বীণা দাস (Picture Credits: Facebook)

বীণা দাস (Bina Das) একজন বীর স্বাধীনতা সংগ্রামী (Freedom Fighter)। ১৯১১ সালে নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আদি বাড়ি ছিল চট্টগ্রাম। তাঁর বাবা ছিলেন ব্রাহ্মসমাজী পন্ডিত ও দেশপ্রেমিক বেণী মাধব দাস ও মা সরলা দাস। তার দিদি ছিলেন বিপ্লবী কল্যাণী দাস। পিতার আদর্শে প্রভাবিত হয়ে রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামী যতীশ ভৌমিকের সঙ্গে তার বিবাহ হয়। এক বিপ্লবী পরিবারে জন্মগ্রহণ করার কারণে স্বাধীন ভারতের হয়ে লড়ার শক্তি পেয়েছিলেন পরিবার থেকে।

অসহযোগ ও জাতীয় আন্দোলনের যোগ দেওয়ার কারণে তার দাদা কারাবরণ করেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি রাজনৈতিক মনস্ক হয়ে ওঠেন। সে সময় যুগান্তর দল এর সদস্যের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়। ১৯২৮ সালে সাইমন কমিশন বয়কট করার জন্য বেথুন কলেজের ছাত্রীদের নিয়ে উঠে-পড়ে লেগেছিলেন। ১৯৩০ সালে ডালহৌসির অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জন্য ছোট ছোট দলের নেতৃত্ব দেন এবং গ্রেপ্তার হন। বীণা দাস ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র বিপ্লবের নেত্রী ছিলেন এবং ১৯৩২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এর সমাবর্তনে বাংলার ব্রিটিশ গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনের উপর পিস্তল দিয়ে গুলি চালান। এইসময় জ্যাকসনকে রক্ষা ও বীনা দাসকে ধরে ফেলার কৃতিত্ব অর্জন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার হাসান সোহরাওয়ার্দী। স্ট্যানলি জ্যাকসন ছিলেন একসময়ের ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অধিনায়ক, যিনি ২০টি টেস্ট ম্যাচ খেলেন এবং ৫টিতে অধিনায়কত্ব করেন। পরবর্তীতে কনজারভেটিভ পার্টির হয়ে নির্বাচন করে ১৯১৫ সাল থেকে ১৯২৬ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য ছিলেন। জ্যাকসনকে হত্যার এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনের কারণ বীণা দাস তার জবানবন্দীতে এভাবে ব্যাখ্যা করেন-‘I have no sort of personal feelings against Sir Stanley Jackson, the man and Lady Jackson, the woman. But the governor of Bengal represents the system of repression which has kept enslaved 300 millions of my countrymen and countrywomen.’ এই হত্যা প্রচেষ্টা চালানোর কারণে ৯ বছর কারাগারে বন্দি ছিলেন।

১৯৪১ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ কলকাতার কংগ্রেসের সম্পাদিকা ছিলেন তিনি। ১৯৪৬ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত তিনি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্য ছিলেন। নোয়াখালির দাঙ্গার পরে সেখানে তিনি রিলিফের কাজ করতেন। স্বাধীনতার পরেও সামাজিক ও রাজনৈতিক কাজে নিজেকে ব্যপ্ত রাখেন। মরিচঝাঁপি গনহত্যার সময়ও তিনি প্রতিবাদী হন। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং তার প্রভাব বীণা দাসকে ধীরে ধীরে রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। বীণা দাসের স্বামী ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামে নিবেদিতপ্রাণ যতীশ ভৌমিক। স্বামীর মৃত্যুর পর বীণা দেবী আরো বিচ্ছিন্ন হয়ে যান রাজনীতি থেকে এবং লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান। ১৯৮৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর। হরিদ্বারে গঙ্গার ঘাটে এক অজ্ঞাতপরিচয় বয়স্কা মহিলার দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। সংবাদপত্রেও খবরটি উঠেছিল। পরে অজ্ঞাতনামা নারীর পরিচয় জানা গিয়েছিল। সেই নারী ছিলেন অগ্নিকন্যা বীণা দাস।