড় আকার ধারণ করে এবং অনেক লোক তাদের ভাষা রক্ষায় যোগ দেয়। বিক্ষোভের ফলে মৃত্যু হয় ৫জন শিক্ষার্থীর। তাদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানাতে এবং মাতৃভাষার গুরুত্ব প্রচারের জন্য, ১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস প্রতিষ্ঠা করে ইউনেস্কো। বিশ্বের ভাষা সংরক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এই দিনটি শিক্ষার্থীদের আরও ভালোভাবে বুঝতে এবং শিখতে সাহায্য করার জন্য, বিশেষ করে স্কুলগুলিতে মাতৃভাষার ব্যবহারকে উৎসাহিত করে। ভুলে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকা ভাষাগুলির পুনরুজ্জীবনকেও উৎসাহিত করে এবং সম্প্রদায়গুলিকে তাদের ভাষাগত ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে সহায়তা করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।