রাজ্যে বিজেপির দারুণ ফল। (File Photi)

কলকাতা, ৩০মে:  ঝড় তুলে পশ্চিমবাঙলা (West Bengal) -য় ১৮টা আসন জিতে চমকে দিয়েছে বিজেপি। দেশজুড়ে চলা নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)- ঝড়ের সঙ্গে, মুকুল রায় (Mukul Roy) -দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)- র স্ট্র্যাটেজি, রাজ্যে শাসক দলের ওপর মানুষের চাপা ক্ষোভ ও তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়ে বিজেপির আসন ও ভোট শেয়ার একলাফে অনেক অনেক বেড়ে গিয়েছে। বাইরে থেকে বোঝা না গেলেও বিজেপি-নেতারা বুঝেছিলেন বাংলা থেকে অনেক আসন আসবে।

বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ রাজ্য নেতাদের টার্গেট দিয়েছিলেন ২৩টি আসনে জেতার। শেষ অবধি অবশ্য বাঙলায় ২৩টা আসনে না জিতলেও, মুকুল রায়-দিলীপ ঘোষরা যেভাবে কার্যত অসম্ভবকে সম্ভবকে পরিণত করেছেন তাতে কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। উত্তরবঙ্গে রাজ্যের শাসক দলকে মুছে দিতে পেরেছে বিজেপি (BJP)। দার্জিলিং (Darjeeling) য়েও গড় ধরা রাখা গিয়েছে। আসানসোল (Asansol) মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় (Babul Supriyo) -র ম্যাজিক অব্যাহত থেকেছে। বর্ধমান (Burdwan), পুরুলিয়া (Purulia) জেলাতেও দাপট দেখিয়েছে বিজেপি। এমনকি সিঙ্গুরর মত কেন্দ্র থাকা হুগলিতেও জয় পেয়েছে মোদির দল। তবু এর পরেও রাজ্য বিজেপি নেতাদের একটা আফশোস থাকছে। ভোটের ফল বিশ্লেষণ করে বিজেপি নেতারা দেখছেন-১৮ নয় আর একটু চেষ্টা করলে, শাসক দলের সন্ত্রাস রোখা গেলে আরও আসন বাড়ত। এমনকি তৃণমূলকে ছাপিয়েও যাওয়া যেত।

দেখে নিন কোনও কোন আসন নিয়ে বিজেপি-র আফশোস আছে--

১) আরামবাগ (Arambagh)

এই লোকসভার কোনও বিধানসভা কেন্দ্রেই বিজেপি-র অস্তিত্ব ছিল না। গতবার মোদি হাওয়ার মাঝেও বিজেপি এখানে মাত্র ৬ শতাংশ ভোট পেয়ে জামানত জব্দ হয়েছিল। সেখানে এবার তৃণমূল প্রার্থী অপরূপা পোদ্দারের জয় একেবারে কঠিন করে দিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী তপন রায়। ভোট গণনার বেশ খানিকটা সময় এগিয়েও ছিলেন বিজেপি প্রার্থী। শেষ অবধি জেতেন তৃণমূল এখানে জেতে মাত্র ১,১৪২ ভোটের ব্যবধানে। যেখানে গতবার তৃণমূল প্রার্থী অপরূপা পোদ্দার এখানে জিতেছিলেন প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ ভোটে। ভোটের ব্যবধানে গোঘাট ও পুরশুড়া বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের ভরাডুবি হয়েছে। আরামবাগ, , তারকেশ্বর ও হরিপাল, চন্দ্রকোণায় লিড পেয়েছিল তৃণমূল। তবে জয়-পরাজয়ে বড় ফারাক গড়ে দেয় খানাকুল। খানাকুল গোটা রাজ্যে পরিচিত সন্ত্রাসের জন্য। বিজেপি-র অভিযোগ এখানে তৃণমূল সন্ত্রাস না করে মানুষকে ভোট দিতে দিলে আরামবাগে এবার পদ্ম ফুল ফোটা নিশ্চিত ছিল।

২) দমদম (Dum Dum)

জনসমীক্ষায় মনে করা হয়েছিল দমদমে জিততে পারে বিজেপি। গোটা রাজ্যে বামেদের ভোট বিজেপি-র পক্ষে গিয়েছে। সেটা যদি দমদমেও হত তাহলে ফলটা অন্যরকম হলেও হতে পারত। কড়া টক্করের পর বিজেপি-র শমীক ভট্টাচার্যকে ৫৩, ৪৩৭ ভোটে হারিয়ে জয়ী হন তৃণমূলের অধ্যাপক প্রার্থী সৌগত রায়। বিজেপি-র রাজ্য নেতাদের অনেকেই মনে করছেন, আর একটু চেষ্টা করলে, তৃণমূলের সন্ত্রাস রোখা গেলে দমদমে বিজেপির জয় নিশ্চিত ছিল।

৩) ঘাটাল (Ghatal)

ঘাটালে তৃণমূলের তারকা প্রার্থী দেব এবার লক্ষাধিক ভোটে জিতলেও বিজেপি-র অনেকেই মনে করছেন, এই জয়ের বড় কারণ সন্ত্রাস। ভোটের দিন আক্রান্ত হয়েছিলেন বিজেপি-র প্রার্থী ভারতী ঘোষ। ভারতী অভিযোগ ছাপ্পা ভোট না হলেও দেবকে হারানো যেত। প্রসঙ্গত, দেবের ভোটে জয়ের মার্জিন এক ধাক্কায় অনেকটা কমে যায়। যেখানে বিজেপি গতবার এখানে চতুর্থ স্থানে থেকে মাত্র ৯৪ হাজার ভোট পেয়েছিল, সেখানে এবার ভারতী ঘোষ পেয়েছেন ৬ লক্ষ ভোট।

৪) কলকাতা  উত্তর (Kolkata North )

অনেক আশা করলেও এবারও উত্তর কলকাতা জিততে পারল না বিজেপি। এবারও এই লোকসভার দুটি বিধানসভা আসনের অন্তত তিনটি চমকপ্রদ ফল করেও তৃণমূলের সুদীপ ব্যানার্জির কাছে বিজেপি-র রাহুল সিনহা হারলেন ১,২৭ হাজার ভোটে। বামেদের ভোট রাহুলের ঘরে এলেও লাভ হয়নি। তবে বিজেপি-র অভিযোগ এই লোকসভায় যে জায়গাগুলোতে তৃণমূল আকাশছোঁয়া লিড পেয়েছে তার পিছনে আছে চাপা সন্ত্রাস, মানুষ ভোট দিতে পারেনি। সেটা না হলে নাকি এবার সুদীপ গড়ে পদ্ম ফুটত।

৫) ডায়মন্ড হারবার (Diamond Harbour)

এই কেন্দ্রে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক ব্যানার্জি দাঁড়ালেও বিজেপি ভাল ফাইট দেয়। এই লোকসভার কোনও বিধানসভা কেন্দ্রেই বিজেপি-র প্রভাব নেই, অনেক জায়গাতে এজেন্ট পর্যন্ত দিতে পারেনি, তবু ভাল ফল হয়। বিজেপি প্রার্থী এখানে ৪ লক্ষ ৭০ হাজার ভোট পান। শেষ অবধি অভিষেক ৩ লক্ষেরও বেশি ভোটে জিতলেও বিজেপি-র দাবি নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে ফল উল্টোও যেতে পারত।