Durga Puja 2020: দেবী মর্ত্যে নেমেই প্রথম দাঁ বাড়িতে গয়না পরতে আসেন, করোনাকালে পরিবারেই আবদ্ধ উমার আরাধনা
দাঁ বাড়ির প্রতিমা (Photo Credits: Social Media)

পুজো মানেই হাজারো আনন্দ, মজলিস, আড্ডা, দলবেঁধে ঠাকুর দেখা, সাজগোজ, প্রেম, খাওয়াদাওয়া, আরও কতকিছু। কিন্তু করোনাকালে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিংয়ের গুঁতোয় সেসবে পড়েছে বিরাট বাঁধা। বারোয়ারি পুজোতে আনন্দের রাশ টেনেছে স্বয়ং হাইকোর্ট। তবে বাড়ির পুজোয় পরিবারের সদস্যরা নিজের মতো করে আনন্দ করতে পারেন। বনেদি বাড়ির পুজোর প্রসঙ্গ এলেই আলোচনায় চলে আসে উত্তর কলকাতার জোড়াসাঁকো অঞ্চলের দাঁ-বাড়ি। দাঁ-বাড়ি দুর্গা পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নানা গল্প। কথিত আছে, এই বাড়িতে মা দুর্গা (Durga Puja) গয়না পরতে আসেন।পুজো শুরু হয় ১৮৪০ সালে। প্রতিমার জন্য একসময় নাকি শিবকৃষ্ণ দাঁ প্যারিস ও জার্মানি থেকে সোনালি রঙের ধাতুর সরঞ্জাম এনে গয়না গড়াতেন।

এই বাড়িতে এক চালার চালচিত্রে পুজো হয়। বলা হয়, মা দুর্গা যখন শ্বশুরবাড়িতে আসেন অর্থাৎ মর্ত্যে আসেন, তখন প্রথম দাঁ বাড়িতেই তিনি গয়না পরে সাজগোজ করেন। দাঁ-বাড়ির পূর্বপুরুষ বর্ধমানের গকুল চন্দ্র দাঁ। নিসন্তান গকুল দাঁ ১৮৪০ সালে কলকাতায় চলে আসেন। কলকাতায় এসে হলধর দত্তের ছোট ছেলে শিবকৃষ্ণ দত্তকে চার বছর বয়সে দত্তক দেন। সেই বছর থেকেই উত্তর কলকাতায় দাঁ-বাড়িতে পুজোর প্রবর্তন। পরিবারের প্রবীন সদস্য অসীম দাঁ বলেন, 'শোনা যায়, শিবকৃষ্ণ দাঁ নিজেকে সুন্দর দেখাতে, সর্বক্ষণ সোনার গহনা পরে থাকতে ভালোবাসতেন। সেখানে থেকে একদিন দুর্গা মাকে সোনার গহনা পরানোর ইচ্ছে জাগে। সেই থেকেই প্রচলন, মর্ত্যে দুর্গা প্রথম এই বাড়িতেই গহনা পরতে আসেন।' সেই সময়েই গহনারই বেশ কিছু এখনও রয়েছে, যা চালচিত্রে ব্যবহার করা হয়। তার সঙ্গে বর্তমান সময়ের নকশার গহনা দিয়ে এখন প্রতিমার সাজসজ্জা করা হয়। এই বাড়ির দেবী সাজসজ্জার অনেকটা অংশ জুড়ে সোনা-রুপোর কাজ রয়েছে। দেবীর পোশাকে রয়েছে সাবেকিয়ানার ছাপ। আরও পড়ুন-Durga Puja 2020: করোনার ঘায়ে মল্লিক বাড়ির পুজো এবার ব্যক্তিগত, জানালেন কোয়েল

ডাকের সাজের প্রতিমাকে সাজানো হয় সোনার গয়নায়। রথের দিন হয় কাঠামোপুজো। প্রতিপদের দিন থেকে পুজো শুরু। ষষ্ঠীর দিনে হয় বোধন। সন্ধিপুজোয় নৈবেদ্য হয় এক মণ চালের, যা সাজান বাড়ির ছেলেরা। ভোগের মিষ্টি- পান্তুয়া, গজা, মিহিদানা ইত্যাদি বাড়িতেই তৈরি হয়। এ ছাড়াও ভোগে থাকে লুচি। সন্ধিপুজোয় আজও গর্জে ওঠে কামান। দাগা হয় বন্দুক। মাত্র ১৭ ইঞ্চি লম্বা এই কামানটি সে কালে তৈরি করেছিল ‘উইনচেস্টার রিপিটিং আর্মস’ কোম্পানি। আকারে এতটুকু হলেও তার সব কিছুই আসল কামানের মতো। নবমীর দিন হয় কুমারী পুজো। তবে পরিবারের রীতি অনুসারে বাড়ির অন্য কুমারীদেরও মণ্ডপে সাজিয়ে বসানো হয়। পরিবারের সদস্যরা তাদের হাতে তুলে দেন নানা ধরনের উপহার। সপ্তমীর সকালে রুপোর ছাতা মাথায় দিয়ে গঙ্গাস্নানে যায় নবপত্রিকা। দশমীর দিন বাড়ি থেকে যখন প্রতিমা রাস্তায় বের হয়, তখনও দাগা হয় বন্দুক। তবে করোনাকালে বাড়ির লোকের মধ্যেই এবার পুজো সীমাবদ্ধ থাকবে। বিসর্জনেও এই সিদ্ধান্তের অন্যথা হবে না।