'কালী' শব্দটি 'কাল' শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ। পুরাণ মতে, শিবেরই অপর এক নাম 'কাল'। আবার অন্য ক্ষেত্রে এই শব্দের অর্থ 'কৃষ্ণ' অর্থাৎ কালো বা 'ঘোর বর্ণ'। মহাকাব্য মহাভারতে যে ভদ্রকালীর উল্লেখ রয়েছে, তা দেবী দুর্গারই অন্য রূপ। মহাভারতে ‘কালরাত্রি’ বা ‘কালী’ নামে আরও এক দেবীর উল্লেখ পাওয়া যায়। পুরাণমতে কালীর আট রূপ- দক্ষিণকালিকা, সিদ্ধকালিকা, গুহ্যকালিকা, শ্রীকালিকা, ভদ্রকালী, চামুণ্ডাকালিকা, শ্মশানকালিকা ও মহাকালী।
কালীপুজোয় মদ এবং মাংস। উভয়েরই ব্যবহার রয়েছে। তবে শাস্ত্রে কখনও কালীপুজোতে সরাসরি মদ খাওয়ার কথা বলা হয়নি। বাংলায় মা কালীকে শ্যামাকালী কিংবা দক্ষিণাকালী হিসেবে পুজো করা হয়। মা কালীর বাঁহাতে রয়েছে নরমুণ্ড- যা থেকে চুঁইয়ে পড়ছে রক্ত এবং খর্গ। ডান হাতে রয়েছে বর এবং অভয় মুদ্রা। মা কালীর গায়ের রং ঘন নীল। শরীরে রয়েছে নরমুণ্ডের হার। কোমরে রয়েছে নরহস্তের কটিবাস। আর তাঁর বা পায়ের নীচে শায়িত শিব।
পুরাণে উল্লেখ রয়েছে তাল, খেঁজুর-সহ একাধিক গাছের থেকে যে রস নি:সৃত হয় সেটিকেই মদ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে রামকৃষ্ণ ভাণ্ডারকরের মতে, কালীর অন্য রূপ চামুণ্ডা আদতে মধ্যভারতের বিন্ধ্য অঞ্চলের অরণ্যচারী উপজাতি সমাজে পূজিত হতেন। তারা দেবী চামুণ্ডাকে পশু, নরবলি দিয়ে এবং মদ উৎসর্গ করতেন পুজোতে। এরপরে হিন্দু দেব-দেবীদের সঙ্গে দেবী চামুণ্ডার স্থান হলেও চামুণ্ডার পুজোর ক্ষেত্রে সেই নিয়ম থেকেই যায়। ঋষি বশিষ্ঠ বাংলায় মদ-সহকারে তন্ত্রসিদ্ধ দেবী চামুণ্ডার পুজোর প্রবর্তন করেছিলেন। কয়েক হাজার বছর ধরে দেবীর উপাসনা করেও সিদ্ধিলাভ করতে পারছিলেন না ঋষি বশিষ্ঠ। অবশেষে বিষ্ণুর নির্দেশে চিনে যান তিনি। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেছিলেন মদ্য-মাংস-মৎস্য-মুদ্রা-মৈথুনের সমাহারে তন্ত্রমতে দেবীর আরাধনা করা হয়।