অষ্টমী তিথি এবং নবমী তিথির সন্ধিক্ষণে হয় অষ্টমীর সন্ধিপুজো। অষ্টমী তিথির শেষের ২৪ মিনিট এবং নবমী তিথির শুরুর ২৪ মিনিট অর্থাৎ মোট ৪৮ মিনিটের মধ্যে হয় সন্ধিপুজো। এই সন্ধিপুজোর অপরিহার্য অঙ্গ হল ১০৮টি পদ্ম এবং প্রদীপ। সন্ধিপুজো ঘিরে পুরাণে একাধিক গল্প জড়িয়ে রয়েছে। কথায় আছে, রামচন্দ্রের হয়ে রাবণ বধের জন্য ব্রহ্মা দেবীর বোধন করেছিলেন আশ্বিনের কৃষ্ণা নবমী তিথিতে। আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা নবমী তিথিতে ব্রহ্মা সংকল্প নিয়েছিলেন যতদিন পর্যন্ত রাবণ বধ না হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত দেবী দুর্দার পুজো করে যাবেন ব্রহ্মা। রাবণ বধের জন্য স্থির হয় নবমীর অপরাহ্ন।
তবে এই নবমী তিথির শুরুতে কেন ১০৮ টি প্রদীপ এবং পদ্ম? পুরাণ মতে, দেবী দুর্গা এবং মহিষাসুসের মধ্যে যুদ্ধের সময় চন্ড এবং মুন্ড- অসুরের দুই সেনা মা দুর্গাকে আক্রমণ করেন। ঠিক সেই সময়ই দেবীর তৃতীয় চক্ষু থেকে এক আশ্চর্য আলোর রোশনাই ছড়িয়ে পড়ে যুদ্ধক্ষেত্রে। কথিত আছে, সেখান থেকে এক দেবীর আবির্ভাব হয়, যিনি চন্ড এবং মুন্ডকে বধ করেন; পরবর্তীকালে চামুণ্ডা রূপে আমরা সেই দেবীকে পুজো করি। অষ্টমী এবং নবমী তিথির সন্ধিক্ষণে দেবী চামুণ্ডা পূজিত হন।
আশ্বিণের ষষ্ঠী তিথিতে দুর্গাপূজোর আয়োজন করেছিলেন রামচন্দ্র। বিভীষণের বিধান ছিল ১০৮টি লালপদ্ম দিয়ে দেবীর আরাধনা করলে দুর্গা প্রসন্ন হবেন। কিন্তু পুজো করতে গিয়ে রামচন্দ্র দেখেন একটি ফুল কম। সেই সময়ে তির-ধনুক তুলে নিজের একটি চোখ উপড়ে ফেলতে চান তিনি। রামের ভক্তি দেখে দেবী নিজেই আবির্ভূত হন। সেই ঘটনার থেকেই সন্ধি পুজোর সময়ে দেবীকে ১০৮টি পদ্ম নিবেদন করা হয়। সেই থেকেই সমান সংখ্যার প্রদীপ জ্বালানো হয়৷ এজন্য সন্ধি পুজোর সময়েই দেবী মহামায়া মৃন্ময়ী মূর্তি থেকে চিন্ময়ী রূপে আসেন। ১০৮ টি প্রদীপ জ্বেলে প্রার্থনা করতে হয় যাতে দেবী সংসারের সব আঁধার মোচন করে দেন।
হিন্দু পুরাণে পদ্ম অত্যন্ত পবিত্র একটি ফুল হিসেবে মানা হয়ে থাকে। পাঁকে জন্মালেও তাঁর গুণ অনেক। নোংরার মধ্যে থেকেই বিকশিত হওয়া সম্ভব! পাশাপাশি ১০৮ সংখ্যাটিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেবতাদের থাকে অষ্টোত্তর শতনাম। শাস্ত্র মতে, সংযমী হয়ে উপবাসী থেকে সন্ধিব্রত পালন করলে নাকি যমদুখ থেকে মুক্তি মেলে। অর্থাৎ মৃত্যুর সময়ে মায়ের কৃপা লাভে যম স্পর্শ করতে পারে না। এমনকী বলা হয়ে থাকে , ভক্তিভরে সন্ধি পুজোয় যোগ দিলে সারা বছর দুর্গাপূজা না করেই সেই ফল লাভ করা যায়।আর এই পুজোয় সকলেরই যোগ দেওয়ার অধিকার রয়েছে। তবে মঙ্গল লাভ করতে হলে সত্যিকারের উপবাস প্রয়োজন।