কলকাতা, ৭ জুন: ২০১৯ লোকসভা, ২০২১ বিধানসভা, ২০২৪ লোকসভা। রাজ্যে টানা তিনটি বড় নির্বাচনে কোনও আসন জিততে পারল না বাম দলগুলি। শূন্যের হ্যাটট্রিক করল সিপিআই (এম)। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ে লড়ে এবারও আসন জেতা হল না সিপিএমের। বামেদের বাকি দলগুলি-সিপিআই, ফরওয়ার্ড ব্লক, আরএসপি-কেও হতাশ হতে হল। এবার মুর্শিদাবাদ, যাদবপুর, শ্রীরামপুর নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখেছিলেন সিপিএম সমর্থকরা, কিন্তু সেসব জায়গাগুলোতেও খারাপ ফল হল কাস্তে হাতুড়ি চিহ্নের। তবে এত খারাপের মাঝেও একটা খবরে মুচকি হাসি বাম সমর্থকদের। ২০২১ বিধানসভায় পুরোপুরি খালি হাতে থাকা বামেরা সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে একটি বিধানসভায় লিড নিল।
২০২৪ লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের পর বাংলার ২০৯৪টি আসনের বিধানসভা ভিত্তিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, তৃণমূল এগিয়ে ১৯২টি-তে, বিজেপি ৯০, কংগ্রেস ১১টি ও বামেরা ১টি-তে। মুর্শিদাবাদ লোকসভার রানিনগর বিধানসভায় ৭২১ ভোটের লিড পান সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিম। এই লোকসভায় তৃণমূলের আবু তাহের খান স্বস্তিদায়ক ব্যবধানে জিতলেও, জেলার দাপুটে তৃণমূল বিধায়ক আব্দুল সৌমিক হোসেনের কেন্দ্রে সেলিমের বিরুদ্ধে পিছিয়ে পড়লেন। আরও পড়ুন-গতবার দিল্লির সেলেব্রিটি সাংসদ এবার হলেন পঞ্চম! কে সেই বিজেপি তারকা নেতা
অথচ ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে রানিনগরে তৃণমূলের সৌমিক হোসেন ৬০ শতাংশের বেশী ভোট পেয়ে ৮০ হাজারের কাছাকাছি মার্জিনে জিতেছিলেন। অনেকেই ভেবেছিলেন, আবু তাহেরকে তিনটি বিধানসভায় সমস্য়ায় ফেললেও রানিনগরের জন্যই শেষ পর্যন্ত হারবেন সেলিম। কিন্তু বাস্তবে হল ঠিক উল্টো। ১ লক্ষ ৬৪ হাজারের বেশী ব্যবধানে সেলিম-কে হারালেন আবু তাহের। সেলিম বাকি জায়গাগুলোতে পরাস্ত হলেও লিড নিলেন রানিনগরে। শেষ পর্যন্ত মুর্শিদাবাদ লোকসভায় আবু তাহের খান পান ৬ লক্ষ ৮২ হাজার ভোট, মহম্মদ সেলিমের প্রাপ্ত ভোট ৫ লক্ষ ১৮ হাজার, আর তৃতীয় স্থানে থাকা বিজেপি প্রার্থী পান ২ লক্ষ ৯২ হাজার ভোট।
২০২২ সালে সব জায়গায় হারলেও সবাইকে অবাক করে নদিয়ার তাহেরপুর পুরসভা দখলে নিয়েছিল সিপিএম। তাহেরপুরে পর এবার লোকসভায় শেষ 'লালগড়' রানিনগর বিধানসভা। বাম রাজনীতির শেষ চিহ্ন এখন তাহেরপুরের পর রানিনগর।
সামগ্রিকভাব দেখলে বাংলায় ভরাডুবি হলেও এবার লোকসভার ফল দেখে ২০২৬ বিধানসভা নিয়ে আশার আলো দেখছেন বাম নেতারা। এবার বাম ভোটের অনেকটাই বিজেপিতে গিয়েছে। কিন্তু দেশজুড়ে মোদীর হতাশজনক ফলে আদপে বাম রাজনীতির অক্সিজেন দেখছেন তারা। বাংলায় যেসব বাম ভোটাররা বিজেপিতে গিয়েছেন দিদি বিরোধিতার ফল লাভের জন্য, সেই ভোট ব্যাঙ্ক আবার লালের দিকে ফিরবে বলে আশায় বাম নেতারা। কারণ এবার আর দিল্লি বিজেপি নেতারা বঙ্গে বেশী অর্থ ব্যয় করতে পারবে না। তাই ২০২৬ বিধানসভায় লড়াইটা সরাসরি তৃণমূল বনাম বাম+কংগ্রেস হবে বলেই মনে করছেন লাল শিবিরের নেতারা। তবে তার জন্য আগামী দু বছর মমতা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন তীব্র করা, বিজেপির বিরোধিতা করা, মানুষের পাশে থাকা, গ্রামে গ্রামে পৌঁছে যাওয়ায় জোর দিচ্ছে বাম দলগুলি।