দরজায় কড়া নাড়ছে পুজো। পাড়ায় পাড়ায় সেজে উঠছে মন্ডপ। কোথাও থিম পুজোর ভিড় তো কোথাও সনাতনী রূপেই মায়ের আরাধনা। তবে সনাতন জৌলুস না হারিয়েও স্বমহিমায় এখনও রয়ে গিয়েছে বাড়ির পুজোর ঐতিহ্য৷ ঢাকের বাদ্যি বেজে ওঠার আগে এমনই কিছু বাছাই করা প্রাচীন বনেদী বাড়ির (Bonedi Barir Pujo 2023) পুজোর সুলুকসন্ধান নিয়ে এসেছে লেটেস্টলি বাংলা (LatestLY Bangla)
বীরভূমের আমোদপুর এর "দে" বাড়ির পুজো
বীরভূমের আমোদপুর এর "দে" বাড়ির পুজো এ বছর ৩২১ বছরে পদার্পণ করল। ইংরেজি ১৭০২ সালে এই পুজো শুরু করেছিলেন জমিদার মহানন্দ দে। কথিত আছে যখন জমিদার মহানন্দ দে-কে স্বপ্নাদেশে দেখা দেন দেবী, তখন জমিদার দেবীকে প্রশ্ন করেছিলেন, আমি তোমায় পুজো করবো কিন্তু তুমি আসবে আমি জানবো কি করে? তখন দেবীর আদেশ অনুযায়ী সেই সময় থেকেই অষ্টমীর দিন মহা সন্ধিক্ষণে দেবীর পদচিহ্ন লক্ষ্য করা যায়।এই ঘটনা আজও একইভাবে চলে আসছে। এর জন্য অষ্টমীর দিন প্রায় ১৫ থেকে ১৬ কেজি সিঁদুর ছড়িয়ে রাখা হয় মন্দিরে। যেখানে দেবী মায়ের পদচিহ্ন দেখতে হাজার হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে। প্রত্যেকের বিশ্বাস আজও দেবী দুর্গা হয়ত একইভাবে আসেন।
বর্তমানে মহানন্দ দে এর অষ্টম বংশধরেরা এই পুজো করে আসছেন, পালা করে পড়ে পুজোর দায়িত্ব, এমনটাই জানা গিয়েছে। পরিবারের সদস্যরা জানান এখনও প্রাচীন রীতি মেনে বৈষ্ণব মতে তাঁদের পারিবারিক পুজো সম্পন্ন হয়।ষষ্ঠী ও সপ্তমীর দিন ফলভোগ নিবেদন করা হয় মাকে, এরপর অষ্টমীর দিনে রীতি মেনেই হয় মাসকলাই বলি এছাড়াও লুচি ভোগ নিবেদন করা হয় মাকে।আগে মহা অষ্টমীর সন্ধিক্ষণে কামান ও বন্দুক দেগে পূজা শুরু হতো পরে সরকারি বিধি নিষেধে তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর নবমী এবং দশমীতে ফলমূল ও দই চিঁড়ের ভোগ নিবেদন করা হয় দেবীকে। এখানে দশমীর দিন ঘট বিসর্জন করা হয় এর সঙ্গে চলে সিঁদুর খেলা। এই পুজোয় পুরনো রীতি মেনেই একাদশীর দিন প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়।
দেবী দুর্গার মন্দিরটি আগে ছিল মাটির দেওয়ালে উপরে খড়ের ছাউনি দেওয়া তারপর ধীরে ধীরে মন্দিরটি পাকা করেছেন শরিকরা। এককালে এই পরিবারের পুজোয় দূর-দূরান্ত থেকে দলে দলে আসছেন সাধু-সন্ন্যাসীরা, সে যুগের তাদের জন্য তৈরি হয়েছিল বিশাল অতিথিশালা। যা আজও রয়েছে দে বাড়িতে। পুজোকে ঘিরে শুধু পরিবারের সদস্যরা নয় মেতে ওঠেন আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারাও।