মুম্বই, ১০ জুন: Yuvraj Singh retirement। ৩৭ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করলেন যুবরাজ সিং। টেস্ট, ওয়ানডে, টি টোয়েন্টি- আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সব ফরম্যাট থেকেই অবসর ঘোষণা করলেন যুবি। মুম্বইয়ের এক পাঁচতারা হোটেলে সাংবাদিক সম্মেলনে যুবরাজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে গুড বাই জানানোর কথা ঘোষণা করলেন। সকাল থেকেই যে জল্পনাটা চলছিল, যুবির সাংবাদিক সম্মেলন ডাকার পর। ক দিন আগেই বোর্ডের কাছে চিঠি লিখে বিদেশী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলার অনুমতি চেয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন যুবরাজ। তাই অনেকে ধরেই নিয়েছিলেন, আজই হয়তো যুবরাজ অবসরের কথা জানাবেন। সেটাই হল।
২০০০ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথ চলা শুরু হয়েছিল যুবির। আজ, ২০১৯-এ এসে ইতি টানলেন সেই বর্ণময় কেরিয়ারে। অনুর্ধ্ব ১৯ থেকে টি টোয়েন্টি-ওয়ানডে। সব আইসিসি বিশ্বকাপে জেতার অনন্য রেকর্ডটা যুবির কাছেই আছে। শুধু বিশ্বকাপ জেতা নয়, সেই সব বিশ্বকাপে যুবি চমকপ্রদ পারফরম্য়ান্স করেন। ২০১১ বিশ্বকাপে হন টুর্নামেন্টের সেরা ক্রিকেটার। ২০০৭ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের স্টুয়ার্ট ব্রডের এক ওভারে ৬টা ছয় মেরে নজির গড়েন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিনটি ফরম্যাট মিলিয়ে যুবির ১১ হাজার রান আছে।
যুবি চেয়েছিলেন ২০১৯ বিশ্বকাপটা খেলেই বাইশ গজকে বিদায় নেবেন। সেই দিকেই এগোচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু দু বছর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের পর সেই যে বাদ পড়েন, খারাপ ফর্ম থেকে আর ফিরতে না পেরে যবনিকা পাত পড়ল ভারতীয় ক্রিকেটের যুবরাজের। ক দিন আগে শেষ হওয়া আইপিএলেও ভাল খেলতে না পারায় মুম্বই ইন্ডিয়ন্স দল থেকে বাদ পড়েছিলেন যুবরাজ। ৪০টি টেস্ট, ৩০৪টি ওয়ানডে, ৫৮টি আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টি এবং অসংখ্যক অবিস্মরণীয় মুহূর্ত উপহার দিয়ে যুবরাজ বিদায় নিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। আরও পড়ুন- প্রোটিয়াদের পর বধ অজিরা, চ্যাম্পিয়নের মতই খেলছে টিম ইন্ডিয়া-এবার সামনে কিউইরা
২০০০ সালে কেনিয়ার নাইরোবিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল যুবরাজের। ২০১১ বিশ্বকাপের সেরা ক্রিকেটার যুবরাজের ভারতীয় ক্রিকেটে অবদান লিখে শেষ করার নয়। যুবি আসলে ভারতীয় ক্রিকেটে রোমান্টিকতার অপর নাম। ক্য়ান্সারকে হারিয়ে বাইশ গজের বর্ণময় প্রত্যাবর্তন থেকে ২০১১ ক্রিকেট বিশ্বকাপ। ২০০২ ন্যাটওয়েস্ট ট্রফির ফাইনাল থেকে টি টোয়েন্ট বিশ্বকাপে ৬ বলে ৬ ছক্কা। যুবরাজ সিং মানেই কতগুলো বর্ণময় চিরস্মরণীয় ছবির কোলাজ।
সৌরভ গাঙ্গুলির হাত ধরে তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে উত্থান। সবাই যখন শৃঙ্খলাহীন যুবির সমালোচনা করে তাঁকে সুযোগ না দেওয়ার পক্ষপাতি ছিলেন, তখন তাঁর সবচেয়ে পছন্দের অধিনায়ক যুবরাজের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। প্রতিভা চিনতে ভুল হয়নি দাদার। দাদার আস্থা রেখেছিলেন যুবরাজ। দেশকে ২০১১ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন-ব্য়াট,বল,ফিল্ডিংয়ে অবদান রেখে। পরিসংখ্যান বলছে, ৩০৪টি ওয়ানডে খেলে যুবরাজ ৮৭০১ রান করেছেবন, সেঞ্চুরি ১৪টি-হাফ সেঞ্চুরি ৫২টি। কখনও টেস্টে নিজের জায়গা পাকা না করতে পারলেও নয় নয় করে ৪০টি পাঁচদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ১৯০০ রান করেছেন, সেঞ্চুরি ৩টি।
ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপও জিতেছেন। কিন্তু এরপরেও যুবির মহিমা বলা এসব পরিসংখ্যান সাফল্যে বলা সম্ভব নয়। ২০০১ ন্যাটওয়েস্ট ট্রফির ফাইনালে মহম্মদ কাইফের সঙ্গে অবিস্মরণীয় পার্টনারশিপ, ২০১১ বিশ্বকাপের ফাইনালে ধোনির সঙ্গে ম্যাচ শেষ করা আসা। কিংবা টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে স্টুয়ার্ট ব্রডকে ওভারে ছয় ছক্কা হাঁকানো। ভারতীয় ক্রিকেটের সেরা সব মুহূর্তের ছবি তৈরি করতে হলে যুবরাজ কোথাও না কোথাও থাকবেনই। খেলা ছাড়তে পারেন যুবরাজ, কিন্তু ক্রিকেটপ্রেমীদের মন থেকে কোনওদিন মুছে যাবেন না। মানুষ অনেক সময় ছবি হয়ে থেকে যায়, আবার কোনও কোনও মানুষ ছবির ভিতরের হৃদয় হয়ে থাকেন। যুবরাজ দ্বিতীয় ধরনের। যুবরাজ মানেই ভারতীয় ক্রিকেটের অসংখ্যা স্মরণীয় ছবির মাঝে কমন মুখ। মানুষ পুরনো হয়ে যায়, স্মৃতির ছবি কখনও নয়।