Yuvraj Singh retirement। সালটা ২০০০। গড়াপেটা কাণ্ডে ভারতীয় ক্রিকেটে কলঙ্কের দাগ লেগেছে। ফিক্সিংয়ের কালো দাগ মুছে সৌরভ গাঙ্গুলি (Sourav Ganguly) তখন ভারতীয় ক্রিকেটকে আগে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পেয়েছেন। সেই সময়ই ভারতীয় ক্রিকেটে যুবরাজ সিং (Yuvraj Singh)-য়ের উদয়। ২০০০ সালে কেনিয়ায় আয়োজিত মিনি বিশ্বকাপে যুবরাজকে প্রথমবার জার্সি পরার সুযোগ দিলেন অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি। যুবির সঙ্গে সম্পর্কের সেই শুরু সৌরভের।
অভিষেক ম্যাচে যুবির হাতে বল তুলে দিয়ে সৌরভ বলেছিলেন, উইকেট নিয়ে দেখা। ৪ ওভার বল করেছিলেন ১৬ রান দিয়ে কোনও উইকেট পাননি। কেনিয়ার ২০৮ রান তাড়া করতে নেমে ভারত যুবির অভিষেক ম্যাচে মাত্র ২ উইকেটেই জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রান তুলে নেয়। আরও পড়ুন- দীর্ঘশ্বাসেই শেষ যুবির বর্ণময় কেরিয়ার
তাই যুবির ব্যাট করার সুযোগ মেলেনি। মজার কথা সেদিন জয়ের পর সৌরভ কিন্তু সবার আগে যুবরাজের কথাই বলেছিলেন। প্রথম ম্যাচে ব্যাট করার সুযোগ না পেলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর দ্বিতীয় ম্যাচে যুবরাজ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৮৪ রানের দারুণ একটা ঝকঝকে ইনিংস খেলেন। সুন্দর চেহারার বছর আঠারোর যুবিকে নিয়ে সেদিন থেকে স্বপ্ন দেখেছিল দেশের ক্রিকেটমহল। যুবির ব্য়াটিংয়ে একটা জাদু প্রথম থেকেই চোখে পড়ত। ছেলেটা জিততে খেলে, কথাটা অনেকেই বলতেন। কিন্তু নাইরোবিতে অস্ট্রেলিয়ার সেই ঝাঁ চকচকে ইনিংসের পর যুবির ব্য়াটে লাগে রানের খরা।
পরপর সাতটা ম্যাচে এক সংখ্যার ঘরেই আউট হয়ে খারাপ শট নিয়ে আউট হয়েচিলেন যুবি। তখন সবাই বলেছিলেন, এবার বাদ দাও যুবিকে। সেই সময় আবার বলিউড তারকা সুলভ চেহারার যুবির ব্যক্তিগত রঙীন জীবন নিয়ে পেজ থ্রি-তে নানা রকম খবর বেরোচ্ছে। সবাই বললেন, ফোকাস সরে গিয়েছে যুবির। সবার কথা শোনেনি সৌরভ। যুবরাজ যে ভারতীয় ক্রিকেটে কত বড় সম্পদ হতে চলেছেন সেটা সবার আগে বুঝেছিলেন। সব সময় তাই আগলে রাখতেন যুবিকে। সমালোচনার পরেও সৌরভ একটার পর একটা সুযোগ দিয়েছিলেন যুবরাজকে। ফল ইতিউতি আসছিল, বেশিরভাগ সময়ই আসছিল না। কিন্তু প্রতিভার হিরে চেনার ক্ষমতাটা দাদার হয়তো জন্মগত। ২০০৩ ন্য়াটওয়েস্টের ফাইনালে যখন সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল একটা হিরোসুলভ অবিশ্বাস্য কিছুর, সেদিনই যুবি হয়ে উঠলেন সুপারম্যান।
লর্ডসে ন্য়াটওয়েস্ট ট্রফির ফাইনালে অত্যন্ত বিপদের মাঝে যুবরাজের ৬৩ বলে ৬৯ রানের ইনিংসটা কে ভুলতে পারে! সৌরভ সেদিন ফাইনালের পর ছুটে এসে যুবরাজকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। এরপরও যে যুবি দারুণ ধারাবাহিক ছিলেন তা নয়, কিন্তু দাদাকে সব সময় পাশে পেয়েছেন। টেস্টেও যুবরাজ সুযোগ পান সৌরভের সাহায্য পেয়েই। সৌরভের অবসরের দিন যুবরাজের নাকি খুব মনখারাপ ছিল। যুবরাজ বারবার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে বলেছেন, সৌরভই তাঁর ক্রিকেট জীবনকে বদলে দিয়েছিলেন। নিজের অবসর ঘোষণার দিনেও দাদাকে কৃতজ্ঞতা জানালেন। মহারাজের সৌজন্যে ভারতীয় ক্রিকেটের যুবরাজের আসনটা পাকাপাকিভাবে থেকে গেল মানুষের হৃদয়ে।