Narendra Modi Met Suvendu Adhikari and Sukanta Majumdar (Photo Credits: ANI)

কলকাতা, ১৬ জুন: তৃণমূল, বামেরা ইতিমধ্যেই রাজ্যের চার কেন্দ্রে আসন্ন বিধানসভা উপনির্বাচনের প্রার্থীতালিকা প্রকাশ করে ফেলেছে। সবাই এখন অপেক্ষা করে আছে বিজেপি-র প্রার্থী তালিকার দিকে। রাজ্যে যে চার আসনে বিধানসভা উপনির্বাচন হবে তার মধ্যে তিনটিই বিজেপি-র দখলে, আর একটিতে জিতেছিল তৃণমূল। বাংলায় লোকসভা নির্বাচনের অধিকাংশ জায়গায় ভরাডুবির পর কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পদ্ম-শিবিরের সামনে। আগামী ১০ জুলাই হতে চলা বাংলার উপনির্বাচনে চার বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী তালিকা প্রকাশে বিজেপির মূল চ্যালেঞ্জ বাগদা ও রায়গঞ্জ। মতুয়া গড়ে শান্তনু ঠাকুরের জয়ের পর বাগদা বিধানসভা উপনির্বাচনে বিজেপি-র প্রার্থী হওয়ার চাহিদা তৈরি হয়েছে। কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের মেয়ে মধুপর্ণা ঠাকুরের বিরুদ্ধে বাগদায় বিজেপি প্রার্থী করতে পারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী-সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের স্ত্রী সোনা ঠাকুর-কে। সেক্ষেত্রে কাকিমা বনাম ভাইজি লড়াই হতে পারে। তবে বাগদায় পদ্ম প্রার্থী হিসেবে নাম শোনা যাচ্ছে বিনয় বিশ্বাস, অমৃতলাল বিশ্বাসেরও।

যদিও বাগদা থেকে নিকট অতীতে তৃণমূল ও কংগ্রেসের টিকিটে জেতা দুলাল বরের নামও এবার বিজেপি প্রার্থী হিসেবে বাগদা জুড়ে ভাসছে। ২০২১ বিধানসভায় দুলাল বর-কে টিকিট না দিয়ে বিশ্বজিত দাস-কে দিয়েছিল বিজেপি। পদ্ম প্রতীকে জিতেওছিলেন বিশ্বজিত। বিশ্বজিত অবশ্য জয়ের পর তৃণমূলে যোগ দেন। পরে লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে লড়ে বনগাঁ কেন্দ্রে ৭৭ হাজার ভোটে হারেন বিজেপির শান্তনু ঠাকুরের বিরুদ্ধে। এবার তাই বাগদায় প্রার্থী দেওয়া নিয়ে বিশেষ সতর্ক বিজেপি।

বনগাঁর মত রায়গঞ্জেও ২০২১ বিধানসভা ভোটে জয়ের পর বিজেপি-র বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী তৃণমূলে যোগ দেন। বাগদার মতই রায়গঞ্জেও দলছুট কৃষ্ণ কল্য়াণীকে প্রার্থী করে হারতে হয় রাজ্যের শাসক দলকে। এবার রায়গঞ্জে তৃণমূলের প্রার্থী সেই কৃষ্ণ কল্যাণী-ই। তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপি দাঁড় করাতে পারে শিক্ষক শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়-কে। নাম ভাসছে মানস ঘোষ, বাবুলাল বালা-র মত স্থানীয় বিজেপি নেতাদেরও। রানাঘাট দক্ষিণে বিধানসভা উপনির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে মনোজ বিশ্বাস। টিকিট পাওয়ার লড়াইয়ে আছেন মনোজ বিন। এই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী করেছে মুকুটমণি অধিকারী-কে। গত বিধানসভায় মুকুটমণি বিজেপি প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে জিতেছিলেন। পরে তিনি তৃণমূলের টিকিটে রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে লড়ে বড় ব্যবধানে হারেন বিজেপির জগন্নাথ সরকারের কাছে। রাজ্যের প্রয়াত মন্ত্রী সাধান পান্ডে-র স্ত্রী সুপ্তি পান্ডের বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে দেশের ফুটবল প্রধান তথা প্রাক্তন ফুটবলার কল্য়াণ চৌবের নাম শোনা যাচ্ছে। ২০২১ বিধানসভায় মানিকতলা থেকে লড়ে হেরেছিলেন কল্যাণ চৌবে। এবার মানিকতলায় কল্যাণের পাশাপাশি নাম উঠে আসছে অমিতাভ রায় ও স্যাম জয়সওয়ালেরও।

যে চারটি বিধানসভায় অকাল ভোট হচ্ছে, তার মধ্যে তিনটে জায়গাতেই সদ্য শেষ হওয়া লোকসভায় জিতেছিল বিজেপি। ফলে ১০ জুলাই হতে চলা উপনির্বাচনে জিততে না পারলে বাংলায় বিজেপির অবস্থা আরও খারাপ হবে। এমন অবস্থায় প্রার্থী বাছাইয়ে দক্ষতা দেখাতে চাইছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সমস্যা হল বাংলায় বিজেপির নিচুতলার কর্মীদের মনোবল ভেঙে পড়া। ২০২১ বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর অনেকে বিজেপি কর্মীই ভেবেছিলেন, লোকসভা ভোট এলে নরেন্দ্র মোদী ঝড়ে আবার বঙ্গে গেরুয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্তু বড় সমস্যা হয়ে গেল বঙ্গ বিজেপি-র সবচেয়ে বড় আশা মোদী ঝড় আর দেশে বইছে না।

লোকসভাতেই যেখানে মোদী ঝড় কাজ করল না তখন আগামী দিনে বঙ্গে কী হতে চলেছে সেটা আশঙ্কায় রাখছে পদ্ম শিবিরকে। তবে বঙ্গ বিজেপির কাছে আশার কথা হল, বাংলায় লোকসভায় বিপর্যয়ের মাঝেও ৯০টি বিধানসভা আসনে এগিয়ে থাকা। বিজেপির রিপোর্ট বলছে, তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে বাংলার মানুষের ক্ষোভের প্রতিফলন ইভিএমে সব জায়গায় পড়েনি ঠিক, কিন্তু মমতা বিরোধী হাওয়া রাজ্যে আছে। সেটা সম্বল করেই লোকসভায় বিপর্যয়ের পরেও ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে গেরুয়া শিবির।