![](https://bnst1.latestly.com/uploads/images/2024/09/1-144435601.jpg?width=380&height=214)
পার্থ প্রতিম চন্দ্র: 2013- 2025। ১২টা বছর। একটা যুগ। ধুমকেতুর মত উত্থানের পর অবশেষে উল্কার গতিতে পতন হল রাজনীতিবিদ অরবিন্দ কেজরিওয়ালের। নয়া দিল্লি বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী শীলা দিক্ষীত-কে হারিয়ে চমকপ্রদ উত্থান হয়েছিল কেজরির, বড় সাফল্য থেকে বড় ব্যর্থতার বৃত্তটা এবার সম্পূর্ণ হল পরবেশ ভর্মার কাছে সেই আসনে হেরেই। শুধু দল নয়, নিজেও হারলেন কেজরি।
আন্না হাজারের মঞ্চ থেকে উত্থান
সমাজসেবক আন্না হাজারের দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনের মঞ্চ থেকে দাপুটে আমলা থেকে রাজনীতিবিদ অরবিন্দ কেজরিওয়ালের জন্ম হয়েছিল। আন্না হাজারের বিক্ষোভ মঞ্চে জড়ো হওয়া মানুষদের নিয়ে বিজেপি ও কংগ্রেসের সঙ্গে সম-দূরত্ব রেখে আম আদমি পার্টি শুরু করেছিলেন কেজরিওয়াল। দলের প্রতীক চিহ্ন করেছিলেন ঝাড়। স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, ঝাড়ু বা ঝাঁটা দিয়ে সব দুর্নীতি ঝেরে ফেলে রাজনীতিবিদ নয়, আম জনতার সরকার গড়া হবে।
দুর্নীতিমুক্ত রাজনীতির প্রতিশ্রুতি
কেজরি বলেছিলেন, দুর্নীতিমুক্ত ভিন্নধারার রাজনীতির কথা। কেজরিওয়ালের দেখানো স্বপ্নে ভর করে রাজনীতি থেকে শত হস্তে দূরে থাকা তরুণ প্রজন্ম, মহিলা, মধ্যবিত্তরা আপে যোগ দিয়েছিলেন। দিল্লিতে প্রথম নির্বাচনেই একেবারে চমকে দিয়েছিলেন কেজরিওয়াল। নয়া দিল্লি আসন থেকে কংগ্রসের ১৫ বছরের মুখ্যমন্ত্রী শীলা দিক্ষীতকে হারিয়ে দিয়ে রাজনীতিবদ কেজরিওয়ালের পথ চলা শুরু হয়েছিল। ২০১৩-তে একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা না থাকায় সরকার গড়তে পারেননি আপ। কারও কাছে ম্যাজিক ফিগার না থাকায় ২০১৫-তে দিল্লিতে ফের বিধানসভা নির্বাচন হয়।
শীলা দিক্ষীতকে পরাস্ত
এবার কেজরিওয়ালকে রেকর্ড ভোটে ও আসনে জিতিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসান দিল্লিবাসী। ২০১৩ বিধানসভায় প্রথমবার লড়ে আপ জিতেছিল ২৭টি আসন, সেখানে ২০১৫-তে দিল্লির ৭০টি আসনের মধ্যে আপ জেতে ৬৭টি-তে। কেজরিওয়াল নিজেও নয়া দিল্লি আসনে তার জয়ের মার্জিন বাড়িয়ে নেন। দিল্লিতে সরকার গড়ে বিনামূল্যে জল, বিদ্যুতের মত পরিষেবা দিয়ে ২০২০ বিধানসভায় নিজের জনপ্রিয়তা ধরে রাখেন কেজরিওয়াল।
২০২০ বিধানসভা ভোটে বড় সাফল্য
২০২০ দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে ৭০টি-র মধ্যে কেজরির দল জেতে ৬৩টি আসনে। দেশের রাজধানী শহরে কেজরিওয়ালের কাছে ব্র্যান্ড মোদী ফিকে পড়ে যায়। কিন্তু এরপর আপ সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ, খোদ মুখ্যমন্ত্রী-উপমুখ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের জেলে যাওয়া কাণ্ডে কেজরিওয়ালের ভাবমূর্তিতে বড় ক্ষতি হয়ে যায়। জামিনে মুক্ত হয় মুখ্যমন্ত্রী পদ ছাড়লেও কেজরি নিজের ভাবমূর্তি বাঁচাতে পারেননি।
২০২২ পঞ্জাব নির্বাচনে জয়
দিল্লি ছাড়িয়ে পঞ্জাবেও কেজরিওয়ালের দল সরকার গড়েছিল। কংগ্রেস সরকারকে ধরাশায়ী করে পঞ্চনদের দেশে গঠিত হয়েছিল আপ সরকার। ২০২২ পঞ্জাব বিধানসভায় ১১৭টি-র মধ্যে ৯২টি আসনে জিতে প্রথমবার ক্ষমতায় এসেছিল আপ। দিল্লি ও পঞ্জাবে সরকার গড়ে কেজরিওয়াল দলকে গোটা দেশে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন।
কেন ব্যর্থতা
বিজেপির আক্রমণাত্মক রাজনীতির সামনে দলকেও সেভাবে সামলাতে পারেননি কেজরি। দলের অনেক নেতাই অনুযোগ করে বলেছিলেন, কেজরি আর আগের মত সবার কথা শোনে চলেন না। শেষ পর্যন্ত, নিজের কেন্দ্রে হেরে কেজরিওয়ালের রাজনৈতিক জীবনের প্রথম অধ্যায়টা শেষ হল। এবার ২০২৭ সালে পঞ্জাব সামলে যদি পাঁচ বছর পর ফের দিল্লিতে ক্ষমতায় ফিরতে পারেন, সেটা হবে কেজরিওয়ালের দ্বিতীয় অধ্যায়ের কথা।
দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে কেজরিওয়ালের ইতিহাস:
২০১৩ বিধানসভা- প্রথমবার লড়ল আপ
মোট আসন: ৭০
আপ: ২৮
বিজেপি: ৩১
কংগ্রেস: ৮
নয়া দিল্লি আসনে কেজরিওয়াল ২৫ হাজার ৮৬৪ ভোটে হারালেন কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী শীলা দিক্ষীতকে
২০১৫ বিধানসভা নির্বাচন- প্রথমবার ক্ষমতায় এল আপ
মোট আসন: ৭০
আপ: ৬৭
বিজেপি: ৩
কংগ্রেস: ০
নয়া দিল্লি আসনে কেজরিওয়াল সাড়ে ৩১ হাজার ভোটে হারালেন বিজেপি নেত্রী নুপুর শর্মা-কে
২০২০ বিধানসভা নির্বাচন- মসনদে ফিরলেন কেজরিওয়াল
মোট আসন: ৭০
আপ: ৬৩
বিজেপি: ৭
কংগ্রেস:০
নয়া দিল্লি আসনে কেজরিওয়াল সাড়ে ২১ হাজার ভোটে হারালেন সুনীল যাদবকে
২০২৫ বিধানসভা নির্বাচন- ভরাডুবি আপের, নিজের আসনেও হারলেন কেজরিওয়াল
মোট আসন: ৭০ (গণনা চলছে)
আপ: ২৪ (এগিয়ে)
বিজেপি: ৪৬ (এগিয়ে)
কংগ্রেস: ০
নয়া দিল্লি আসনে কেজরিওয়াল ৪ হাজার ৮৯ ভোটের ব্যবধানে হারলেন বিজেপির পরবেশ ভর্মা-র বিরুদ্ধে।