Narendra Modi , Arvind Kejriwal. (Photo Credits: X)

পার্থ প্রতিম চন্দ্র: সব দিকে সফল নরেন্দ্র মোদীর রাজনৈতিক জীবনের একটা বড় কাঁটা দূর হল। ইতিহাস গড়ে টানা তিনবার দেশের প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসেছেন। দেশের বেশীরভাগ রাজ্যেই তার সরকার। উত্তর ভারতে কংগ্রেস পুরোপুরি মুক্ত হয়ে গিয়েছে তাঁর জাদুতে। পশ্চিম ভারতেও তাঁর ম্যাজিক পুরোপুরি কাজ করেছে। পূর্ব ভারতেও বাংলা ছাড়া মোদীময়। কিন্তু এত ঐতিহাসিক সাফল্যের পরেও খোদ দেশের রাজধানীতেই জিততে পারছিলেন না মোদী। দেশের মসনদে বসার পর একের পর এক নির্বাচনী সাফল্যের মাঝে দিল্লি বারবার কাঁটা ছিল মোদী-অমিত শাহ-র কাছে। অবশেষে সেই কাঁটা দূর হল।

২৭ বছর পর দিল্লিতে বিজেপি সরকার

কেজরিওয়ালের জনপ্রিয়তাকে একেবারে ম্লান করে সুকৌশলে দিল্লিতে ডবল ইঞ্জিন সরকার গড়লেন মোদী-শাহ। লোকসভা ভোটে মহাধাক্কার পর হরিয়ানা থেকে মহারাষ্ট্রের পর এবার দিল্লিতেও বড় জয় পেল বিজেপি।

আরও পড়ুন-ধুমকেতুর মত উত্থান, উল্কার গতিতে পতন, কেজরিওয়ালের এক যুগের রাজনৈতিক জীবন এবার কোন পথে

 

কীভাবে দিল্লিতে জয় পেল বিজেপি? দেখে নেওয়া যাক--

১) কেজরিওয়ালকে কেজরিওয়ালের অস্ত্রেই বধ:

গত তিনটি লোকসভা ভোটে দিল্লির সব কটি আসনেই জিতেছিল বিজেপি। ফলে দিল্লিতে বিজেপির ভোটব্যাঙ্ক মজবুত, অটুট ছিলই। কিন্তু এরপরেই বিধানসভা ভোটে বারবার পরাজয়ের পিছনে কেজরিওয়ালের ব্যক্তিগত ক্যারিশ্মার কাছে ম্লান হওয়াটাই বড় কারণ ছিল। আর দিল্লিবাসীর কেজরি প্রীতির সবচেয়ে বড় দুটি কারণ ছিল তাঁর ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি ও জনমুখি প্রকল্প। এই দুটিতেই আপ-কে বড় ধাক্কা দিয়েই দিল্লিতে অধরা মাধুরী পেয়ে গেল বিজেপি। আবগারি কাণ্ডের অভিযোগে কেজরিওয়াল, মণীশ সিসোদিয়ার জেলে যাওয়াটা বড় সবিধা করে দেয় বিজেপি। এর ফলে কেজরির স্বচ্ছ ভাবমূর্তিতে ধাক্কা পাওয়ায় ভোট রাজনীতিতে বড় সুবিধা পেয়ে যায় পদ্ম শিবির। এরপর দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের মুখে ইস্তেহারে আড়াই হাজার টাকার মহিলা ভাতা থেকে বেকারদের চাকরীর ঢালাও প্রতিশ্রুতিতে কেজরির চালকে বাজিমাত করে সাফল্য পেল বিজেপি।

২) অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া:

দিল্লিতে ২০১৫ ও ২০১৯- পরপর দুটি বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছিল বিজেপি। ২০১৫-তে নামজাদা আমলা কিরণ বেদি আর ২০২০ বিধানসভা ভোটে ভোজপুরী নায়ক তথা সাংসদ মনোজ তিওয়ারি-কে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করে লড়ে বাজিমাত করতে গিয়ে কেজরিওয়ালের কাছে পরাস্ত হন মোদী-শাহ-রা। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে বিজেপি বুঝেছিল, এবার আর কাউকে মুখ্যমন্ত্রী মুখ না করে, মোদীর উন্বয়ন অস্ত্রেই বাজিমাত করতে হবে। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েই এবার বাজিমাত করল বিজেপি।

৩) স্থানীয় নেতাদের গুরুত্ব দেওয়া:

দিল্লিতে গত দুটি বিধানসভা ভোটে স্থানীয় নেতাদের সেভাবে গুরুত্ব না দেওয়ার ফল ভুগেছিল বিজেপি। এবার শুধু সাংসদ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের নয় এলাকা, অঞ্চল ধরে ধরে স্থানীয় নেতাদের আলাদা আলাদা দায়িত্ব দিয়ে ২৭ বছর পর দিল্লিতে সরকার গড়তে চলেছে গেরুয়া শিবির। লোকসভা ভোটের পর থেকেই দিল্লিতে স্থানীয় নেতাদের নিয়ে বিধানসভাভিত্তিক অঞ্চল নিয়ে প্রস্তুতি করেছিল বিজেপি। সঙ্গে প্রার্থী তালিকায় হেভিওয়েট নয়, স্থানীয় জনপ্রিয় নেতাদেরই গুরুত্ব দিয়েছিল পদ্মশিবির। আর সেইসবেরই সুফল মিলল।

৪) প্রচারে লক্ষ্য স্থির রাখা:

গত দুটি বিধানসভা নির্বাচনে শুধু নরেন্দ্র মোদীর সরকারের কথা বলেই দিল্লি বিধানসভায় প্রচার করেছিল বিজেপি। এবার দিল্লিবাসীর অসুবিধা, যমুনার দূষণ, কেজরি সরকারের ব্যর্থতার কথাই বিজেপির হাইপ্রোফাইল প্রচারে মূল ফোকাসে ছিল।

৫) হরিয়ানা, মহারাষ্ট্রে মহাজয়ের ঢেউটা দিল্লিতেও নিয়ে আসা:

হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্র বিধানসভা ভোটে একেবারে অপ্রত্যাশিত সাফল্য পেয়েছিল বিজেপি। হরিয়ানা, মারাঠা ভূমের নির্বাচনী ঢেউটা খুব সুকৌশলে দিল্লিতে নিয়ে এসে কেজরিওয়ালকে সিংহাসনচ্যুত করেলেন মোদী-শাহ। দিল্লির প্রচারে বরাবার বিজেপি বলেছিলে, হুডা, শরদ-উদ্ধভদের পর এবার কেজরিওয়ালের পালা। এই স্লোগান বিজেপি নিচুস্তরের কর্মীদের মনোবল অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছিল। সঙ্গে আপ কর্মীদের মনে শঙ্কা এনেছিল।