সামনেই তো বড়দিন আসছে। সারাদিন কীভাবে ঘুরবেন, কি কি করবেন সেই সব নিশ্চয়ই প্ল্যান করে ফেলেছেন। আর যদি না করে থাকেন তাহলে আমরা তো রইলামই আপনার সারাদিনের প্ল্যান করে দেওয়ার জন্য। সকালে কোথায় যাবেন, বিকেলে কি করবেন, রাতেই বা কোথায় ঘুরবেন, সব বলে দেব আমরা। বন্ধুরা মিলে হোক বা নিজের সবচেয়ে প্রিয় মানুষের সাথেই হোক, এমন প্ল্যান, খোদ কলকাতায় বসে আর কেউ করে দিতে পারবেন না।যাত্রা শুরু করুন চিড়িয়াখানা থেকে।
১)চিড়িয়াখানা (Alipore Zoo)
কলকাতার একটি জনপ্রিয় ভ্রমন কেন্দ্র আলিপুর চিড়িয়াখানা,সকাল ৯টা নাগাদ খুলে যায় চিড়িয়াখানা। তবে যাওয়ার আগে অবশ্যই আলিপুর চিড়িয়াখানার অফিশিয়াল ওয়েবসাইট দেখে নেবেন। সেখানে টাইম আর কত টাকা দিয়ে ঢুকতে হয় সব লেখা আছে। চিড়িয়াখানায় সবচেয়ে বেশি লোক সমাগম দেখা যায় শীতের মরশুমে, ৪৫ একর আয়তনের এই পশুশালা টি ১৮৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। চিড়িয়াখানার উল্টো দিকে একটি অ্যকোয়ারিয়াম রয়েছে, সারা বিশ্বের বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ এবং জীবের সমাহার রয়েছে সেই অ্যাকোয়ারিয়ামে।
২)ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল (Victoria Memorial)
চিড়িয়াখানা থেকে বেরিয়ে প্রায় দু’পা হেঁটেই ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল।শ্বেত পাথরের তৈরি ইংল্যান্ডের মহারানী ভিক্টোরিয়ার নামাঙ্কিত স্মৃতিসৌধটি কলকাতার অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ। ভিক্টোরিয়া স্মৃতিসৌধের নির্মাণকার্য শুরু হয় ১৯০৬ সালে এবং সৌধটির উদ্বোধন হয় ১৯২১ সালে।এর ভিতরে রয়েছে ২৫ টি গ্যালারি, চারিপাশে রয়েছে বিশাল বাগান। তবে যাওয়ার আগে অবশ্যই অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে দেখে নেবেন বড়দিনের দিন ওই মিউজিয়ামে আপনাদের ঢুকতে দেওয়া হবে কিনা!
৩)সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল চার্চ (St. Paul's Cathedral Church)
১৮৪৭ সালে তৈরি হওয়া এই চার্চটি কলকাতার একটি বিখ্যাত চার্চ. বড়দিনের দিন চার্চে যাবেন না, তা কি হয়! আর কলকাতায় চার্চ বলতেই আগে মনে পড়ে সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল চার্চ। সুন্দর করে সাজানো এই চার্চ বড়দিনের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। ভিক্টোরিয়ার ঠিক পিছনেই বলা যায় এই চার্চ।
৪)সেন্ট জনস চার্চ (St. Johns Church)
কলকাতায় পুরনো চার্চগুলির মধ্যে অন্যতম। ইতিহাস ঘেঁটে দেখতে গেলে হয়তো সবচেয়ে পুরনো। বিবাদি বাগে এই চার্চ। এই চার্চ শুধুমাত্র যে একটি চার্চ তা কিন্তু নয়। এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক। এই চার্চের মধ্যেই আছে জোব চার্নকের সমাধি। এই চার্চের মধ্যেই আছে সেই সময়ের অন্যতম বিখ্যাত মানুষ বেগম জনসনের সমাধি। এর মধ্যেই আছে লেডি ক্যানিং-এর সমাধি। আর চার্চের একদম ভিতরেই আছে লাস্ট সাপারের একটি ছবি।
৫)প্রিন্সেপ ঘাট (Princep Ghat)
জেমস প্রিন্সেপ এর স্মৃতিতে নির্মিত প্রিন্সেপ ঘাট কলকাতা সবচেয়ে পুরনো দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। এখান থেকে অনেকে নদীতে প্রমোদ ভ্রমণে যায়,২০১২ সালে প্রিন্সেপ ঘাট থেকে কদমতলা ঘাট পর্যন্ত নদীতীরের উদ্বোধন করা হয়েছে, এই অংশটি আলোকমালা, বাগান, ফোয়ারা দিয়ে সাজানো হয়েছে। ঐতিহ্যময় ঘাট টি উনিশ শতকের নস্টালজিয়া কে ধরে রেখেছে।
৬)আর বি আই মিউজিয়াম (RBI Museum)
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার মিউজিয়াম এটি। আমাদের আজ অবধি কীভাবে অর্থনৈতিক নানা পরিবর্তন এসেছে, মুদ্রার কি পরিবর্তন হয়েছে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া কি গুরুত্ব পালন করেছে, সব নিয়ে এই মিউজিয়াম। খুব একটা কেউ কিন্তু আজও এখানে যান না। তবে গেলে কিন্তু আপনি অবাক হয়ে যাবেন। ইতিহাস আপনার সামনে জীবন্ত হয়ে উঠবে। কোনও এন্ট্রি ফি কিন্তু এখানেও নেই। আর বিবাদি বাগের কাছেই এটি। সুতরাং একবার ঘুরে আসতেই হবে।
৭)ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম (Indian Museum)
প্রায় আট হাজার বর্গমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই জাদুঘর, সাতটি গ্যালারিতে মোট ৬ টি ভাগে শিল্পকলা, প্রত্নতত্ত্ব, নৃতত্ব, ভূতত্ত্ব, প্রাণিবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের অসংখ্য সংগ্রহ গ্যালারিতে সুসজ্জিত রয়েছে।
৮)নিক্কো পার্ক (Nicco Park)
সল্টলেকে অবস্থিত মোট ৪০ একর এলাকায় বিস্তৃত চিত্তবিনোদনমূলক পার্ক হিসেবে নিক্কোপার্ক রাজ্যের পর্যটকদের আকৃষ্ট হওয়ার অন্যতম স্থান। বিভিন্ন আনন্দদায়ক রাইডস্ এ-র পাশাপাশি এখানে নৌকা চালানোর জন্য লেক রয়েছে।
৯)ইকো পার্ক (Eco Park)
কলকাতার রাজারহাটে অবস্থিত ৪৮০ একর আয়তনের উদ্যানটি ভারতের বৃহত্তম উদ্যান, এই পার্কের মধ্যে বিশাল জলাশয় আছে, মাঝখানে একটি দ্বীপ আছে, যেখানে খাবার রেস্তোরা ও থাকার হোটেল আছে। ইকো পার্কে মোট ছটি গেট আছে। চার নম্বর গেটের কাছে বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের প্রতিরূপ রয়েছে।
১০) মাদার্স ওয়াক্স মিউজিয়াম (Mother's Wax Museum)
নিউ টাউন এ অবস্থিত এই মোম শিল্পকর্মের জাদুঘরটি ভারতের প্রথম এমন জাদুঘর। প্রায় পঞ্চাশটি মোমের মূর্তি সমৃদ্ধ এই জাদুঘরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম, শাহরুখ খান, অমিতাভ বচ্চন, মহাত্মা গান্ধী, মাদার টেরিসা ছোটদের সুপারম্যান, মটু পাতলু সকলের মোমের মূর্তি বর্তমান।
শুধু ঘুরলেই তো হবে না এবার তো খেতে হবে। আর বড়দিনে খাওয়া মানে পার্ক স্ট্রিট। মোকাম্বো, মার্কোপোলো, টুংফং, পিটার ক্যাট, বারবি কিউ ন্যাশন কত নাম বলব! চয়েস করুন আর ঢুকে যান। ভাল করে খেয়ে আপনি যখন বাইরে আসবেন তখন প্রায় বিকেল হয়ে গেছে। আর বিকেল মানেই পার্ক স্ট্রিটে অনেক অনেক আলো। সেই আলোয় ভাসতে ভাসতে চলে যান অ্যালেন পার্ক। গান শুনুন, নাচুন, আনন্দ করুন। এই সময়ে পার্ক স্ট্রিটের ফুটপাথ জুড়ে খুব ভাল ভাল খাবার নিয়ে বসা হয়। সেগুলিও চেখে দেখতে পারেন। রাত যত বাড়বে, পার্ক স্ট্রিটের আনন্দ তত বাড়বে। এবার কত রাত পর্যন্ত আপনি থাকবেন তা আপনার ওপর।