এবারের লোকসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশে বেশ কয়েকটি বড় চমক থাকল। প্রত্যাশিত ফলের আশা করা দেশবাসীকে বারবার চমকে দিল ভারতের সাধারণ নির্বাচন ২০২৪।
দেশের ৫৪৩টি লোকসভা আসনের ফলে যে সব চমক থাকল সেগুলি দেখুন এক নজরে
১) কেরলে এই প্রথম লোকসভা আসন জিতল বিজেপি। ত্রিসুর আসনে জিতলেন বিজেপি-র হেভিওয়েট নেতা সুরেশ গোপি। সুরেশ গোপি নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএমেপ ভিএস সুনীল কুমার-কে হারালেন সাড়ে ৭৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে। কেরলে ঝড় তুললেও এই আসনে তৃতীয় হলেন কংগ্রেসের হেভিওয়েট প্রার্থী কে মুরলীধরন। তবে ত্রিসুরে জিতলেও তিরুবন্তপুরমে কংগ্রেসের শশী থারুরের কাছে ১৬ হাজার ভোটে হারলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর। কেরলে কংগ্রেস জিতল ১৪টি আসনে, সিপিএম, আরএসপি ও বিজেপি ১টি করে আসনে। ২টি আসনে জিতল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ে লড়া ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ।
২) কেরলে খাতা খুললেও তামিলনাড়ু বিজেপিকে পুরোপুরি হতাশ করল। হাইপ্রোফাইল প্রচারের পরেও তামিলনাড়ুতে একটা আসনও পেল না বিজেপি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি কে আন্নামালাইও হারলেন কোয়াম্বাটোর কেন্দ্র থেকে। ডিএমকে-র গণপতি রাজকুমারের কাছে ১ লক্ষ ১৭ হাজার ভোটে হারলেন তামিলনাড়ু বিজেপির মুখ আন্নামালাই। তামিলনাড়ুতে ইন্ডিয়া জোট সব কটি আসনেই জিতল। ভরাডুবি হল এআইএডিএমকে ও বিজেপি-র। ডিএমকে ২২টি, কংগ্রেস ৯, সিপিএম ২-টি আসনে জিতল।
৩) গুজরাটে অপ্রত্যাশিতভাবে আসন জিতল কংগ্রেস। মোদী দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এই প্রথম গুজরাটে লোকসভা আসন জিতল হাত শিবির। বনাসকাঁটা লোকসভা আসনে জিতলেন কংগ্রেসের গেনিবেন নাগাজি ঠাকোর। মোদী রাজ্যে আরও দুটি তিনটি আসনে জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করেছিল হাত শিবির।
৪) ইন্দোর আসনে বিজেপি-র প্রার্থী শঙ্কর লালওয়ানি জিতলেন ১০ লক্ষ ৮ হাজার ৭৭ ভোটের ব্যবধানে। এই আসনে কংগ্রেস প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করে বিজেপিকে কার্যত ওয়াকওবার দেন। এই আসনে দ্বিতীয় হল নোটা। নোটা পেল ১ লক্ষ ৮ হাজার ৭৭ হাজার বোট। তৃতীয় স্থানে থাকা বিএসপি-র প্রার্থী সঞ্জয় সোলাঙ্কি পেলেন ৫১ হাজার ৬৫৯টি ভোট।
৫) দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ, হিমাচলপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, ত্রিপুরাতে সব কটি আসনেই জিতল বিজেপি। হিমাচলের মান্ডিতে বিজেপি প্রার্থী কঙ্গনা রানওয়াত জিতলেন অনায়াসে। ছত্তিশগড়ে ১১টি-র মধ্য়ে ১০টি-তে জিতল পদ্ম শিবির।
৬) রাজস্থান, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ডে বিজেপি বড় ধাক্কা খেল। ক মাস আগে বিধানসভা নির্বাচনে জেতা বিজেপি রাজস্থানে এবার ৮টি আসনে হারল। কংগ্রেসের ভোট শতাংশ এক লাফে অনেকটা বাড়ল। হরিয়ানায় গতবার সব আসনে জেতা বিজেপি এবার ৫টি-তে হারল। হরিয়ানায় ৫টি-তে জিতল বিজেপি, বাকি ৫টি-তে কংগ্রেস। আর ক মাস বাদে হরিয়ানায় বিধানসভা নির্বাচন। সেখানে ক্ষমতা ধরে রাখা কঠিন হবে বিজেপির কাছে। জেলবন্দি হেমন্ত সোরেনের রাজ্যে বিজেপি হারল ৬টি আসনে। যেখানে তারা সব আসনে জেতার আশা করেছিল।
৭) মুম্বই উত্তর পশ্চিম কেন্দ্রে একনাথ শিন্ডের শিবসেনা প্রার্থী রবীন্দ্র দত্তরাম ওয়াইকার মাত্র ৪৮টি ভোটে হারালেন উদ্ধভ বালাসাহেব ঠাকরের শিবসেনার প্রার্থী আমোল গুঞ্জন কৃতিকার। জয়ী প্রার্থী পান ৪ লক্ষ ৫২ হাজার ৬৪৪টি ভোট। আর দ্বিতীয় স্থানে থাকা প্রার্থী পান ৪ লক্ষ ৫২ হাজার ৫৯৬টি ভোট। এখানে উদ্ভব ঠাকরের দলের হারে বড় ভূমিকা নিলেন তৃতীয় স্থানে থাকা বঞ্চিত বহুজন আগাড়ির পরমেশ্বর অশোক রানশুর। প্রকাশ আম্বেদকরের পার্টির নেতা পরেমেশ্বর পেলেন ৪ লক্ষ ৪২ হাজার ৫৯২টি ভোট।
৮) অযোধ্যায় রাম মন্দিরের কেন্দ্র ফৈয়জাবাদে হেরে গেলেন বিজেপি প্রার্থী লাল্লু সিং। এখান থেকে সাড়ে ৫৪ হাজার ভোটে জিতলেন সমাজবাদী পার্টির নেতা আওয়াদেশ প্রসাদ।
৯) তামিলনাড়ুর মত পঞ্জাবেও কোনও আসনে জিতল না বিজেপি। পঞ্জাবের ১৩টি আসনের মধ্যে ৭টি-তে জিতল রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস, তিনটিতে রাজ্যের শাসক দল আপ, ১টি-তে শিরমণি অকালি দল। বাকি দুটি আসনে জয় পেল নির্দল। গতবার বিজেপির তারকা প্রার্থী সানি দেওলের জেতা কেন্দ্র গুরুদাসপুরে ৮২ হাজার ভোটে জিতলেন কংগ্রেসের সুখবিন্দর সিং রানধাওয়া।
১০) গতবারের জেতা লাদাখে এবার বিজেপি তৃতীয় হল। সেখানে ২৭ হাজার ভোটে কংগ্রেসের প্রার্থীকে হারালেন জিতল নির্দল হয়ে দাঁড়ানো মহম্মদ হানিফ। অভিনেত্রী কিরণ খেরের ছেড়ে যাওয়া আসন চণ্ডিগড়ে দশ বছর পর জয় পেল কংগ্রেস। সেখানে আপের সমর্থনে আড়াই হাজার ভোটে বিজেপির সঞ্জয় ট্যান্ডনের বিরুদ্ধে জিতলেন কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারি।