ব্যবসায়ী রামচাঁদ শীল চন্দননগর থেকে কলকাতায় এসে গঙ্গার ধারে বাড়ি তৈরি করেন। রাজা রামমোহন রায়ের সময়ে তখন বাংলায় নবজাগরণের হাওয়া। নিরাকার না সাকার? দোটানা আর বিতর্কের মধ্যেই শীলবাড়িতে পুজো শুরু রামবাবুর। ষষ্ঠী থেকে দশমী.. হাজারো উপাচারে ঐতিহ্যগুলো নতুন হয় শীলবাড়ির অন্দরে। শক্তির উৎস প্রকৃতি। শক্তিরূপেণ দশভুজাও। চোরবাগানের শীলবাড়িতে তাই প্রকৃতিরূপে দুর্গার পুজো।
দূর্গা দালানে তৈরি হচ্ছে মাতৃ প্রতিমা, টানা চোখ, সোনালি আভায় ঠাকুরদালান আলো করে আছেন দশভুজাঃ
মুক্তরাম বাবু স্ট্রিটে মার্বেল প্যালেসের ঠিক পরেই শীলদের ঠাকুরবাড়ি ৷ এখানেই হয় তাঁদের ১৬৭ বছরের পুরনো দুর্গোৎসব ৷রামচাঁদ ও তাঁর সহধর্মিনী ক্ষেত্রমণিদেবী এই পুজোর সূচনা করেন ৷ সেটা ১৮৫৫ সাল ৷ সে বছরই প্রথম শুরু হল দোল ৷ তার ঠিক এক বছর পর ১৮৫৬-তে শুরু হয় দুর্গাপুজো ৷ বৈষ্ণব মতে পুজো হয় এখানে। ভোগে থাকে লুচি, ফল, মিষ্টি। অষ্টমীর সকালে ধুনো পোড়ান বাড়ির মহিলারা, অষ্টমীর দুপুরের গাভী পুজো এই বাড়ির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। নবমীতে কুমারী পুজোর পাশাপাশি সধবা পুজোও সেভাবে আর অন্য কোথাও দেখা যায় না। সন্ধিপুজোয় বলির বদলে ধ্যান করেন পরিবারের সদস্যরা। ষষ্ঠী থেকে নবমী নিরামিষ। বিশেষত্ব হিসেবে শুক্তোয় পাটপাতা দেওয়া হয়, থাকে পানিফল ও পাঁপড়ের ডালনা। আগে কাঁধে চেপে বিসর্জন হত প্রতিমা ৷ এখন অবশ্য গাড়িতে হয় ৷
আটপৌড়ে শাড়ি আর সোনার গয়নায় সেজে ওঠেন শীলবাড়ির মহিলারা। মুছে যাওয়া বাবুয়ানি যেন এ-কটা দিন আবার গর্জে ওঠে। পুজোর দিনগুলোতে শীলবাড়িতে পেটপুজোও জম্পেশ। দুঃস্থ পরিবার মেয়ের বিয়েতে সাহায্য চাইলে দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতীর বেনারসী আশীর্বাদের মত দিয়ে দেয় শীলপরিবার। নবজাগরণের ইতিহাস আর বনেদিয়ানার বহমানতায় পুজো জমজমাট চোরবাগানের বিশাল বাড়িটাতে।