গুয়াহাটি, ১২ ডিসেম্বর: নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলকে কেন্দ্র করে বুধবার দিনভর উত্তপ্ত ছিল অসম। গোটা রাতও বিক্ষোভের আঁচ থেকে রেহাই পায়নি গুয়াহাটি। ভোর তিনটে পর্যন্ত সেনার (Indian Army) টহলদারি কার্ফিউ অগ্রাহ্য করেই বিক্ষুব্ধ জনতা পথে নেমে প্রতিবাদে শামিল হয়েছে। গাড়ি জ্বালিয়েছে, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করেছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে বৃহস্পতিবার কাকভোরে গুয়াহাটি শহরজুড়ে ফ্ল্যাগ মার্চ (flag march) করল সেনাবাহিনী। এদিকে বিভিন্ন আদিবাসী অধিকার রক্ষার সংগঠন থেকে শুরু করে ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন সংগঠনও রাতভর পথে নেমে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। পরিস্থিতির উপরে সর্বদা নজর রাখছে প্রশাসন। কারফিউ ফের বাড়ানো হয়েছে। রাজ্যজুড়ে অশান্তি এড়াতে চারজনের জমায়েতও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এদিকে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা ২৪ ঘণ্টার জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তবে পরিস্থিতির যা হাল তাতে এই নিষেধাজ্ঞাও অনির্দিষ্ট কালের জন্য বাড়িয়ে দেওয়া হল। তাইতো বৃহস্পতিবার কাকভোরে ১৫০ সেনাকর্মী দুই দলে ভাগ হয়ে গুয়াহাটির রাজপথে টহল দিলেন। মূলত সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করে যাতে বিক্ষোভকারীরা পথে নেমে অশান্তি না করতে পারে তাই রুখতেই এই ফ্ল্যাগ মার্চের আয়োজন করা হয় সেনার তরফে। বুধবার সন্ধ্যা সাতটা থেকেই অসমের তিনসুকিয়া, কামরূপ, গোলাঘাট, দিসপুর, ধেমাজি, শিবসাগর, জোরহাট-সহ একাধিক জায়গায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা। ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে নানারকম গুজব ছড়ানোর আশঙ্কায় অসম সরকারের মিনিস্ট্রি অফ হোম অ্যাফেয়ার্স-এর তরেফ জারি করা হয়েছে এই নিষেধাজ্ঞা। আপাতত আগামী ২৪ ঘণ্টা থাকবে এই নিষেধাজ্ঞা। ত্রিপুরাতেও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট ও মোবাইল পরিষেবা। আপাতত উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে মোট ৫ হাজার আধা সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। অসমে এদিন দিসপুর, গুয়াহাটি, ডিব্রুগড় এবং জোরহাটে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে। কয়েকজন মহিলা-সহ আহত হয়েছেন ২৫ জন। তাঁদের মধ্যে সাংবাদিক ও টিভি চ্যানেলের কর্মীরাও আছেন। আরও পড়ুন-CAB Protest: নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে উত্তপ্ত অসম, মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়ালের বাড়িতে পাথর বৃষ্টি, আগুনে জ্বলল ছাবুয়া-পানিতোলা রেল স্টেশন
Just got back home. Entire city has come to a standstill. Had to navigate routes where protestors were fewer. Hard to believe this is happening in a bustling metropolis like Guwahati but the anger is genuine and looks like it's only going to spread like wildfire. pic.twitter.com/k3N6SEdvnu
— Makepeace Sitlhou (@makesyoucakes) December 11, 2019
ছাত্র-ছাত্রীরা গুয়াহাটির রাজপথে নেমে পড়েছে। হাত কেটে পোস্টার লেখার কাজ চলছে। এই প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন প্রচুর মানুষ। অসমের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী জুবিন গর্গ আজ গুয়াহাটিতে পথে নামার ঘোষণা করেছেন। ছাত্র-ছাত্রীদের এই আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছেন উত্তর-পূর্বের বহু বিখ্যাত ব্যক্তি। এদিকে ক্ষোভের রোষ যে কেবল মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়ালের বাড়িতে আছড়ে পড়েছে তাই নয়। বাদ যায়নি গুয়াহাটির বিজেপি সাংসদ কুইন ওঝার বাড়িও। ভাঙচুর চালিয়ে বাড়ির উঠোনেই তাঁর কুশপুতুল পোড়ায় জনতা। বহু মানুষ উলঙ্গ হয়েও রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।