ভূত চতুর্দশী (Bhoot Chaturdashi)। নামের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে রোমাঞ্চ। কালী পুজোর (Kali Puja) আগের রাতটাই 'ভূত চতুর্দশী।'এ বছর ২৬ অক্টোবর 'ভূত চতুর্দশী।' কথিত আছে, এই তিথিতে সন্ধ্যে (Evening) নামার পর পরই অশরীরী প্রেতাত্মারা (Ghost) বের হন। আর তাদের হাত থেকে নিস্তার পেতেই এদিন সন্ধ্যার পর গৃহস্থের বাড়িতে ১৪টি প্রদীপ জ্বালানো (Lamp) হয়ে থাকে। আবার ভিন্ন মতে, চামুণ্ডারূপী চৌদ্দ ভূত দিয়ে অশুভ শক্তিকে ভক্তবাড়ি থেকে তাড়ানোর জন্যে মা কালী নেমে আসেন মর্ত্যে।
'ভূত চতুর্দশী' সম্পর্কে এই তথ্য (Information) তো আপনার জানা। কিন্তু জানেন এই ১৪ ভূতের তালিকায় বাংলার কোন কোন ভূতের নাম রয়েছে! চলুন ভূত চতুর্দশীর রাতেই আপনাদের জানাই ভূত চতুর্দশীর রাতের ১৪ ভূতের সম্পর্কে-
ব্রহ্মদৈত্য: ইনি ব্রাহ্মণ আত্মা। সাদা ধুতি পরা অবস্থায় দেখা যায়। এরা সাধারণত পবিত্র ভূত হিসেবে পরিচিত। কোনো ব্রাহ্মণ অপঘাতে মারা গেলে তিনি 'ব্রহ্মদৈত্য' (Bramhadaitya) হয়ে যান। এছাড়া পৈতাবিহীন অবস্থায় কোনো ব্রাহ্মণ মারা গেলেও তিনি ব্রহ্মদৈত্য হতে পারেন। এরা কারো প্রতি খুশি হয়ে আশীর্বাদ করলে তা পূরণ হয়। কিন্তু কারো প্রতি অসন্তুষ্ট হলে তার সমূহ বিপদ। সাধারণত বেল গাছে অবস্থান করে থাকেন এঁরা।
পেত্নী: সনাতনী ধর্ম মতে 'পেত্নী' (Petni) হলো নারী ভূত। পেত্নী শব্দটি সংস্কৃত ‘প্রেত্নী’থেকে এসেছে। মরণকালে অতৃপ্ত আশা নিয়ে অবিবাহিতভাবে মারা যায় এঁরা। সাধারণত যে কোন আকৃতি ধারণ করতে পারে। এমনকি পুরুষের (Male) রূপও ধারণ করতে পারে। এসব ভূত সাধারনত বেঁচে থাকতে কোনো অপরাধ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকে। মৃত্যুর পর অভিশপ্ত হয়ে পৃথিবীতে বিচরণ করে। পেত্নীরা সাধারনত ভীষণ বদমেজাজী হয়ে থাকে। কাউকে আক্রমণের আগে পর্যন্ত স্পষ্টতই মানুষের আকৃতিতে থাকে। কিন্তু এঁদের চেনা যায় পায়ের দিকে তাকালে। এঁদের পাগুলো পেছনের দিকে ঘোরানো থাকে।
শাকচুন্নি: অল্পবয়সী-বিবাহিত কোন মেয়ে অপঘাতে মারা গেলে তিনি 'শাকচুন্নি'তে (Shankhchunni) পরিণত হন। সাধারণত জলাভূমির ধারের গাছে বাস করেন এঁরা। ভালো দেখতে যুবক দেখলে তাকে আকৃষ্ট করে ফাঁদে ফেলে থাকেন এঁরা। সাদা কাপড়েই থাকেন এঁরা। কখনো কখনো সেই তরুণকে জলাভূমি থেকে এঁরা মাছ ধরে দিতে বলে। কিন্তু সাবধান, এই মাছ ধরে দেওয়া মানেই কিন্তু নিজের আত্মা তার হাতে সমর্পণ করা!
ডাইনী: 'ডাইনী' (Daini) মূলত কোনো আত্মা নয়, এরা জীবিত নারী। বাংলা লোকসাহিত্যে সাধারণত বৃদ্ধ নারী (Old Woman) যারা কালো জাদু বা 'ডাকিনী' বিদ্যাতে পারদর্শী তাদেরকেই 'ডাইনি' বলা হয়ে থাকে। ডাইনীরা গ্রামের ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের ধরে নিয়ে তাদের হত্যা করে রক্ত খেয়ে দীর্ঘজীবী হওয়ার অপচেষ্টা করে থাকে।
স্কন্ধকাটা: মাথাবিহীন ভূত (Mecho Bhoot)। অত্যন্ত ভয়ংকর এই ভূত মানুষের উপস্থিতি টের পেলে তাকে মেরে ফেলে। কোনো দুর্ঘটনায়, যেমন রেলে কারো মাথা কাটা গেলে, সে স্কন্ধকাটা হতে পারে।
মেছোভূত: মাছলোভী ভূত (Mecho Bhoot)। বাজার থেকে কেউ মাছ কিনে রাস্তা দিয়ে ফিরলে এঁরা তার পিছু নেয়। নির্জন বাঁশঝাড়ে বা বিলের ধারে ভয় দেখিয়ে আক্রমণ করে মাছ ছিনিয়ে নেয়।
পেঁচাপেঁচি: জোড়া ভূত। দেখতে পেঁচার মত (Pecha-Pechi)। একটি ছেলে, অন্যটি মেয়ে। গভীর জঙ্গলে মানুষ প্রবেশ করলে এরা পিছু নেয়। সুযোগ বুঝে তাকে মেরে ফেলে।
মামদো ভূত: হিন্দু বিশ্বাস মতে, এটি মুসলমান আত্মা (Mamdo Bhoot)।
নিশি: খুব ভয়ংকর ভূত। অন্যান্য ভূত সাধারণত নির্জন এলাকায় মানুষকে একা পেলে আক্রমণ করে। কিন্তু নিশি গভীর রাতে মানুষের নাম ধরে ডাকে। 'নিশি'র (Nishi) ডাকে সারা দিয়ে মানুষ সম্মোহিত হয়ে ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে পড়ে। আর কখনো ফিরে না। কিছু কিছু তান্ত্রিক অন্যের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য নিশি পুষে থাকে।
কাঁদরা-মা: অনেকটা নিশির মত। এই ভূত গ্রামের পাশে জঙ্গলে বসে করুণ সুরে বিলাপ করতে থাকে। কান্নার সুর (kandra Maa) শুনে কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে গেলে তাকে গাল-গল্পে ফাঁসিয়ে জঙ্গলের গভীরে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলে। সাধারণত ছোট বাচ্চারা এর কান্নায় বেশি আকৃষ্ট হয়।
চোরাচুন্নি: দুষ্ট ভূত। কোনো চোর মারা গেলে 'চোরাচুন্নি' (Chorachunni) হতে পারে। পূর্ণিমার রাতে এরা বের হয়। মানুষের বাড়িতে ঢুকে অনিষ্ট সাধন করে।
কানাখোলা: গভীর নির্জন চরাচরে মানুষকে পেলে তার গন্তব্য ভুলিয়ে দিয়ে ঘোরের মধ্যে ফেলে দেয় এই ভূত (kankhola)। ওই ব্যক্তি পথ হারিয়ে বার বার একই জায়গায় ফিরে আসে। এক সময় ক্লান্ত হয়ে মারা যায়।
আলেয়া: জলাভূমির ভুত (Alea)। এরা জেলেদেরকে বিভ্রান্ত করে। জাল চুরি করে তাদের ডুবিয়ে মারে।
দেও: এধরনের ভূত (Deo)নদীতে বা লেকে বসবাস করে। এরা লোকজনকে জলে ফেলে ডুবিয়ে মারে।
মর্ত্যবাসীরা এনাদের দূরে রাখতে ১৪ শাক খেয়ে, ১৪ প্রদীপ জ্বালিয়ে এবং ১৪ ফোঁটা দিয়ে এই তিথিকে উদযাপন করে থাকেন। এই ১৪ শাক হল- ওল, বেতো, সরষে, নিম, গুলঞ্চ, শুষণী, হিলঞ্চ, জয়ন্তী, শাঞ্চে, কালকাসুন্দে, পলতা, ভাটপাতা, কেঁউ, এবং শৌলফ।