লোকসভা ভোটে হোঁচট খেয়ে কোনওরকমে ক্ষমতায় ফিরে চাপে পরে গেলেও, মাস চারেক পর মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানা অপ্রত্যাশিত বড় জয়ের ফলে ২০২৪ সালটা দারুণ গেল বিজেপির। কিন্তু দেকিন্তু সেখান থেকে বেশী আসন থেকে জেতার কথা লোকসভায় বঙ্গে বিজেপির আসন সংখ্যা ১২-তে নেমে গিয়েছে। লোকসভার পর হওয়া গত কয়েক মাসে রাজ্যের ১০টি বিধানসভা উপনির্বাচনেও বিজেপি শূন্য হয়ে গিয়েছে। তৃণমূলের গড়ে আঁচড় কাটা তো দূরে থাকা মাদারিহাট, রায়গঞ্জ, বাগদার মত নিজেদের মজুবত জমিতেও দিদি ঝড়ে উড়ে গিয়েছে বিজেপি। মানিকতলা, হাড়োয়া, সিতাই, নৈহাটির মত আসনে বিজেপির ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়েছে তৃণমূল। সন্দেশখালি ইস্যু নিয়ে আন্দোলন করতে গিয়ে স্টিং অপারেশন কাণ্ডে পুরোপুরি ব্যাকফুটে চলে যেতে হয়েছে শুভেন্দু অধিকারীদের। আরজি কর আন্দোলন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-কে একেবারে চাপে ফেলে দিলেও, দেশের অন্যান্য বিজেপি শাসিত রাজ্যেও ধর্ষণের ঘটনার ফলে বঙ্গ ভোটব্যাঙ্কে কোনও সুবিধা পাচ্ছে না পদ্ম শিবির।
মমতা সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা নানা বড় দুর্নীতির অভিযোগ, তৃণমূলের বড় নেতা-মন্ত্রীরা দুর্নীতি কাণ্ডে জেল খাটা, রাজ্যে কর্মসংস্থানের খারাপ অবস্থা, আইনশৃঙ্খলার ক্রমশ অবনতি, নারী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন, শিল্পে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ার মত ইস্যুতে বিজেপি বাংলায় প্রথমবার ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখছিল। কিন্তু অসম, ত্রিপুরা, ওডিশা সহ পূর্ব ভারতের একে একে রাজ্যে প্রথমবার ক্ষমতায় আসার স্বাদ পেলেও বাংলায় বারবার ব্যর্থ হচ্ছে বিজেপি। ২০১৬, ২০২১-টানা দুটি বিধানসভা নির্বাচনে মমতার কাছাকাছিই আসতে পারেনি পদ্ম শিবির। ২০২১ বিধানসভা ভোটের আগে মমতা মন্ত্রিসভার দুই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়-কে নিজেদের দিকে টেনে নিয়ে বাজিমাত করা গিয়েছে ভাবলেও তা লাভ হয়নি। সেই বিধানসভা ভোটে ৭৭টি আসন থেকে গত তিন বছর বাংলায় দলের শ্রীবৃদ্ধি তো দূরে থাকা, ক্রমশ ক্ষয় হয়েছে বিজেপির। দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করে পুরস্কার দিলেও, তিনি বাংলায় দলের হাল ফেরাতে পারছেন না।
সম্প্রতি বাংলার এক সংবাদসমাধ্যমে প্রকাশ পায় দলের অন্দরের সমীক্ষা বলছে, ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনে জিতে ক্ষমতা আসা তো দূর থাক, বাংলায় বিজেপি ৫০টি আসনও পাবে না। যদিও বঙ্গ বিজেপি নেতারা এই খবর উড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু ২০২৪ সালে বাংলায় যতগুলো ভোট হয়েছে, তাকে সাধারণ সংখ্যায় ফেললে পরিষ্কার বঙ্গ রাজনীতি এই ধারায় বইলে ২০২৬ বিধানসভার ভোটে বিজেপির জন্য বড় বিপর্যয় অপেক্ষা করছে। আর সেটা বুঝতে পেরেই ২০২৫ সালে বঙ্গ রাজনীতিতে ঝড় তুলতে চাইছেন শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদার-রা। আরজি কর আন্দোলন বুঝিয়ে দিয়েছে সাধারণ মানুষকে বোঝানো গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নড়ানো যায়। আর তাই মমতার বিরুদ্ধে ওঠা নানা দুর্নীতির অভিযোগ, রাজ্যের বেকার সমস্যা, শিক্ষা-স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে নিয়মিত পথে নামতে চায় বঙ্গ বিজেপি। বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনায় কলকাতার রাস্তায় পথে নেমে শুভেন্দু বুঝিয়ে দিয়েছেন, মমতাকে আর খালি জমি দেবে না বিজেপি। কিন্তু সমস্যা হল, বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনায় আন্দোলনের সুফল বঙ্গ বিজেপি বাংলার ভোটে ঠিক কতটা পাবে।
২০২৪-র ভোটে একের পর এক ধাক্কার পরেও বাংলায় বিজেপির এখনও শক্তির জায়গা
১) দক্ষিণবঙ্গে বিপর্যয়ের মাঝেও পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি ও তমলুকে অধিকারী গড় অটটু থাকা।
২) পুরুলিয়ায় বছর তিনেক আগের দাপট কমলেও এখনও কিছুটা স্বস্তির জায়গা রয়েছে।
৩) মাদারিহাটে হারলেও উত্তরবঙ্গের অধিকাংশ জায়গাতে এখনও ভোটব্য়াঙ্ক অটুট আছে বলে দাবি।
৪) পাহাড়ের রাজনীতির চালিকাশক্তি এখনও বিজেপিই।
৫) দক্ষিণবঙ্গের বেশ কিছু জেলায় তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।
৬) আরজি কর আন্দোলনে মহিলাদের মধ্যে মমতা সরকারকে নিয়ে প্রশ্ন।
৭) বাম ভোটব্যাঙ্কে আরও ধস।
৮) মুর্শিদাবাদে অধীর চৌধুরীর হারের ফলে সেখানে প্রধান বিরোধী দল হওয়া।