কলকাতা, ৩০ জুলাই: প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর দলের সভাপতির বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মন্তব্য অধীর চৌধুরী (Adhir Chowdhury)-র। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের নাম নিয়ে ঘুরিয়ে কটাক্ষ করলেন অধীর। বহরমপুরের সিংহাসন হারা বাদশা ঘুরিয়ে কী হাত ছাড়ার বার্তাই দিলেন? তা নিয়েই জোর জল্পনা বঙ্গ রাজনীতিতে। এদিন বহরমপুরের প্রাক্তন সাংসদ অধীর চৌধুরী বললেন, " যেদিন থেকে মল্লিকার্জুন খাড়গে কংগ্রেস সভাপতি হয়েছেন, তখন থেকেই দলের সংবিধান অনুযায়ী দেশের বাকি সব পদ অস্থায়ী হয়ে গিয়েছে। এমনকী আমার পদও অস্থায়ী হয়ে গিয়েছিল। নির্বাচন চলাকালীন মল্লিকার্জুন খাড়গে টিভিতে সাফ বলেছিলেন, প্রয়োজনে আমাকে সরানো হবে। যেটা আমায় হতাশ করেছিল। বাংলায় দলের ফল ভাল হয়নি। যদিও আমি বাংলায় দলের অস্থায়ী সভাপতি ছিলাম। সেই সময় আমি খাড়গে-জিকে বলেছিলাম সম্ভব হলে আমার পরিবর্তে দায়িত্বে অন্য কাউকে আনা হোক।"
এরপর অধীর বলতে থাকে, "এর মধ্যে আমায় এআইসিসি থেকে জানানো হয়েছিল বাংলায় কংগ্রেস নেতারা বৈঠক করে দুটি রেজোলিউশন এনেছে। আমি জানতাম সেই বৈঠকটা আমার সভাপতিত্বেই হবে, এবং আমিই বঙ্গ কংগ্রেসের প্রধান। কিন্তু বৈঠকের মাঝে দেখি গুলাম আলি মীর বৈঠকটির সভাপতিত্ব করছেন, আমায় উনি প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে অ্যাখা দিচ্ছেন। সেই সময়ই আমি জেনেছিলাম, আমি প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি ছিলাম।"
আরও পড়ুন-জামিন পেলেন অনুব্রত মণ্ডল, কী শর্ত দিল সুপ্রিম কোর্ট
দেখুন ভিডিয়ো
#WATCH | Congress leader Adhir Ranjan Chow says, "...The day Mallikarjun Kharge became the party president, all other posts of the party in the country became temporary, according to the Constitution of the party. Even my post became temporary...While the election was… pic.twitter.com/FeNrNxg2zy
— ANI (@ANI) July 30, 2024
প্রসঙ্গত, লোকসভা নির্বাচন চলাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তোপ দাগায় ইন্ডিয়া জোটের নেতাদের মধ্যে অধীর চৌধুরীকে নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়। মমতাকে নিয়ে করা অধীরের মন্তব্যে লোকসভা ভোট চলাকালীন বিজেপি সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে সুবিধা পেয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করেছিলেন ইন্ডিয়া জোটের নেতারা। সেই সময়ই অধীর চৌধুরীকে প্রয়োজনে বঙ্গ কংগ্রেসের দায়িত্ব থেকে সরানো হবে বলে হুমকি দিয়েছিলেন সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জন খাড়গে। বহরপুর লোকসভা আসন থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের তারকা ক্রিকেটার প্রার্থী ইউসুফ পাঠানের কাছে হেরে যান অধীর। ১৯৯৮ লোকসভা থেকে তিনি টানা বহরমপুর থেকে জিতে আসছেন। এবার বাংলা থেকে কংগ্রেস একমাত্র মালদা দক্ষিণ লোকসভা আসনটি জেতে। অধীর গড় সহ বাকি সব জায়গাতেই কংগ্রেসের ভরাডুবি হয়। অথচ গোটা দেশ জুড়ে রাহুল গান্ধীর হাওয়ায় কংগ্রেস ৯৯টি আসন জেতার পাশাপাশি ভোট ভাল হয়। কিন্তু বামেদের সঙ্গে জোট গড়ে অধীরের নেতৃত্বে লড়ে বাংলায় কোনও লাভই হয়নি কংগ্রেসের। দু বছর পরেই বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনের আগে বঙ্গ কংগ্রেসের সংগঠন পুরোপুরি ঢেলে সাজাতে চান খাড়গে-রাহুল। শুধু বাম জোটের ভরসা নয়, বঙ্গ কংগ্রেস নেতাদের সরাসরি মানুষের কাছে পৌঁছনোর নির্দেশ দিতে চলেছে এআইসিসি। বঙ্গ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে অল্প বয়সী, লড়াকু নেতার দিকেই ঝুঁকতে পারে কংগ্রেস হাইকমান্ড।
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বহরমপুর থেকে জয়ের পর এআইসিসি-র কাছে অধীরের গুরুত্ব অনেকটা বেড়ে গিয়েছিল। অধীরকে লড়াকু নেতা সম্বোধন করে বিরোধী দলনেতাও করেছিলেন সোনিয়া। বহরমপুরের সাংসদের প্রশংসাও করতে শোনা গিয়েছে রাহুল গান্ধীকেও। কিন্তু ইন্ডিয়া জোট হওয়ার পর রাহুল-মমতাদের মধ্যে যত ঘনিষ্ঠতা হয়েছে, ততই অধীর যেন কেমন গুটিয়ে গিয়েছেন। সর্বভারতীয় নেতা হিসেবে নয়, বহরমপুরের সাংসদ-নেতা হিসেবেই অধীরকে বারবার বক্তব্য দেখা গিয়েছে।