মৃগীরোগ একটি দীর্ঘস্থায়ী, অসংক্রামক মস্তিষ্ক-সম্পর্কিত রোগ যা রোগীকে যেকোনও সময় এবং যেকোনও জায়গায় সমস্যায় ফেলতে পারে। হঠাৎ আক্রমণ রোগীর জন্য অত্যন্ত মারাত্মক প্রমাণিত হতে পারে। এই রোগ সম্পর্কে সচেতন করার উদ্দেশ্য ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সোমবার আন্তর্জাতিক মৃগীরোগ দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এই দিনটি পালন করার মূল উদ্দেশ্য হল মৃগীরোগে আক্রান্ত রোগীদের অভিজ্ঞতা মানুষের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া এবং সাধারণ মানুষকে এ বিষয়ে আরও বেশি সচেতন করা। ২০২৫ সালে আন্তর্জাতিক মৃগীরোগ দিবস পালন করা হবে ১০ ফেব্রুয়ারি। পরিস্থিতি এবং এর প্রভাব সম্পর্কে জনগণকে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রচারণা এবং কর্মসূচির আয়োজন করা হবে এই দিনে। বর্তমানে বিশ্বের ১২০ টিরও বেশি দেশে পালন করা হয় আন্তর্জাতিক মৃগীরোগ দিবস।

মৃগীরোগ হল একটি স্নায়বিক অবস্থা যেখানে মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের কারণে গুরুতর খিঁচুনি হয়। এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির চেতনা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, শরীর শক্ত হয়ে যেতে পারে, আক্রান্ত ব্যক্তি কিছু সময়ের জন্য অসহায়, অক্ষম এবং অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। এই খিঁচুনি বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। ভ্রমণের সময় মৃগীরোগের আক্রমণ রোগীর জন্য মারাত্মক প্রমাণিত হতে পারে। জেনেটিক কিছু ক্ষেত্রে হতে পারে মৃগীরোগ অর্থাৎ পিতামাতার জিন থেকে আসতে পারে এটি। এছাড়া কিছু ওষুধ গ্রহণের ফলে সৃষ্ট পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও মৃগীরোগের কারণ হতে পারে। মস্তিষ্কের যেকোনও আঘাত যেমন দুর্ঘটনা, দেয়ালে ধাক্কা খাওয়া বা অন্য কোনও কারণে মাথায় আঘাত পাওয়া হতে পারে মৃগীরোগের কারণ।

কখনও কখনও মাদকদ্রব্য, অ্যালকোহল বা অন্যান্য নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবনের ফলেও মৃগীরোগ হতে পারে। মস্তিষ্কের সংক্রমণ যেমন - মেনিনজাইটিস, এনসেফালাইটিস বা মস্তিষ্কের ফোড়া অথবা মস্তিষ্কের বিকৃতি বা টিউমারও এর কারণ হতে পারে। কিছু লক্ষণের মাধ্যমে মৃগীরোগ চিহ্নিত করা সম্ভব। হঠাৎ করে শরীরে তীব্র ঝাঁকুনির সঙ্গে খিঁচুনি শুরু হওয়া, চোখ ঘুরতে শুরু করা, মুখে ফেনা বেরোনো, শরীরে শক্ত হয়ে যাওয়া সহ চেতনা হারানো এবং প্রস্রাবের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা। এই লক্ষণগুলি দুই থেকে তিন মিনিট স্থায়ী হয়। মৃগীরোগ এড়ানোর কিছু উপায় রয়েছে। খিঁচুনির কারণ হতে পারে এমন যেকোনও ট্রিগার এড়িয়ে চলা উচিত, কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুম জরুরি, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খিঁচুনি প্রতিরোধী ওষুধ গ্রহণ করতে হবে, ভিটামিন বি৬ এবং ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পূরণ করতে হবে।